নিজস্ব প্রতিবেদক
বিভিন্ন মামলায় এক বছর করে সাজা হওয়া ৪৯ শিশুকে কারাগারে যেতে হচ্ছে না। সংশোধনের ১০টি শর্তে বাড়িতে মা-বাবার কাছে থেকে এই সাজা ভোগ করবে তারা।
আজ বুধবার সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল এবং শিশু আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন একই দিনে ৩৫টি মামলার রায় দিয়ে শিশুদের প্রবেশনে পাঠান। তাদের বিরুদ্ধে মামলায় দণ্ডবিধির ৩২৩ ধারায় (ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত করা) অভিযোগ ছিল।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সুনামগঞ্জের শিশু আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) নান্টু রায় বলেন, এই সময়কালে তাদের ১০টি শর্ত পালন করতে হবে। শর্ত পালনের বিষয়টি তত্ত্বাবধান করবেন জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা। রায় ঘোষণার পর আদালতের কর্মচারীরা প্রত্যেক শিশুর হাতে একটি করে ‘১০০ মনীষীর জীবনী’ গ্রন্থ তুলে দেন।
দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স–১৯৬০ আইনের ৪ ধারা অনুযায়ী পূর্বে দণ্ডিত হয়নি, এমন কোনো অপরাধী অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ড ভোগ করার মতো অপরাধ করলে আদালত অপরাধীর বয়স, স্বভাব-চরিত্র, শারীরিক বা মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে আদেশ দিতে পারেন। এর আগে গত বছরের ১৪ অক্টোবর একইভাবে ১০টি মামলায় ১৪ শিশুকে পরিবারের জিম্মায় এক বছরের প্রবেশনে দিয়েছিলেন একই আদালত।
বিচারক রায়ে প্রবেশনকালে যেসব শর্ত পালনের কথা উল্লেখ করছেন, সেগুলো হলো ‘১০০ মনীষীর জীবনী’ গ্রন্থটি পাঠ করা, মা–বাবাসহ গুরুজনদের আদেশ-নির্দেশ মেনে চলা, মা–বাবার সেবাযত্ন করা এবং কাজকর্মে তাদের সাহায্য করা, ধর্মীয় অনুশাসন মানা, নিয়মিত ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা, প্রত্যেকে কমপক্ষে ২০টি করে গাছ লাগানো ও গাছের পরিচর্যা করা, অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করা, মাদক থেকে দূরে থাকা, ভবিষ্যতে কোনো অপরাধের সঙ্গে নিজেকে না জড়ানো এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।
এই শিশুদের প্রবেশনে দেওয়ার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আদালত রায়ে বলেছেন, পারিবারিক বন্ধনে থেকে এই কোমলমতি শিশুদের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা। প্রবেশন কর্মকর্তা ও শিশুদের অভিভাবকদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে রেখে ভবিষ্যতে যাতে তারা অপরাধে না জড়ায়, সেদিকে লক্ষ রাখা। জীবনের শুরুতেই যাতে শাস্তির কালিমা তাদের স্পর্শ না করে, সে জন্য শাস্তি না দেওয়া। সংশোধনাগারে অন্য যারা বিভিন্ন অপরাধে আটক আছে, তাদের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখা। পরিবারের সংস্পর্শে রেখে শিশুদের স্বাভাবিক মানসিক বিকাশের ব্যবস্থা করা। সংশোধনাগারের ওপর চাপ কমানো। সর্বোপরি শিশুর সার্বিক কল্যাণ সাধন করা।
মামলার রায় ঘোষণার পর এক শিশুর অভিভাবক বলেন, আমরা মনে করেছিলাম, ছেলে জেলে যাবে। কিন্তু পরে শুনি সে বাড়িতে আমাদের সঙ্গে থাকবে। বাড়িতে থেকেই কিছু নিয়মকানুন মেনে সাজা ভোগ করবে। এভাবে রায় হতে পারে, এটা ভাবতেই পারিনি। ছেলেটা যাতে আর কোনো অপরাধে না জড়ায়, সেটা সব সময় খেয়াল রাখব।
জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা শাহ মো. শফিউর রহমান বলেছেন, প্রবেশনকালে এই শিশুরা শর্তগুলো যথাযথভাবে পালন করছে কি না, সেটির তত্ত্বাবধান তিনি করবেন। পাশাপাশি অভিভাকদেরও দায়িত্ব আছে এসব শর্ত পালনে তাদের সহযোগিতা করা, পাশে থাকা। তিন মাস পরপর আদালতে এ বিষয়ে তাকে প্রতিবেদন দিতে হবে। প্রবেশনের মেয়াদ শেষ হলে আদালত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।