আইন ও আদালত ৩১ আগস্ট, ২০১৯ ০১:১৬

অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্যের জন্য বরগুনার এসপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ

ডেস্ক রিপোর্ট।। 

হাইকোর্ট রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেনের বিরুদ্ধে সময়মতো ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন । আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে জামিনের আদেশ দেন হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ।

পরে বরগুনার এসপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী মিন্নির দোষ স্বীকার মর্মে বরগুনার এসপি মারুফ হোসেন যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার অযাচিত-অনাকাঙ্ক্ষিত। বিষয়টিকে ন্যায়-নীতি সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ তদন্তের পরিপন্থী বলে মন্তব্য করে এ পর্যবেক্ষণ দেন আদালত।

আদালত তার পর্যবেক্ষণে আরও বলেন, ‘বরগুণার আলোচিত এই হত্যা মামলাটি তদন্ত কার্য যেহেতু এখনো চলমান, সে কারণে এই মুহূর্তে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে আদালত বিরত থাকছে। তবে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক সময়মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’

আদালত আরও বলেন, ‘পরিস্থিতি ও বাস্তবতা যাই হোক না কেন, কোনো পুলিশ সুপারের মতো দায়িত্বশীল পক্ষে থেকে এ ধরনের বক্তব্য জনমনে নানা প্রশ্ন জন্ম দিয়েছে। একদিকে যেমন জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছেন, তেমনি তিনি তার দায়িত্বশীলতা ও পেশাদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন, তা দুঃখজনক এবং হতাশাজনক। উচ্চ পর্যায়ের একজন পুলিশ কর্মকর্তার নিকট হতে এ ধরনের কার্য প্রত্যাশিত এবং কাম্য নয়। ভবিষ্যতে দায়িত্ব পালনে আরও সতর্কতা ও  পেশাদারিত্বের পরিচয় দেবেন আদালতের এটাই কাম্য।’

হাইকোর্ট তার পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করা সঙ্গত হবে, ইদানিং প্রায়শ লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, সংগঠিত আলোচিত ঘটনার তদন্তকালীন সময়ে পুলিশ, র‌্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তারকৃত অভিযুক্তদের বিষয়ে এবং তদন্ত সম্পর্কে প্রেস ব্রিফিং করা হয়ে থাকে। গ্রেপ্তারকৃত সন্দেহভাজন বা অভিযুক্তদের কোনো নিয়মনীতি ছাড়াই গণমাধ্যমে সামনে হাজির করা হয়, যা অনেক প্রশ্নের উদ্রেক করে। যদিও এ বিষয়ে অত্র আদালতে একটি রায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।’

অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে তদন্ত বিষয়ে অতি উৎসাহ নিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য দিতে দেখা যায় উল্লেখ করে হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘একথা আমাদের সকলেকেই মনে রাখতে হবে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে অভিযোগ প্রমাণিত না হচ্ছে, ততক্ষণ বলা যাবে না সে অপরাধী বা অপরাধ করেছে। তদন্ত বা বিচার পর্যায়ে এমনভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করা উচিৎ নয় যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধী। সে কারণে মামলার তদন্ত পর্যায়ে তদন্তের অগ্রগতি বা গ্রেপ্তারকৃতদের বিষয়ে গণমাধ্যমে কতটুকু বিষয় প্রচার বা প্রকাশ করা যাবে সে বিষয়ে একটি নীতিমালা করা বাঞ্ছনীয়। এই নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রচারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ প্রদান করা হলো।’

গত ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। ওইদিন বিকেলে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও পাঁচ-ছয়জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

ওই মামলায় প্রথমে মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করা হয়। পরে এক আসামির স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদের পর মিন্নিকে গত ১৬ জুলাই আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। ১৭ জুলাই তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানালে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

পরে ১৮ জুলাই বরগুনার এসপি মো. মারুফ হোসেন নিজ কার্যালয়ে এক প্রেস কনফারেন্সে সাংবাদিকদের প্রশ্নর জবাবে বলেন, ‘মঙ্গলবার দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ ও বুধবার রিমান্ড মঞ্জুরের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রয়েছে মিন্নি। এরই মধ্যেই মিন্নি রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এ হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গেও মিন্নি যুক্ত ছিলেন।’

হাইকোর্ট গত ২০ আগস্ট আদালতের কাছে স্বীকারোক্তি দেওয়ার আগেই মিন্নি এ ঘটনায় জড়িত বলে স্বীকার করেছে উল্লেখ করে বরগুনার এসপির সংবাদ সম্মেলনের ব্যাপারে ব্যাখ্যা তলব করেন। একই সঙ্গে মিন্নির জামিন প্রশ্নে রুল জারি করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে সিডিসহ হাজির হতে বলেন।

গত বুধবার তদন্ত কর্মকর্তা হাজির হলে কেস ডকেটে (সিডিতে) মিন্নির বক্তব্য দেখে হাইকোর্ট পুলিশের কাছে রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির দোষ স্বীকার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, ‘এতেই কী প্রমাণ হয় মিন্নি পুলিশের কাছে দোষ স্বীকার করেছে? হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততা থাকলেও থাকতে পারে। নয়ন বন্ডের সঙ্গে তার বিয়ে হয়, সম্পর্ক ছিল এসব স্বীকার করেছে। এখানে যা লেখা আছে আর প্রেস কনফারেন্সে যা বলা হয়েছে, তার সঙ্গে মিল আছে? প্রেস কনফারেন্স থেকে যে কথাটা আগেই চলে আসলো তার গন্ধ এখানে আছে, তা কথায়?’ আদালত বলেন, ‘এ জন্যই আমরা সিডি দেখতে চেয়েছিলাম।’