রাজনীতি ২১ অক্টোবর, ২০২২ ০৪:১০

সমাবেশে অঘটন ঘটলে দায় সরকারের : মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিনিধি: খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে কোনো অঘটন ঘটলে তার সম্পূর্ণ দায় সরকারকে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার সকালে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আগামীকাল খুলনায় আমাদের বিভাগীয় সমাবেশ আছে। এই সমাবেশকে কেন্দ্রে করে সরকার ইতোমধ্যে একটা সন্ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে খুলনায়। তারা পথে পথে নেতাকর্মীদের, সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার করছে। খুলনার সমাবেশে যেন বাধা সৃষ্টি করা না হয়, তার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি। যদি কোনো রকম সমস্যা তৈরি হয়, তার সকল দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে সরকারকে নিতে হবে।

 তিনি আরও বলেন, এটা প্রমাণিত হবে যে এই সরকার আসলে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। আমাদের সভা-সমাবেশ তারা করতে দিতে চায় না।

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, শুধু তাই নয়, গতকাল রাতে আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যে বাসায় অবস্থান করছেন, সেখানে পুলিশ রেট করেছে এবং সেখান থেকে ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। আমি কিছুক্ষণ আগে খবর নিয়েছি, এখন নির্দেশ দিয়েছে পথে পথে যাকে যেখানে পাওয়া যাবে, তাকে সেখানে গ্রেপ্তার করার জন্য। গতকাল তারা রামদা, লাঠিসোঠা, অস্ত্র নিয়ে শোডাউন করেছে; মোটরসাইকেল নিয়ে বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাস সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। আমি এই গ্রেপ্তার এবং সন্ত্রাস সৃষ্টি করার যে প্রচেষ্টা তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি, প্রতিবাদ করছি এবং অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

জ্বালানি তেল নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি; ভোলা, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ যশোরে পাঁচ নেতাকর্মীর মৃত্যু এবং সারা দেশে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল শনিবার দুপুরে খুলনায় সোনালী ব্যাংক চত্বরে বিভাগীয় সমাবেশ করবে বিএনপি।

সমাবেশ উপলক্ষে শুক্রবার শনিবার গণপরিবহন ধর্মঘটের পেছনে সরকারের হাত রয়েছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজ যেটা হয়েছে, সব গণপরিবহন তারা বন্ধ করে দিয়েছে এবং কথা আছে ট্রেন, লঞ্চও বন্ধ করছে। কিন্তু এটায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা তাকে সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে ব্যাহত করছে। এখানে প্রমাণিত হয়েছে, সরকার চায় না মানুষ একটা গণতান্ত্রিক উপায়ে তাদের কথা, তাদের বক্তব্য, তাদের প্রতিবাদ সেটা প্রকাশ করুক।

বিএনপির এই নেতা বলেন, খুলনায় নিশ্চয় আপনাদের প্রতিনিধিরা আছেন, তাদের কাছ থেকে জানতে পারবেন। আজকের পত্র-পত্রিকায় রিপোর্ট আপনারাই করেছেন। প্রত্যেকটা পত্র-পত্রিকায় যে কীভাবে তারা একটা রেইন অব ট্রেরর সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। এটা তারা ময়মনসিংহে করেছিল, চট্টগ্রামে করেছিল। বাট নাথিং ওয়াট। কারণ তো একটাই। এরা (সরকার) জনভীতি রোগে ভোগে। পিপলস ফোবিয়া রোগ হয়েছে তাদের। মানুষ দেখলেই ভয় পায়। যে কারণে তারা নির্বাচনগুলো ওইভাবে করে, যাতে করে জনগণকে বাদ দিয়ে করা যায়, সেই পদ্ধতিতে তারা নির্বাচন করছে। রাষ্ট্র চালাতে চায় তারা মানুষকে বাদ দিয়ে। তাদের অসুখটাই তাই, রোগটাই তাই।

প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ভয়টা কীসের তাদের? কী কারণে তারা সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে সমাবেশ বন্ধ করতে চাচ্ছে। একটাই তো কারণ। মানুষ যদি বাড়তে থাকে তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব হবে না। জনগণের উত্তাল তরঙ্গে তাদের ভেসে যেতে হবে, এভাবে যদি জনগণ জেগে ওঠে, গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হবে। তখন তাদের অত্যন্ত ধিক্কৃত অবস্থায় সরে যেতে হবে। এটাই তাদের ভয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা নিশ্চয় অমর্ত্য সেনের বইটা পড়েছেন। যেখানে উনি ৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের পর্যালোচনা করতে গিয়ে স্পষ্ট করেই বলেছেন, ৭৪ সালে দুর্ভিক্ষটা ছিল মানবসৃষ্ট, মানুষদের দ্বারা তৈরি করা। অর্থাৎ তখন যারা ক্ষমতাসীন ছিলেন, তাদের অব্যবস্থাপনা, তাদের দুর্নীতি, তাদের অযোগ্য, তাদের অদক্ষতার কারণে সেই দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয়েছিল। আজকে সেই একই ঘটনা বাংলাদেশে ঘটছে। এটা আমরা বারবার করে বলে আসছি। দুর্ভিক্ষের আগাম পদধবনি শুনতে পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদের বাংলাদেশের কৃষকদের প্রত্যেককে একটা করে সোনার মেডেল দেওয়া উচিত। তারা দিবারাত্র পরিশ্রম করে ফসল ফলায়। জন্য বাংলাদেশের মানুষ কোনো রকমের খেয়ে বেঁচে থাকে। এরা মুখে বলে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছি। আর অন্যদিকে লাখ লাখ টাকার খাদ্য বিদেশ থেকে আমদানি করছে। কয়েক দিন আগেও দেখেছেন, বিদেশ থেকে আমদানি করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদের পুরো লক্ষ্যটা হচ্ছে লুট করা, চুরি করা।

প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী, যাদের বাধ্যতামূলক অবসর পাঠানো হয়েছে, তাদের প্রতি যদি অবিচার করা হয় তাহলে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তারা ন্যায়বিচার পাবেন কিনাএমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সব সময় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কথা বলছি। আমরা স্পষ্ট করে বলছি, আমরা সামাজিক ন্যায়বিচার, মূল্যবোধ, মানবিক মূল্যবোধ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করবে। অবশ্যই আমরা এগুলো দেখব যেন সকলে সমান বিচার পায়।

সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।

 

 

 

আজকের কাগজ/টিআর