নারীমেলা ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১২:২৯

সান ম্যারিনো, আমার পৃথিবী ভ্রমণের অভিযাত্রায় ১১১ তম দেশ: আসমা আজমেরী

কাজী আসমা আজমেরী

কাজী আসমা আজমেরী

(লেখিকা বেশ দীর্ঘসময়ে প্রবাস জীবনে কাটিয়েছেন বিধায় তার লেখায় তিনি আংশিক ল্যাটিন হরফ ব্যাবহার করেছেন। পাঠকের সুবিধার কথা মাথায় রেখে সেখানে লেখিকার অনুমতি নিয়ে বেশ কিছু পরিমার্জন করা হয়েছে। যা লেখিকা কাজী আসমা আজমেরীর লেখার মূলভাবকে কখনোই বিকৃত করে নি।)

সান ম্যারিনো,  আমার পৃথিবী ভ্রমণের অভিযাত্রায় ১১১ তম দেশ। এই দেশটি সম্পর্কে আমার আগে খুব একটা ধারণা ছিল না। তো আমার এক বন্ধু আমাকে এই দেশটির কথা জানালো। আমি চিন্তা করলাম এত সুন্দর একটি দেশ আমার দেখা উচিত।

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে এটি একটি দেশের ভেতর একটি দেশ, হয়তোবা অনেকেই জানেন ভ্যাটিকান সিটি হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম একটি দেশ। যেখানে বাসিন্দা সাড়ে তিন হাজার, এবং এই দেশটি হচ্ছে ইতালির ভিতরে এবং ইতালির ভেতরেই এই অপূর্ব সুন্দর দেশ সান ম্যারিনো। এই দেশটি প্রতিষ্ঠিত হয় খ্রীস্টের জন্মের ৩০১ বছর পরে। পৃথিবীর 197 টি স্বাধীন দেশের ভীতর এটি হচ্ছে একটি এবং এটি পৃথিবীর ৫ নম্বর ক্ষুদ্রতম দেশ।পাহাড়ে ওপর বেষ্টিত এই শহরটি অনেক সুন্দর ভাবে চারিদিকে তিনটি টাওয়ার দিয়ে বেষ্টিত।পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন রিপাবলিকান দেশ হচ্ছে এটা। এখানে প্রায় 32 হাজার লোক বাস করে এবং এর আয়তন ৬১ বর্গ কিলোমিটার । ঐতিহাসিক স্থাপত্য  পরিবেষ্টিত মণ্টে টাইটানো সিটস এর রাজধানীর নাম স্যানম্যারিনো সিটি। এই শহরের তিনটি টাওয়ার রয়েছে Guaita, Cesta and Torre del Montale যা হচ্ছে এগারোশো শতাব্দীর তৈরি করা । Titano’s পার্শ্ববর্তী পর্বতচূড়া সৌন্দর্যকে আরও বর্ধিত করেছে। এখানে চতুর্থ খ্রিস্টপূর্বে  রিফিউজিদের বসতি গড়ে তোলে সেন্ট মিতুয়াস।

মেরিনোতে স্থূল জাতীয় উৎপাদনের ৫০ শতাংশের বেশি  আসে পর্যটন খাত থেকে। প্রতি বছর ৩০ লক্ষেরও বেশি পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন। সান মেরিনোর প্রধান শিল্পের মধ্যে আছে ব্যাংকিং, বস্ত্র, ইলেকট্রনিকস এবং সিরামিক্‌স। এছাড়াও সান মেরিনো ডাকটিকেট সংগ্রহকারীদের কাছে সংরক্ষণযোগ্য ডাকটিকেট বেচে থাকে। সান মেরিনোর মাথাপিছু উৎপাদন ও জীবনযাত্রার মান ইতালির সমপর্যায়ের। ইতালি থেকে বেশির ভাগ খাদ্যদ্রব্য আসে। এখানকার মানুষেরা অনেক সরল সহজ এবং অনেক সাধারন যেমন আমি  এখানকার উন্মুক্ত কনসার্টে গান শুনতে গিয়েছিলাম, সেখানে আমায় নাচতে দেখে মোটামুটি এই শহরের সবাই আমাকে চিনে ফেলেছে। এই শহরের সবচেয়ে সুন্দর যে জিনিসটা আমার কাছে লেগেছে সেটা হচ্ছে টর্চার মিউজিয়াম যেটা অনেকটাই অদ্ভুত। আরো ভালো লিখছে এদের ন্যাশনাল পার্লামেন্ট ভবন।

অনেক  নিন্দুকেরা বলে থাকবেন এটা কোন দেশ নয়, তবে এটা যদি দেশ না হয় তাহলে তারা অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করে কি করে ?প্রথম অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করেন 1960 সালে, তার পরে মাঝে মাঝেই তারা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে তাদের নিজেদের দেশকে বিশ্বের দরবারে জানান দেন।

এই শহরটিতে ইতালির ভিসা কিংবা সেনজেন ভিসা থাকলে যাওয়া যায়। এবং এই শহরটি একটু তুলনামূলকভাবে ব্যায়বহুল। সাধারণত দম্পতিদের জন্য ৬০ থেকে ১০০ ইউরোর মধ্যে সুন্দর হোটেল পাওয়া যায়। আর যারা আমার মত সিঙ্গেল ট্রাভেলার,  তাদের জন্য হোস্টেল রয়েছে যা ২০ ডলার থেকে শুরু হয়েছে। মোটামুটি এখানে আসতে হলে একজন ট্রাভেলার সারা দিনে প্রায় খাওয়া-দাওয়া নিয়ে ৩০-৩৫ ইউরোর ভিতরে হয়ে যাবে। যারা ব্যাকপ্যাকিং করছেন এবং দুজন কিংবা কাপল যারা আছেন তাদের জন্য ১০০ থেকে ১২০ ইউরোর ভেতরে খুব সুন্দরভাবে হয়ে যাবে আপনার বাজেট মত।এবং এখানে সানমারিনো কার্ড আছে যার মাধ্যমে আপনি পেতে পারেন ফিফটি পার্সেন্ট ডিসকাউন্টের মাধ্যমে জাদুঘর ভ্রমনের সুযোগ এবং কিছু কিছু রেস্টু্রেন্টে ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়, হোটেল থেকে কিংবা হোস্টেল থেকে চেয়ে নিতে ভুলবেন না কিন্তু। 

ইচ্ছা করলে রিমিনি শহর থেকে এক ঘন্টা দূরে অবস্থান করছে এই শহরটি প্রতি ঘন্টায় রিমিনি থেকে মাত্র ৫ ইউরো বাসে করে চলে আসতে পারেন সময় লাগে মাত্র ১ ঘন্টা সবে সন্ধ্যা হচ্ছে লাস্ট বাস। এবং যদি রিমিনি শহরে যান তাহলে অনেক খরচ কম পড়ে।

লেখিকাঃ কাজী আসমা আজমেরী।