আমাদের কাগজ ডেস্ক
আজকাল প্রায় সব ঋতুতেই কমবেশি মানুষ বেড়াতে যায়। তবে শীতকাল হলো ভ্রমণের মৌসুম। শীতের জন্য সবাই অপেক্ষা আর পরিকল্পনা করেন কোথায় কোথায় যাওয়া হবে। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনার অভাবে খেই হারিয়ে ফেলেন কেউ কেউ। আপনি যাতে খেই হারিয়ে না ফেলেন সে জন্য জেনে নিন এই শীতে কোথায় কোথায় বেড়াতে যাওয়া যায়।
পদ্মা নদী, রাজশাহী
এবার সারা বিশ্বে যে মহামারি এখনো চলছে, তাতে করে দেশের বাইরে সহসা কেউই যেতে চাইবেন না স্বাভাবিকভাবেই। তাই দেশের আনাচেকানাচে আর জনপ্রিয় কিছু টুরিস্ট স্পট হয়ে উঠতে পারে কয়েক দিনের ছুটি আর অবসর কাটানোর অন্যতম উপায়।
যেখানেই যান না কেন স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার কথা মাথায় রাখুন। সঙ্গে রাখুন একাধিক মাস্ক আর হ্যান্ড স্যানিটাইজার। বারবার পানির বোতল না কিনে বরং একটি বোতল ব্যবহার করুন এবং নির্দিষ্ট জায়গায় সেটি ফেলুন। তাতে পানির বোতলের জন্য হওয়া পরিবেশদূষণ কম হবে। সচেতন থাকুন স্থানীয় মানুষের স্পর্শকাতর অনুভূতি নিয়ে, স্থানীয় সংস্কৃতি আর পরিবেশ নিয়ে।
উত্তরবঙ্গ
যাঁরা শীত পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য এই ভ্রমণ মৌসুমের জনপ্রিয় গন্তব্য হলো উত্তরবঙ্গ। শীতের পুরোটা সময় উত্তরবঙ্গের যেকোনো জেলায় ঘুরে আসতে পারেন। তবে উত্তরের জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্যের অন্যতম পঞ্চগড় আর তেঁতুলিয়া।
আকাশ পরিষ্কার থাকলে তেঁতুলিয়া থেকে দেখতে পাওয়া যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। সে জন্য অবশ্য ঘন কুয়াশা শুরু হওয়ার আগেই অর্থাৎ নভেম্বরের শুরুতেই আপনাকে যেতে হবে সেখানে। এ ছাড়া পঞ্চগড়ে দেখা যাবে সমতলের চা–বাগান। আপনি যদি জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্যগুলো ছাড়াও ঘুরতে চান তাহলে ঘুরতে পারেন পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চল, ঘুরতে পারেন নতুন করে গড়ে ওঠা কমলা, মাল্টা–ড্রাগন ফলের বাগান। ঘুরতে পারবেন পঞ্চগড়ের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা ও স্থান।
রংপুর থেকে শুরু করে দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলায় রয়েছে প্রচুর বিখ্যাত ঐতিহাসিক স্থাপনা। দিনাজপুরে দেখতে পাবেন টেরাকোটায় সাজানো প্রাচীন মন্দির কান্তজিউ। সঙ্গে নয়াবাদের টেরাকোটাশোভিত মসজিদ। দেখা পাবেন কান্তজিউ মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা রাজাদের বাড়ি, দিনাজপুর শহরে। এ ছাড়া দিনাজপুর শহর থেকে ঠাকুরগাঁওয়ের দিকে যেতেই দেখা পাবেন উত্তরবঙ্গের একমাত্র শালবন শিঙারা ফরেস্টের।
যেতে পারেন বগুড়া বেহুলা লখিন্দরের বাসরঘর দেখতে। সঙ্গে মহাস্থানগড় আর প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধন নগরী। একটু দূরেই দেখতে পাবেন প্রাচীন পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার। এ ছাড়া রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় পাবেন দেশের বড় শিবমন্দিরের দেখা। সেখানে আরও পাবেন ছোট ছোট টেরাকোটাশোভিত মন্দির। একসঙ্গে এতগুলো টেরাকোটাসজ্জিত মন্দির আর কোথাও পাওয়া যাবে না।
ঘুরতে গিয়ে শুধু ঘুরে ঘুরে সব দেখলেই তো হয় না, খেতেও হয়। উত্তরবঙ্গের স্থানীয় খাবারগুলো চেখে দেখতে পারেন। কিংবা খেতে পারেন প্রায় প্রতিটি শহরে থাকা পুরোনো রেস্টুরেন্টগুলোতে।
সেন্ট মার্টিন
এমনিতে সেন্ট মার্টিন আমার দৃষ্টিতে আমাদের দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভ্রমণ গন্তব্য। তার ওপর সমুদ্র উত্তাল থাকে বলে শীতের সময় ছাড়া সাধারণ মানুষ সেখানে তেমন একটা যেতেও পারেন না। তাই শুধুমাত্র শীতের সময়ই হয়ে ওঠে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার আদর্শ সময়। শরৎ আর শীত এই দুই সময়ের সেন্ট মার্টিন উপভোগের আদর্শ সময়। তবে হ্যাঁ শীতে পরিবার নিয়ে বেড়ানোর শ্রেষ্ঠ গন্তব্য হলো সেন্ট মার্টিন।
আগে থেকে খোঁজখবর নিয়ে হোটেল-রিসোর্টে বুকিং দিয়ে পরিবার নিয়ে যাওয়াই ভালো।
কমলগঞ্জ
আমাদের অন্যতম প্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য সিলেটের কমলগঞ্জ। যে জায়গাকে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই শুধু চা–বাগান আর তার সবুজের, সমুদ্রের জন্য শ্রীমঙ্গল হিসেবে চেনে। শ্রীমঙ্গল বটে, তবে এটা সিলেটের কমলগঞ্জ উপজেলার মধ্যে পড়েছে। দিগন্ত বিস্তৃত চা–বাগান, সবুজের সমুদ্র, চা–পাতার ডগায় শিশির বিন্দুর অপরূপ সৌন্দর্যের পাশাপাশি কমলগঞ্জের রেমা কালেঙ্গা অভয়ারণ্যও হতে পারে রোমাঞ্চকর একটা ভ্রমণের অন্যতম স্পট।
এ ছাড়া পুরো সিলেটের বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে পারেন আপনি চাইলেই। এখন সিলেটের বিভিন্ন হোটেল ও রিসোর্টে বিভিন্ন অফার চলছে। চাইলে সেগুলোতে আগাম বুকিং দিয়ে যাওয়া যায় সিলেট ঘুরতে।
কক্সবাজার
সমুদ্র শহর আর পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের কথা তো না বললেই নয়। সমুদ্র যাঁদের প্রথম পছন্দ, আর একটু অবসর পেলেই ছুটে যেতে মন চায় উত্তাল সৈকতের রুপালি ঢেউয়ের কাছে, তাঁদের কাছে কক্সবাজার সব সময়ের প্রিয় গন্তব্য—শীত হোক বা গ্রীষ্মে। তবে শীতে কক্সবাজার যেন একটু বেশি জমজমাট হয়ে ওঠে, যেটা এই শীতে আরও বেশি করে হতে পারে ঘরবন্দী মানুষগুলোর একটু উন্মুক্ত নিশ্বাস নেওয়ার ইচ্ছায়।
সাজেক
কক্সবাজারের পরই দেশের দ্বিতীয় জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য এখন খাগড়াছড়ির সাজেক উপত্যকা। বিশেষ করে যাঁরা পাহাড় পছন্দ করেন, পাহাড়ের সঙ্গে মেঘ কুয়াশার আলিঙ্গন, ঘরের জানালা, বারান্দায় মেঘেদের আনাগোনা উপভোগ করতে চান, আর ভালোবাসার পাহাড়ে একটু একটু হাঁটাহাঁটি, তাঁদের জন্য এই শীতে সাজেক বসবে তার সবটুকু সৌন্দর্য নিয়ে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। যদিও এখানে যেতে হয় রাঙামাটির দীঘিনালা হয়ে, তাই অনেকেই সাজেককে রাঙামাটির মনে করে ভুল করে থাকেন।
কুয়াকাটা
কক্সবাজারের ভিড় এড়িয়ে, লাখো মানুষের কোলাহল থেকে নিজেকে মুক্ত করে যাঁরা সমুদ্রের নীরব রূপ উপভোগ করতে ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য আদর্শ হতে পারে নীরব সৈকত পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। যেখানে বসে একই জায়গায়, দিনের দুই ভাগে উপভোগ করা যায় সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত। সেই সঙ্গে সুন্দরবনের কিছুটা আবহ হতে পারে বাড়তি পাওনা।
সুন্দরবন
অরণ্যপ্রিয় মানুষের কাছে আসছে শীতে সবচেয়ে প্রার্থিত ভ্রমণ গন্তব্য হতে পারে আমাদের দেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ, গভীর অরণ্য আর লোনাজলের মাছের স্বাদ নিতে পৃথিবীর অন্যতম দুর্লভ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। বাগেরহাট, খুলনা আর সাতক্ষীরা তিনটি জেলার বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে যার অবস্থান, যাকে উপভোগ করা যেতে পারে নানাভাবে, নানা জায়গা থেকে। দূর থেকে দেখে, কাছে গিয়ে আবার নদীতে ভেসে ভেসেও।
বান্দরবান
আমার মতো যাঁদের কাছে সকল ভ্রমণ পরিকল্পনাই পাহাড়ের কাছে এসে হার মেনে যায়, তাঁদের কাছে সেন্ট মার্টিনের পরই বান্দরবান হতে পারে আসছে শীতের সেরা ভ্রমণ গন্তব্য। বান্দরবান, যাকে নিয়ে বলা বা লেখার কোনো শেষ নেই, হতে পারে না। বাইকে করে, জিপে চেপে, অল্প ট্র্যাক করে, বড় বড় ট্র্যাক প্ল্যান করে, দল বেঁধে তিন দিন থেকে তিন সপ্তাহের জন্য পরিকল্পনা করা যায়, শুধু এক বান্দরবানের বিভিন্ন পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছানোর জন্য। ভালো গাইড, প্রশাসনের অনুমোদন, আর্মি আর স্থানীয় আদিবাসীদের সহযোগিতায় নানা রকম উপায়ে অল্প বা বেশি দিনের প্ল্যান করে উপভোগ করা যেতে পারে বান্দরবানের রং, রূপ আর গন্ধ! আসছে শীতে।