আন্তর্জাতিক ১৩ নভেম্বর, ২০২২ ০৮:০৪

 বিখ্যাত নিষিদ্ধপল্লী “দে ওয়ালেন” পাচ্ছে নতুন রূপ 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামের বিখ্যাত নিষিদ্ধপল্লী ‘দে ওয়ালেন’ আসছে নতুন রুপে। দেশটিতে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় এক এলাকা নিষিদ্ধপল্লী ‘দে ওয়ালেন’। যৌনবৃত্তিকে পেশা হিসাবে বেছে নিয়ে বছরের পর বছর ধরে দে ওয়ালেনে বাস করছেন সেখানকার নারীরা। এই এলাকার সঙ্গে জড়িয়ে আছে উত্তর পশ্চিম ইউরোপের ইতিহাস আর ঐতিহ্য।

কিন্তু দে ওয়ালেনের আয়ু হয়তো ফুরিয়ে এসেছে। এই নিষিদ্ধপল্লী তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমস্টারডাম প্রশাসন। সেখানকার যৌনকর্মীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তে দে ওয়ালেনের নিষিদ্ধপল্লী তুলে দিয়ে সেখানে একটি বহুতল ভবন গড়ে তোলা হবে। যৌনবৃত্তি আবর্তিত হবে সেই বহুতল ভবনকে কেন্দ্র করেই। গত বছর এই সিদ্ধান্তে একমত হয়েছে দেশটির প্রশাসন।

নতুন বহুতল ভবনে যৌনকর্মীদের জন্য মোট ১০০টি ঝাঁ চকচকে ঘর নির্দিষ্ট থাকবে। পেশা অনুযায়ী সেই ঘরেই খদ্দেরকে সেবা দেবেন তারা। এছাড়াও ভবনে বিনোদনের নানা রসদ মজুত থাকবে। যারা নিষিদ্ধ এলাকার আমেজ উপভোগ করতে আসবেন, তাদের জন্য ওই বহুতল ভবনে থাকবে রেস্তোরাঁ, বার ও বিনোদন কেন্দ্র। এমনকি স্বাস্থ্য কেন্দ্রও গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে সেখানে।

বহুতল এই ভবনে যৌন উদ্দীপক কেন্দ্র (এরোটিক সেন্টার) গড়ে তোলার পরিকল্পনা আপাতত সবুজ সঙ্কেত পেয়েছে। তবে তা বাস্তবায়নে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে প্রশাসন। স্থানীয় বাসিন্দারা এমন বহুতল ভবনের ভাবনাকে সবুজ সঙ্কেত দিতে পারছেন না কিছুতেই। তাদের অনুমতি ছাড়া কাজ এগোচ্ছে না।

দে ওয়ালেনের আশপাশের বাসিন্দারা ওই ভবন নির্মাণের বিরোধিতা করছেন। আমস্টারডাম প্রশাসন এই বহুতল এরোটিক সেন্টার গড়ে তোলার জন্য প্রাথমিকভাবে ৮টি জায়গা বাছাই করেছিল। কিন্তু কোনো জায়গাতেই স্থানীয়দের রাজি করানো যায়নি।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেছেন, আমস্টারডামের যৌনপল্লীকে কেন্দ্র করে অপরাধপ্রবণতা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। যৌনতার সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকা অপরাধীদের আখড়া হয়ে উঠছে।

আর এই অপরাধপ্রবণতা ঠেকাতে দে ওয়ালেন তুলে দিয়ে নতুন বহুতল ভবন গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে প্রশাসন। আমস্টারডামের মেয়র ফেমকে হালসেমা বলেছেন, আমি আশা করছি, অপরাধীদের আখড়া তুলে দিয়ে ওই জায়গাটিতে একটি এরোটিক সেন্টার গড়ে তোলা যাবে। যার নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য থাকবে।

তবে এই কাজে আমাদের এখনও লম্বা রাস্তা পার করতে হবে। কারণ এখনও অনেকেই যৌনবৃত্তিকে অপরাধ হিসাবে দেখেন। তাই ওই অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষই রাজি হচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।

আমস্টারডামের এই বিখ্যাত নিষিদ্ধপল্লীতে অন্তত ৩০০টি কেবিন রয়েছে। ছোট ছোট ঘরগুলো ভাড়া নিয়ে রাখেন যৌনকর্মীরা। কাচের দেওয়ালের ভেতর থেকে ইশারায় খদ্দের ডাকেন তারা। অর্থের বিনিময়ে যৌনতায় লিপ্ত হওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে দে ওয়ালেনে।

পুরো এলাকা মৃদু লাল আলোতে আচ্ছন্ন করে রাখা হয়। আলো-আঁধারির মাঝে কাচের বদলে কোনও কোনও ক্ষেত্রে জানালা দিয়েও হাত বাড়িয়ে দেন দে ওয়ালেনের যৌনকর্মীরা।

দে ওয়ালেনে নানা ধরনের বিনোদন কেন্দ্রও রয়েছে। দোকানে দোকানে সাজিয়ে রাখা রয়েছে যৌন উদ্দীপক বস্তু। যৌনক্রিয়া সম্পর্কিত একটি আস্ত জাদুঘরও রয়েছে আমস্টারডামের সবচেয়ে প্রাচীন এই নিষিদ্ধপল্লীতে।

পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর দে ওয়ালেনে ২ লাখ সেক্স টুরিস্ট যান। চলতি বছরের বড়দিনের মধ্যে দে ওয়ালেনে বহুতল ভবন নির্মাণের স্থান নির্দিষ্ট করে ফেলতে চাইছেন মেয়র।

আমস্টারডাম শহরের মতোই তার যৌনবৃত্তির ইতিহাসও অনেক পুরোনো। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চদশ শতকে এখানে প্রথম যৌনতার মাধ্যমে উপার্জনের আশা নিয়ে আসেন নারীরা। প্রথম দিকে রাস্তার ওপরে চলত দেহব্যবসা। পরে প্রকাশ্যে যৌনতা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে ঘর ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করে আসছেন আমস্টারডামের যৌনকর্মীরা। তাদের সেই দেহব্যবসাকেই এবার নতুন রূপ দিতে চলেছে প্রশাসন।

 

 

আমাদেরকাগজ/এএইচ