দুর্যোগ ২৪ অক্টোবর, ২০২২ ০৭:২৪

ঘনিয়ে আসছে সিত্রাং: বন্ধ হচ্ছে সড়ক যোগাযোগ, নিহত ১,

নিজস্ব প্রতিবেদক:  ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের দমকা হাওয়ায় ভেঙে পড়া একটি বড় গাছের ডাল পড়ে নড়াইলে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে, অনেক জেলায় সংযোগ সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। ঝড়ের কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মুখে পড়েছে।

এরমধ্যেই খুলনার বাগেরহাটের কয়েকটি উপজেলার মানুষ সাইক্লোন শেল্টারে অবস্থান নিতে শুরু করেছে। সোমবার (২৪ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত জেলার মোংলা, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার ২৯ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে পৌঁছেছে। এছাড়া, অতি-দূর্যোগপ্রবণ এলাকায় উপজেলা প্রশাসন ও রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকরা জনগণকে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে সহযোগিতা করছে।

খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার সরকার জানান, খুলনার ৫৪৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে এ পর্যন্ত ৪০ হাজার ১৩০ জন আশ্রয় নিয়েছেন। এখনো কোন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। তবে বিভিন্ন স্থানে গাছের ডালপালা ভেঙ্গে পড়ছে। দুর্যোগকালে সাধারণ মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য পাঁচ হাজার ২৮০ জন সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক সজাগ অবস্থায় আছে

বরিশালে প্রবল বাতাসে বেশ কিছু গাছ উপড়ে গেছে, বিভাগের অধিকাংশ এলাকায় সকাল থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। 

পটুয়াখালী জেলায়ও বহু বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে ও তার ছিঁড়ে যাওয়ায় দুপুর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ঝড়ের কারণে পিরোজপুর ও মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

সিত্রাং দেশের ১৩টি জেলায় মারাত্মক এবং আরও দুটি জেলায় হালকা আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি আজ সন্ধ্যার মধ্যে দেশের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে এবং আগামীকাল ভোরে উপকূল অতিক্রম করতে পারে ।

ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা ১৩টি জেলা হলো সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী। 

ঘূর্ণিঝড় 'সিত্রাং' আজ সন্ধ্যার মধ্যেই দেশের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।

সোমবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, "ঘূর্ণিঝড় দেশের ১৩টি জেলায় আঘাত হানতে পারে; এছাড়াও দুটি জেলা সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই সন্ধ্যার মধ্যে উপকূলের বিপজ্জনক এলাকাগুলো থেকে শতভাগ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে।

ইতিমধ্যে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৭ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আজ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সেখানে বলা হয়, সোমবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।

এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘণীভূত ও উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আগামীকাল ভোর রাত বা সকাল নাগাদ খেপুপাড়ার কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে। 

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপদসংকেতের আওতায় থাকবে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৬ নম্বর বিপদসংকেতের আওতায় থাকবে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।

ঝড়ো বাতাস বইতে শুরু করেছে বরিশালে। সময়ের সাথে সাথে বাতাসের তীব্রতাও বাড়ছে। সঙ্গে হচ্ছে বৃষ্টিপাত। 

বরিশাল আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা আবদুল কুদ্দুস জানান, উপকূলের খুব কাছে চলে এসেছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। ঝড়টি বর্তমানে কুয়াকাটা থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আজ সোমবার রাতে অথবা মঙ্গলবার সকালে এটি বরিশাল ও চট্টগ্রাম অতিক্রম করতে পারে। বাতাসের বর্তমান সর্বোচ্চ গতি প্রতিঘন্টায় ৮৮ কিলোমিটার। 

 

 

আমাদের কাগজ/টিআর