স্বাস্থ্য সেবা ৩১ অক্টোবর, ২০২২ ০১:৪৫

ডেঙ্গু উপসর্গ দেখলে যা করতেই হবে, জানালেন চিকিৎসক

আমাদের কাগজ ডেস্ক: বর্তমানে প্রতিদিনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে অনেকেই। শনাক্ত হচ্ছে শতশত। শুধু তাই নয়। প্রতিদিনের আক্রান্তের পরিমাণ এতই যে হাসপাতালে জায়গা দিতেও হিমশিম খাচ্ছে অনেক হাসপাতাল। সাধারণ জ্বরের সঙ্গে ডেঙ্গুর জ্বরের খুব তফাত নেই। মৌসুম বদলের জ্বর না কি কোভিড না কি ডেঙ্গু বাসা বেঁধেছে শরীরে, তা বুঝে ওঠার আগেই অনেকটা দেরি হয়ে যায়। সাধারণ ভাইরাল জ্বরের সঙ্গে ডেঙ্গুকে গুলিয়ে ফেলে অবহেলা করে অনেক সময়ে রোগীর গুরুতর সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ডেঙ্গুর জীবাণুবহনকারী মশা কামড়ানোর তিন থেকে ১৪ দিনের মধ্যে জ্বর শুরু হয়। তাই দু’দিনের বেশি জ্বর হলে নিজেরা চিকিৎসা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়।

এডিস মশার কামড়ে প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ১০০ মিলিয়ন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। তাদের কারো কারো ক্ষেত্রে এই জ্বর তীব্র আকার ধারণ করে। ডাক্তারি পরিভাষায় একে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বলা হয়। এই ধরনের গুরুতর অবস্থা শিশু এবং বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে সম্প্রতি, ছোট বাচ্চাদের মধ্যেও জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। বিশেষ করে যাদের একবার ডেঙ্গু হয়েছে, তাদের দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার ডেঙ্গু হলে তা মারাত্মক অবস্থায় পৌঁছাতে পারে। ‘হেমারেজিক’-এর অর্থ রক্তপাত। রোগীর শরীরের বিভিন্ন ধমনী ও শিরা ফেটে গিয়ে হুহু করে রক্ত ও প্লাজমা বেরিয়ে যেতে শুরু করে। বাইরে থেকে রক্ত দিলেও অনবরত রক্তক্ষরণে রোগীর অবস্থা ক্রমশ জটিল হয়ে ওঠে। কখন কোন রোগীর ডেঙ্গু যে মারাত্মক রূপ নেবে, তা আগে থেকে বোঝা মুশকিল।

আসুন জেনে নিই ডেঙ্গু জ্বরের সাধারণ উপসর্গ কী?

ডেঙ্গু জ্বরের বেশকিছু উপসর্গ রয়েছে। যেমন-

১) জ্বর, মাথাযন্ত্রণা, হাত-পায়ের সঙ্গে সারা শরীরে ব্যথা। চোখের পিছনে ব্যথা শুরু হয়।

২) দাঁতের মাড়ি দিয়ে, নাক দিয়ে কিংবা মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হয়।

৩) গলাব্যথা, ঢোক গিলতে কষ্ট।

৪) গায়ে র‌্যাশ, চুলকানি, ডায়েরিয়া।

৫) বমি ভাব, অরুচি। গাঁটে ব্যথা।

ডেঙ্গি রোগীর কোন কোন লক্ষণ দেখলে বুঝতে হবে যে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন আছে?

চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, ডেঙ্গি ধরা পড়লেও রোগীকে বাড়িতে রেখে শুশ্রূষা করা যেতে পারে। তবে কিছু উপসর্গ দেখা দিলেই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। সে ক্ষেত্রে কয়েকটি উপসর্গ দেখা দেয়। কী কী দেখলে সতর্ক হবেন?

১) পেটে ব্যথা।

২) মল বা প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তপাত। ডেঙ্গির সংক্রমণ হলে রক্তে অনুচক্রিকা বা প্লেটলেট কাউন্ট কমে যেতে শুরু করে। আর এ কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশে হেমারেজ অর্থাৎ, রক্তক্ষরণ হয়। মাড়ি ও নাক থেকেও হতে পারে রক্তপাত।

৩) সারা দিনে যে পরিমাণ প্রস্রাব হত, তার পরিমাণ কমে যাওয়া।

৪) শ্বাসকষ্ট।

৫) ত্বকে লাল লাল র‍্যাশ।

৫) ডেঙ্গু শক সিনড্রোম থেকে মানবদেহে জলশূন্যতা তৈরি হয়। সঙ্গে সঙ্গে পাল্‌স রেট অনেকটা বেড়ে যায় এবং রক্তচাপ খুব কমে যায়। শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। শ্বাসপ্রশ্বাস খুব দ্রুত চলে। রোগী অস্থির হয়ে ওঠেন। তখন সময় নষ্ট না করে হাসপাতালে ভর্তি করানো উচিত।

চিকিৎসকের মতে, ডেঙ্গু হলে শরীরের কোষগুলো পানিশূন্য হয়ে পড়ে। এ সময় শরীরে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করতে হবে। এ সময় পানি পানের পাশাপাশি ডাবের পানি, ফলের রস, স্যুপ, স্টু, লিকার চা খাবারে বেশি রাখতে হবে। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার ডাল, ডিম, মুরগির মাংস, ছোট মাছের ঝোল বেশি করে রাখতে হবে।


আমাদেরকাগজ/এইচএম