অপরাধ ও দুর্নীতি ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১১:১৮

বাবার কাছে সন্তান অনিরাপদ হলে কোথায় যাবে?

ডেস্ক রিপোর্ট

একজন বাবা হচ্ছেন সন্তানের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল। সেই বাবার কাছেই যদি সন্তান অনিরাপদ হয়, তবে সে কোথায় যাবে? বাবা কর্তৃক ১৩ বছরের কন্যাকে ধর্ষণের অভিযোগে দেওয়া রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত কথা বলেন।

মঙ্গলবার ( ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকার নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল- এর বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার রায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

এছাড়া, তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দণ্ডিত আসামি কামাল হোসেনের বাড়ি খাগড়াছড়ির ভুইপাড়া এলাকার জালিয়াপাড়া গ্রামে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, এটি একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। বাবা হচ্ছে সন্তানের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল। শিশুরা বাবার কাছেই আশ্রয় নেয়। অথচ বাবা এখানে রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা পালন করেছেন। একজন বাবার কাছে সন্তান যদি অনিরাপদ হয়ে যায়, তবে সন্তান যাবে কোথায়?

রায়ের সময় আসামি কাঠগড়ায় ছিল। সময় তাকে ভাবলেশহীন নির্বিকার দেখা যায়। রায়ের বিষয়ে সে কোনো প্রতিক্রিয়াও জানাননি।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আফরোজা ফারহানা অরেঞ্জ বলেন, আসামি নিজেও ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। মামলার অন্য আলামত, ডিএনএ আসামির সঙ্গে ম্যাচ করেছে। তাই রায়ে তাকে পুরনো আইনে সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

আসামিপক্ষের আইনজীবী মাহিনুর আক্তার লাইজু বলেন, ‘মামলার বিচার চলাকালে বাদী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছে। সে বলেছে, তার বাবা তাকে জন্ম দিয়েছে। সে বিচার চায় না। যেহেতু বাদী বিচার চায় না, সেক্ষেত্রে আদালতে বিষয়টি বিবেচনার আর্জি জানিয়েছিলাম।

জবাবে আদালত বলেছেন, ‘ধর্ষিতা কন্যা বাবাকে বাঁচাতে বলেছে, ‘আমি সাজা চাই না সেটি কন্যার মহানুভবতা হতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্র এমন ন্যাক্কারজনক অপরাধীর ব্যাপারে এত মহানুভব নয়।

গত ডিসেম্বর মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মোট সাক্ষীর মধ্যে ছয়জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। এরপর গত ১৯ জানুয়ারি রাষ্ট্র আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ২৮ জানুয়ারি রায়ের দিন ধার্য করেছিলেন আদালত। এরপর রায়ের তারিখ একদফা পিছিয়ে ফেব্রুয়ারি ধার্য করা হয়।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ঘটনার / বছর আগে ভুক্তভোগীর বাবা-মায়ের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর সে তার দাদীর কাছে থাকতো। ডিভোর্সের পর আসামি ভুক্তভোগীর বাবা লিপি বেগম নামে আরেকজনকে বিয়ে করে। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে মেয়েকে নিয়ে তার বাবা রূপনগর আবাসিক এলাকার বস্তিতে যায়। নিয়ে তার সৎ মায়ের সঙ্গে বাবার ঝগড়া হয়। পরে একই বছর মে মেয়েকেসহ আসামি বাড্ডার আব্দুল্লাহবাগ এলাকায় বাসা ভাড়া নেয়। এরপর এবং মে কামাল হোসেন সেখানেই মেয়েকে ধর্ষণ করে।

ঘটনায় ভুক্তভোগী বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর কামাল হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর সে আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবিন্দ দেয়। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এদিকে মামলাটি তদন্ত করে বাড্ডা থানার এসআই আল-ইমরান আহম্মেদ কামাল হোসেনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

সূত্র : বাংলানিউজ