শিক্ষা ১১ জানুয়ারি, ২০২১ ১০:৫২

ঢাবির পিএইচডি থিসিস সংরক্ষণ নিয়ে জানতে চায় হাইকোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

হাইকোর্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দেওয়া পিএইচডি গবেষণা অভিসন্দর্ভ (থিসিস) কীভাবে সংরক্ষণ করা হয় তা জানতে চেয়েছেন। এছাড়াও মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কোনো সফটওয়্যার বা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় কিনা, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

সোমবার (১১ জানুয়ারি) বিচারপতি জে বি এম হাসান বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশ দেন। দুই মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তা জানাতে বলা হয়েছে।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী মনিরুজ্জামান লিংকন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি গবেষণার ৯৮% নকলশিরোনামে গত বছরের ২১ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট করে আইনজীবী মনিরুজ্জামান লিংকন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে ফেব্রুয়ারি সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি সমমানের ডিগ্রি কীভাবে অনুমোদন করা হয়, তা খতিয়ে দেখে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) নির্দেশ দেন।

একইসঙ্গেঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি গবেষণার ৯৮% নকল’- বিষয়ে তদন্ত করে ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

ওই আদেশ অনুসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং মঞ্জুরি কমিশন আদালতে প্রতিবেদন দেন।

শুনানি শেষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার সাংবাদিকদের বলেন, আদেশ অনুসারে যথারীতি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তদন্ত চলছে। এর মধ্যে আমরা সময় চেয়েছিলাম সময় বাড়িয়ে দিয়েছেন। দুই মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন। এছাড়া ইউজিসিও প্রতিবেদন দিয়েছে। সে প্রতিবেদন দেখে আদালত আজ আরেকটি নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। পিএইচডি গবেষণা অভিসন্দর্ভ (থিসিস) কীভাবে সংরক্ষণ করা হয় এবং তা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কোনো সফটওয়্যার বা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় কিনা তা জানাতে হবে।
ইউজিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ স্বীয় আইন, বিধি, প্রবিধি, সংবিধি নীতিমালা অনুযায়ী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এমফিল পিএইচডিসহ উচ্চতর ডিগ্রি দেয়। বিষয়ে কমিশনের কোনো ভূমিকা নেই।

আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যলয়ের ব্যপারে বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে দেশে সরকার অনুমোদিত ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তন্মধ্যে ৯৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কমিশন থেকে এখন পর্যন্ত কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল পিএইচডি প্রোগ্রাম পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি গবেষণার ৯৮% নকলশিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ৯৮ শতাংশ হুবহু নকল পিএইচডি গবেষণা অভিসন্দর্ভের (থিসিস) মাধ্যমেডক্টরেটডিগ্রি নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ওষুধপ্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল কালাম লুৎফুল কবীর। এই গবেষণার সহতত্ত্বাবধায়ক অভিযোগ করেছেন, একাধিকবার অনুরোধ করলেও লুৎফুল কবীর তাকে থিসিসের কোনো কপি দেননি।

২০১৪ সালের দিকেটিউবারকিউলোসিস অ্যান্ড এইচআইভি কো-রিলেশন অ্যান্ড কো-ইনফেকশন ইন বাংলাদেশ: অ্যান এক্সপ্লোরেশন অব দেয়ার ইমপ্যাক্টস অন পাবলিক হেলথশীর্ষক ওই নিবন্ধের কাজ শুরু করেন আবুল কালাম লুৎফুল কবীর। তার এই গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন ওষুধপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আবু সারা শামসুর রউফ। আর সহ-তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অধ্যাপক ফারুক।

গবেষণায় ৯৮ শতাংশ হুবহু নকলের বিষয়টি নজরে আসার পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে একজন গবেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের কাছে বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এছাড়া লুৎফুল কবীরের অভিসন্দর্ভে নিজের একটি গবেষণা থেকে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানকে একটি চিঠি দিয়েছেন সুইডেনের গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোনাস নিলসন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গবেষণার চৌর্যবৃত্তি শনাক্ত করার বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় সফটওয়্যার টার্নইটইনের মাধ্যমে অভিসন্দর্ভটি যাচাই করে দেখা গেছে, ২০১২ সালে রাজধানীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী-গবেষকের জমা দেওয়া একটিস্টুডেন্ট পেপারস’-এর সঙ্গে লুৎফুল কবীরের নিবন্ধের ৯৮ শতাংশ হুবহু মিল রয়েছে। এটিসহ মোট ১৭টি জার্নাল, আর্টিকেল গবেষণাপত্রের সঙ্গে নিবন্ধটির বিভিন্ন অংশের উল্লেখযোগ্য মিল পাওয়া গেছে, যেগুলোর সবই লুৎফুল কবীরের অভিসন্দর্ভের আগে প্রকাশিত হয়েছে।

#বাংলানিউজ