আইন ও আদালত ৯ নভেম্বর, ২০২০ ০৬:২১

সুমন-ইশরাতকে জরিমানা, আইনজীবীদের প্রতীকী প্রতিবাদ

প্রতিবাদ হিসেবে জরিমানার দুইশত টাকা পরিশোধ করতে ১ টাকা করে দিচ্ছেন আইনজীবীরা।

প্রতিবাদ হিসেবে জরিমানার দুইশত টাকা পরিশোধ করতে ১ টাকা করে দিচ্ছেন আইনজীবীরা।

ডেস্ক রিপোর্ট

এক বিচারপতির ছেলের আইনজীবী সনদ নিয়ে রিট মামলায় ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসানকে জরিমানা করায় প্রতীকী প্রতিবাদ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের সাধারণ আইনজীবীরা। প্রতিবাদ হিসেবে জরিমানার দুশ টাকা পরিশোধ করতে ১ টাকা করে দিচ্ছেন তারা।

আজ সোমবার সকাল ১০টা থেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সভাপতির কক্ষের সামনে রাখা বক্সে সাধারণ আইনজীবীরা টাকা রেখে প্রতীকী প্রতিবাদ করেন। যে কবিতা ফেসবুকে শেয়ার করায় আদালত অবমাননার রুল জারি করা হয়েছে, বক্সের গায়ে সেই কবিতা সেঁটে দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবাদ করতে আসা ব্যারিস্টার অনিক আর হক রাইজিংবিডিকে বলেন, আমাদের দুজন আইনজীবীকে সুকুমার রায়ের কবিতা ও একটি সিনেমার ঘটনা ফেসবুকে লেখার জন্য কনটেম্পট ইস্যু করা হয়েছে এবং তাদেরকে একশ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট মহসিন কবির রকি বলেন, আমরা মনে করি এই জরিমানা দুই আইনজীবীকে করা হয়নি, সবাইকে করা হয়েছে। তাই দায়ভার আমরা নিজের কাঁধে নিয়েছি। 

সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নুসরাত জাহান বলেন, জাজমেন্ট নিয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, যারা এর পিটিশনার ছিল তারা ফেসবুকে একটা কবিতা শেয়ার করেছিল। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করা হয়েছে। এই মামলায় তাদেরকে জরিমানা করা হয়েছে। এটা খারাপ লেগেছে। ওদের সাপোর্ট করার জন্য প্রতীকী হিসেবে এক টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট কুমার দেবুল দে বলেন, আমরা দুই আইনজীবীরা পক্ষে আছি। মামলা করে যদি আদালতের সময় নষ্ট হয়, তাহলেতো মামলাই করা যাবে না।

অ্যাডভোকেট ফয়জুল্লাহ ফয়েজ বলেন, দুই আইনজীবীকে জরিমানা করায় আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি। কবিতাটি বক্সের সামনে সেঁটে দিয়েছি। আমরা মনে করি এ জরিমানা পার্টিকুলার কোনো আইনজীবীর না। এ জরিমানা সব আইনজীবীর।

এর আগে গতকাল রোববার আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ এক বিচারপতির ছেলে ব্যারিস্টার জুম্মন সিদ্দিকীকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের গেজেট প্রকাশ বৈধ বলে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসানকে একশত টাকা করে জরিমানা করেন আদালত। এ ধরনের রিট করে আদালতের সময় নষ্ট করার জন্য এ জরিমানা করা হয়।

বিচারপতি গোবিন্দ্র চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মাদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

এদিকে এ রিট মামলার শুনানির এক পর্যায়ে ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুলও জারি করেন আদালত।

গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর এক বিচারপতির ছেলেকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে জারি করা গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে গেজেট প্রকাশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। গত বছরের ২১ নভেম্বর আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির পরীক্ষায় বারবার অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরও হাইকোর্টের এক বিচারপতির ছেলেকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী ঘোষণার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করা হয়। আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও ইশরাত হাসান বাদী হয়ে এ রিট দায়ের করেন।

রিট আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল পরীক্ষায় কয়েকবার অংশ নিয়েও কৃতকার্য হতে পারেনি হাইকোর্টের এক বিচারপতির ছেলে মো. জুম্মান সিদ্দিকী। অথচ গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর জুম্মান সিদ্দিকীকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে গত বছরের ৩১ অক্টোবর গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।

তাই রিটে ওই গেজেট এবং ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ বার কাউন্সিল অর্ডারের ২১(১)(খ) ও ৩০(৩) ধারা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। জুম্মান সিদ্দিকীসহ বার কাউন্সিলের সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়।