শিল্প ও সাহিত্য ১২ নভেম্বর, ২০২০ ০৩:৫০

নরসিংদীতে নির্মিত হচ্ছে প্রথম তর্জনী ভাস্কর্য

আশিকুর রহমান

নরসিংদীতে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম তর্জনী ভাস্কর্য ‘মুক্তির ডাক’। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের অবিনাশী স্মারক দেশের ইতিহাসে প্রথম ও একমাত্র তর্জনী ভাস্কর্য এটি। ভাস্কর্যটির উচ্চতা ৪১ ফুট। এখন এর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।

আর এ তর্জনী ভাস্কর্যটি মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে জেলা শহরের প্রবেশ মুখে সাহে প্রতাপ মোড়ে নিমার্ণ করছে নরসিংদী পৌরসভা। এর সম্ভাব্য নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৪২ লাখ টাকা।

বিশ্বের ইতিহাসে হাত নিয়ে যত শিল্পকর্ম হয়েছে উচ্চতার দিক দিয়ে এটি তিনটির একটি। আর শুধু তর্জনীকে প্রতিপাদ্য করে নির্মাণ করা ভাস্কর্যের মধ্যে এটি সবচেয়ে উঁচু ভাস্কর্য বলে দাবি করছেন ভাস্কর্যটির ভাস্কর অলি মাহমুদ।

ভাস্কর অলি মাহমুদের বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে জাতির উদ্দেশে বজ্রকণ্ঠে স্বাধীনতার যে ডাক দিয়েছিলেন সেই বলিষ্ঠ তর্জনীর ইশারায়, সেই দিন সমগ্র বাঙালি জাতি জেগে উঠেছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য।

এ তর্জনী হলো প্রতিবাদের ভাষা। এই তার্জনীর নিচে দাঁড়িয়ে গভীরভাবে উপলব্ধি করলে স্বীয় জাতি, ঐতিহ্য আর গৌরবময় সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি নিজের মাঝে ভাসতে বাধ্য। চেতনায় দাঁড়িয়ে যাবে শরীরের পশম।

এ ভাস্কর্যটির বেদীর চারপাশে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬৬'র ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ঐতিহাসিক মুহূর্তগুলো টেরাকোটার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। নানা ধরনের অত্যাধুনিক অপটিক্যাল ফাইবার,হোয়াইট সিমেন্ট, পাথরসহ নানা দ্রব্যাদি দিয়ে নির্মিত হয়েছে ভাস্কর্যটি। আলোকসজ্জা, টাইলস, মার্বেল পাথরের বেদীর ওপরে আছে বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক তর্জনীটি। মূল বেদির চারপাশে নান্দনিক পানির ফোয়ারা নির্মাণ করা হয়েছে।

এছাড়াও দ্রুত গতিতে ল্যান্ডস্কেপের কাজ চলছে। এর মাঝে তর্জনী ভাস্কর্যটির দেখতে প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন। ভাস্কর অলি মাহমুদ আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতিকে ৭ মার্চে বজ্রকণ্ঠে স্বাধীনতার যে ইশারা দিয়েছিলেন সেই বিষয়টি নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার প্রয়াসে মূল বেদিতে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের গুরত্বপূর্ণ ও মূল ভাস্কর্যটি বঙ্গবন্ধুর তেজদীপ্ত তর্জনীকে প্রকাশ করেছেন।

এই তর্জনীর ইশারায় আমারা পেয়েছি স্বাধীন ভূখন্ড, একটি লাল সবুজের পতাকা। আজ থেকে ১৩ মাস আগে কাজ শুরু করেছিলাম। ইচ্ছে ছিল মুজিববর্ষের শুরুতই উদ্বোধন করার। কিন্তু মাঝখানে মহামারি করোনার কারণে কাজে স্থবিরতা আসে। এখনো সৌন্দর্য্যবর্ধনের কাজ কিছু অংশ বাকি আছে। আশা করি, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই পুরো কাজ শেষ করে নরসিংদীসহ পুরো দেশবাসীকে নান্দনিক এই ঐতিহাসিক শিল্পকর্মটি উপহার দিতে পারবো।

ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোক্তা নরসিংদী পৌরসভার মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার প্রয়াসেই নরসিংদী পৌরসভা থেকে ভাস্কর্যটি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করি, এ শিল্পকর্মটি একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।