সারাদেশ ১৮ অক্টোবর, ২০২২ ০১:০০

সাগর ‘লিজ’ দিয়ে টাকা নেয় এমপি

ছবি:ইন্টারনেট

ছবি:ইন্টারনেট

নিজস্ব প্রতিবেদক: পটুয়াখালীর চর লিজ দিয়ে জেলেদের থেকে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের সংসদ সদস্য মহিব্বুর রহমান মহিবের বিরুদ্ধে। জেলেদের অভিযোগ, বহু বছর ধরে ‘জাল যার সাগরের মাছ তার’ রীতি চলে এলেও গত কয়েক বছরে তার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। পটুয়াখালী উপকূলে বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা সব চর, ডুবোচর, মোহনা ও সৈকতের স্থানে এখন আর নির্বিঘ্নে মাছ ধরতে পারেন না জেলেরা। মাছ ধরতে হলে ইজারার মতো বছরভিত্তিতে টাকা দিতে হয় স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্রের লোকজনকে

ওই জেলেরা জানান, ক্ষমতাসীন দল ও সংসদ সদস্যের কথা বলে তাঁদের কাছ থেকে টাকা আদায়ে নেতৃত্ব দেন রাঙ্গাবালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাঙ্গাবালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান মামুন, মহীপুর থানার ধুলাসার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউনুস জালাল, একই ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মিন্টু ভূইয়া, রাঙ্গাবালীর বাবু তালুকদার ও শাহজুল মীর।

রাঙ্গাবালী এলাকার জেলে তোতা মৃধা বলেন, ‘এমপি মহিব মেয়া বাবু তালুকদাররে লিজ (ইজারা) দেছে, তার কাছ থেহে আমাগো দেশি মানুষ খালগোড়ায় বাড়ি শাহজুল মীর আনছে। আমরা শাহজুল মীরের কাছ দিয়া এই বছর ৯০ হাজার টাহায় আনছি।’

সংসদ সদস্য মহিব্বুর রহমান মহিব অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, সাগর ‘ইজারা’ দেওয়ার মতো কোনো ঘটনাই তাঁর জানা নেই,‘কে বা কারা সাগর ইজারা দিচ্ছে, আমি তা জানি না। যাদের কথা বলছেন, তাদের সাথে আমার সম্পৃক্ততা নেই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহজুল মীর বলেন, ‘ওই জেলেদের কাছে দুই-তিন মাস আগে কিছু মাছ চেয়েছিলাম। বলেছিলাম, আমার কাছে মাছ বিক্রি কর; কিন্তু ওরা দেয়নি। মাছ দেয় নাই, তাই আপনাদের কাছে মিথ্যা কথা বলছে।’

ধুলাসার ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল মাস্টার জানান, কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতসংলগ্ন মোহনাসহ যত চর আছে, সবই ‘ইজারা’ দেওয়া হয়েছে। আর এই ইজারা দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। আব্দুল জলিল মাস্টার বলেন, ‘সাগরে মাছ ধরতে জেলেগো টাহা দেওন লাগে।’ কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টাহা দ্যাতে অয় কেন, হের জবাব দ্যাতে পারুম না, তয় মাছ ধরলে দ্যাতে অয়।’ কত বছর ধরে এমনটি চলছে, জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে, চাইর বছর। বর্তমান এমপি সাব অয়ার (নির্বাচিত হওয়ার) পর থাইক্যা এই অবস্থা।’ ‘ইজারা’ কে দেন, জানতে চাইলে সাবেক এই জনপ্রতিনিধি প্রথমে বলেন, ‘আমরা ছোড মানুষ, এত কথা কইতে পারুম না।’ পরে এমপি সাহেব কি না, প্রশ্ন করা হলে তিনি ‘হ্যাঁ’ বলে মাথা নাড়েন।

আব্দুল জলিল জানান, সমুদ্র ও নদীর সংযোগস্থল রামনাবাদ চ্যানেল থেকে সমুদ্রের ‘মালোর ট্যাক’ পর্যন্ত প্রতিবছর ২৬ লাখ টাকায় ‘ইজারা’ দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। বিষয়টি তদারক করেন ধুলাসার ইউনিয়নের মিন্টু ভূইয়া। এ ছাড়া চর বিজয়ও এ বছর ৪ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে। গঙ্গামতি সৈকতের যে খেয়া দিয়ে পর্যটকেরা লাল কাঁকড়ার চরে যান, সেই খেয়াঘাট থেকে প্রতিবছর তিন লাখ টাকা নেন সংসদ সদস্য।

অভিযোগের বিষয়ে ধুলাসার ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মিন্টু ভূইয়া বলেন, ‘এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। এমপি মহোদয় এ বিষয়ে জানেনই না।’

অভিযোগ উঠেছে, কিছু লোকের মুনাফা লোটার কারণে কুয়াকাটা ও রাঙ্গাবালীর সব মোহনায় অবৈধ কারেন্ট জালের ঘের বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে মোহনা দিয়ে নদীতে প্রবেশের আগেই ইলিশসহ সব প্রজাতির মাছ ওই জালে ধরা পড়ছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে মাছের প্রজনন ও বংশবিস্তার।

সূত্র: আজকের পত্রিকা

 

আমাদের কাগজ//টিএ