নিজস্ব প্রতিবেদক।।
ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে অন্যান্য এজেন্ডার পাশাপাশি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করেন এবং তাঁদের অব্যাহতি দিয়ে সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে লেখক ভট্টাচার্যকে দায়িত্ব দেন।
এ বিষয়ে প্রখ্যাত কলামিস্ট ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক তার ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দেন। পাঠকদের সুবিধার জন্য হুবহু তুলে ধরা হল-
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন এই কঠিন সিদ্ধান্ত নেবার জন্য।মুজিব কন্যা আপনি আরও কঠিন হোন।শোভন -রাব্বানী অসুস্থ নষ্ট রাজনীতির শিকার। দিনে দিনে অসুস্থ রাজনীতির কলঙ্কের পথে এরা বেপরোয়া দাম্ভিক হয়ে ভুলে গিয়েছিলো সব বাড়াবাড়ির সীমা আছে,দম্ভেরও পতন আছে,পাপেরও শাস্তি আছে।আজ তারা প্রাপ্য শাস্তি সাংগঠনিকভাবে পেয়েছে। অতীতে অনেকেই যদিও পার পেয়ে গেছে।এবার ধরা খেয়েছে।
ইতিহাসের ঐতিহ্যের ছাত্রলীগের কোন সভাপতি সাধারন সম্পাদককে এভাবে নানা কেলেংকারি,অনিয়ম,চাঁদাবাজির অভিযোগে বরখাস্ত হতে হয়নি।স্বাধীনতার পর শফিউল আলম প্রধানকে মহসিন হলের বহুল আলোচিত সেভেন মার্ডারের অভিযোগে বহিস্কার ও কারাদন্ড ভোগ করতে হয়েছিলো।
শোভন-রাব্বানীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা এখন কি হবে এটা দেখার বিষয়।রাব্বানীর ডাকসু জিএস পদে থাকারও আর নৈতিক অধিকার নেই। অব্যাহতি দিতে হবে ডাকসুকে।
এদেরকে দল ও প্রশাসনের কারা প্রশ্রয় দিয়েছেন,কারা মদদ দিতেন,সুবিধা নিতেন তাদের মুখোশও গনমাধ্যম ও দলের হাইকমান্ডের উন্মোচন করে ব্যবস্থা নেয়া জরুরী।
এদেশের ছাত্ররাজনীতির ইতিহাস মহান গৌরব ও ঐতিহ্যের। অনেক গনমুখী রাজনীতিবিদ সমাজের নানা পেশার মেধাবিরা ছাত্ররাজনীতি থেকে উঠে এসেছেন। ছাত্রলীগের ইতিহাস আরো বেশি বর্নাঢ্য বর্নময় ঐতিহ্যের। ভাষা আন্দোলন থেকে জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব আদর্শ ও লক্ষে কঠিন সংগ্রামের পথে স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার পথে মহান মুক্তিযুদ্ধে অনবদ্য অবদান তার সোনালী অতীত।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পরেও কঠিন অন্ধকার সময়ে খেয়ে না খেয়ে সংগঠিত হয়ে দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম আত্নদান ও ত্যাগতিতিক্ষায় সংগঠন তার পতাকা উড়িয়েছে সকল সামরিক ও স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে।সেনাশাসকদের,পুলিশের অত্যাচার জেল জুলুম নির্যাতন সয়ে আদর্শিক নেতা হিসেবে গনরাজনীতিতে অভিষেক ঘটেছে কত সহস্র নেতার।
কেউ ছাত্রলীগ করতে গিয়ে সেই গৌরবকালে টেন্ডারবাজি,ঠিকাদারি,চাঁদাবাজি,কমিটি বানিজ্য, পদবানিজ্য করেননি!অথচ ক্ষমতার ১০বছরে ধীরে ধীরে ছাত্রলীগ নেতৃত্বের হাত ধরে সংগঠন ডুবেছে ভোগ বিলাস অর্থ বিত্ত ক্ষমতার অন্ধ মোহে!একদল হাইব্রিড নষ্ট এমপি মন্ত্রী নেতার স্বার্থে কেন্দ্র থেকে তৃনমূলে ব্যবহার হয়েছে এবং হচ্ছে।এবার যদি শোভন রাব্বানীর পরিনতির ভয়ে নষ্টরা নিজেদের শোধরান তাহলে বরনমাল্য পাবেন,নয় অপমান,লজ্জার বিদায়।
একদা যে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসা জাতির সোনার সন্তানরা বাসে,ট্রেনে সাংগঠনিক সফর করতেন সেখানে একালের ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের নেতারা যেতেন হেলিকপ্টারে উড়ে,বিমানে দলবল নিয়ে ভিআইপি লাউন্জ ব্যবহারই নয়,দলবল নিয়ে দখল করে উড়োজাহাজের দড়োজা পর্যন্ত সেলফি তুলেছেন।এই ছাত্রলীগ তার ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারিত্ব বহন করেনা তাই শাস্তি পেতে হয়েছে।মুজিব কন্যাকে অভিনন্দন।
প্রধানমন্ত্রী দলের যারা ক্যাডার রাজনীতি করেন তাদেরও সতর্ক করেছেন।আশা করি ১০বছরে দলের তৃনমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত ক্ষমতার সুবাদে দূর্নীতি তদবির বানিজ্য করে,কমিশন,মনোনয়ন,কমিটি বানিজ্য করে আওয়ামীলীগের মত গনমুখী আদর্শিক দলকে বিতর্কিত করে নিজেরা বিদেশে,ঢাকায় ও এলাকায় বিত্তবৈভব গড়েছে,সরকারের ইমেজ নষ্ট করেছে তাদের বিরুদ্ধে ও দলীয় কোর্টমার্শালে ব্যবস্থা নেবেন।আইনি ব্যবস্থা নেবেন।এতে দল সরকার ও তার ইমেজ বাড়বে।মুজিবকন্যার ইমেজের উপর ক্ষমতায় ভর করে দলবাজি করে যারা অর্থবিত্তের মোহে আজ অন্ধ,তাদের শাস্তি প্রাপ্য।
স্কুল জীবন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষদিন পর্যন্ত ছাত্রলীগ করেছি।এক সময় এ নিয়ে বড় গর্ব করতাম।একালে লজ্জায় বলতামওনা।বড় ভাই ৭৫পরে সুনামগন্জ জেলা ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটির আহবায়ক,পরে দুই সম্মেলনে সেই দুঃসময়ে সভাপতি,কি গৌরব অহংকার সম্মানের ছিলো তাদের,আমাদের ও পূর্বপুরুষদের সময়কার ছাত্রলীগের রাজনীতি।বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন,'ছাত্রলীগের ইতিহাস স্বাধীনতার ইতিহাস,ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস'।
আজ যারা গৌরবের পতাকা বহন করছো,কাল যারা করবে,এই ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারিত্ব বহন করবে।