অর্থ ও বাণিজ্য ৩০ জানুয়ারি, ২০২১ ০৮:০৫

তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানোর পরিকল্পনা সরকারের

ডেস্ক রিপোর্ট

কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকে নিরুৎসাহ করার পর এবার তেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে আনার নীতি-পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছে সরকার। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে তেলচালিত রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না। পাশাপাশি ধাপে ধাপে বন্ধ করে দেওয়া হবে তেলভিত্তিক পুরোনো কেন্দ্রগুলো।

যার ফলে প্রায় ৩ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৭০০ মেগাওয়াট ফার্নেস তেলভিত্তিক কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর অফিসে দেওয়ার পর সম্মতিও মিলেছে। এখন কোন কোন কেন্দ্র কখন বন্ধ করা হবে তার রোডম্যাপ তৈরি করা হবে।

তিনি জানান, তেলের ব্যবহার কমিয়ে এলএনজির ব্যবহার বাড়ানো হবে। এলএনজি অপেক্ষাকৃত পরিচ্ছন্ন জ্বালানি হলেও এটি ব্যয়বহুল। তবে কয়লাভিত্তিক উত্পাদন যতটুকু কমানো হবে বলে ভাবা হয়েছিল এখন তা হবে না। বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনাও নতুন করে সাজানো হচ্ছে। আগের প্রক্ষেপন-প্রাক্কলনে যে ভুল ছিল তাও শুধরে নেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ হোসেন বলেন, জ্বালানি মিশ্রণে গ্যাস, তেল, কয়লা, এলএনজি, নবায়নযোগ্য শক্তি উেসর সুষম বণ্টনে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। জরুরি এবং প্রয়োজনীয় সময়ের জন্য তেলভিত্তিক পিকিং কেন্দ্রগুলো রাখা হবে। নির্ধারিত মেয়াদশেষে গ্যাস বা তেলভিত্তিক রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্র যতগুলো থাকবে ততগুলোকে এখনকার মতো ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হবে না। যতটুকু বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে শুধু ততটুকুর মূল্য পরিশোধ করা হবে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানায়, দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সম্মিলিত উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ২০ হাজার ৭৪৮ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে দৈনিক বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয় গড়ে ১০ হাজার মেগাওয়াটেরও কম। চাহিদা থাকা সত্ত্বেও সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনে অক্ষমতা-ত্রুটির কারণে সক্ষমতার অনেকখানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আবার যে হারে বা গতিতে শিল্পায়ন-ব্যবসার সম্প্রসারণ হবে বলে বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনায় প্রক্ষেপন করা হয়েছিল তা হয়নি।

কোভিড-১৯ মহামারির কারণে শিল্প-ব্যবসার গতি আরো কমবে। এমন পরিস্থিতিতে যে কেন্দ্রগুলো পুরোনো বা যেগুলোতে উৎপাদন খরচ বেশি তা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি মেগাপ্রকল্প ২০২৪-২০২৫ সালের মধ্যে উপাদনে আসার কথা রয়েছে। তাই কম দক্ষতার কেন্দ্রগুলো বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই। আর কুইক রেন্টাল বা রেন্টাল কেন্দ্রগুলো বন্ধ করলে উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদেরও ক্ষতি নেই। ইতিমধ্যে তারা বিনিয়োগের কয়েক গুণ লাভ করেছেন। তাছাড়া বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলেও দেশের বিদ্যুৎখাতে তার প্রতিফলন হয়নি।

বিদ্যুৎ বিভাগের সূত্র জানায়, গত পাঁচ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো দিয়েছে পিডিবি। উৎপাদন না করে নিয়ম মেনেই এ টাকা নেয় তারা। অথচ কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতার ৩০ শতাংশও ব্যবহার করা যায়নি।

পিডিবি জানায়, দেশে বর্তমানে তেলভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র রয়েছে ৭৬টি। এগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ৭ হাজার ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত্। এটি মোট উৎপাদন ক্ষমতার প্রায় এক তৃতীয়াংশ।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, উন্নয়নশীল দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ১৫ শতাংশের বেশি তেলভিত্তিক হওয়ার কথা নয়। উৎপাদনরত কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ৯টি রেন্টাল এবং এর সবগুলোই গ্যাসভিত্তিক। উৎপাদন ক্ষমতা ৩৭১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। আর ১২টি কুইক রেন্টালের উত্পাদন ক্ষমতা ৯৮৩ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ১০টিই তেলভিত্তিক। এই রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্রগুলোর নবায়নকৃত মেয়াদ চলতি বছরের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবরের মধ্যে শেষ হবে। এর বাইরে বেসরকারি খাতে (আইপিপি) ৩৬টি তেলভিত্তিক কেন্দ্র রয়েছে।

সূত্র: ইত্তেফাক