সারাদেশ ১৯ অক্টোবর, ২০২০ ০৮:৪৫

অকার্যকর মশা মারার ওষুধ ফেরত দিয়েছে ডিএসসিসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফিল্ড পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া এসিআই ফর্মুলেশন লিমিটেডের সরবরাহকৃত এক লাখ লিটার ওষুধ ফেরত দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। 

দীর্ঘ ১০ মাস ধরে রি-টেন্ডার করে চূড়ান্ত করা মশা মারার ওই ওষুধগুলো ডিএসসিসির ফিল্ড টেস্টে উত্তীর্ণ হয়নি। ফলে সংস্থার মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের নির্দেশে ওষুধগুলো ফেরত দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে এক সংবাদ প্রকাশ হয়ে ছিলো গত ৯ অক্টোবর। 

গত বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের পর বিদেশ থেকে সরাসরি ওষুধ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে। এরপর বিদেশ থেকে ম্যালাথিউন ৫% আমদানি করে ডিএসসিসি। কিন্তু আমদানিকৃত ওষুধটি সরাসরি ব্যবহার উপযোগী নয়। এর সঙ্গে ৯৫ শতাংশ ডিজেল ও ২৫ থেকে ৫০ এমএল সাইট্রোনেলা মিশিয়ে ছিটাতে হয়। এজন্য ডিজেল এবং ওষুধের ফর্মুলেশন (মিশ্রণ) সঠিক হতে হয়। আর এই কাজটি করার জন্য সিটি করপোরেশনের নিজস্ব কোনও প্রযুক্তি নেই। এজন্য দ্বিতীয় পক্ষ দিয়ে কাজ করাতে হয় নগর ভবনকে।

ডিএসসিসির সূত্র জানিয়েছে, উড়ন্ত মশা মারার ওষুধ ফর্মুলেশন করতে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ৬ লাখ ৪০ হাজার লিটার অ্যাডাল্টিসাইডিং ওষুধের জন্য টেন্ডার আহ্বান করে ডিএসসিসি। তাতে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১২ কোটি ৪১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু তিন দফা টেন্ডার করেও প্রক্রিয়াটি চূড়ান্ত করা যায়নি। পরে চতুর্থ দফায় এর টেন্ডার চূড়ান্ত করে ডিএসসিসি। এতে সর্বনিম্ন দরদাতা হয় এসিআই ফর্মুলেশন কোম্পানি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি লিটার ওষুধ ১২৯ টাকা দর দিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা হয়। ওই ওষুধ সরবরাহ করার জন্য কার্যাদেশ পাওয়ার পর সম্প্রতি ডিএসসিসিকে এক লাখ লিটার ওষুধ সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু ডিএসসিসির নিজস্ব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি এসিআই ফর্মুলেশনের সরবরাহ করা এই মশার ওষুধ। পরে ওষুধের চালানটি ফেরত দেওয়া হয়।

ডিএসসিসির মুখপাত্র ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের বলেন, ‘এসিআই ফর্মুলেশন থেকে আমরা যে ওষুধ সংগ্রহ করছি তার প্রথম চালান আমাদের ফিল্ড পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়নি। পরে মেয়রের নির্দেশে সেই ওষুধ আমরা ফেরত দিয়েছি। এরপর দ্বিতীয় চালান আসার পর সেটার পরীক্ষা করা হয়। সেই চালানটির নমুনা আমাদের ফিল্ড পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আমরা সেটা আইইডিসিআর ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ে পাঠাই। সেখানেও ওষুধের চালানটি উত্তীর্ণ হয়। পরে সেই চালান গ্রহণ করা হয়।

সিটি করপোরেশনের ভান্ডার বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, তারা যখন কোনও ওষুধ কেনার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন সেই ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করে ফিল্ড টেস্ট করা হয়। এজন্য সংস্থাটি এক বর্গফুট আয়তনের তিনটি খাঁচার মধ্যে ৫০ বা ১০০টি করে মশা বন্দি করে থাকে। এরপর তিন ফুট দূর থেকে ওই ওষুধ তৈরি করে (রেডি ফর ইউজ) তার চারদিক থেকে ফগিং করা হয়। ৩০ মিনিট পর সেই খাঁচাগুলোতে কী পরিমাণ মশা মরেছে বা জ্ঞান হারিয়েছে সেটি দেখা হয়। এই ফল গণনার পর আবারও ২৪ ঘণ্টা মশাগুলোকে আবদ্ধ করে রাখা হয়। তাতে যদি ৮০ ভাগ মশা মরে তাহলে ধরে নেওয়া হয় ওই ওষুধ কার্যকর। কিন্তু এসিআই ফর্মুলেশন কোম্পানির সরবরাহকৃত ওষুধের ফিল্ড পরীক্ষার তিনটি নমুনার মধ্যে একটিতে মাত্র ৩৫ শতাংশ মশা মরেছে। ফলে প্রাথমিক এই পরীক্ষায় ওষুধগুলো উত্তীর্ণ হয়নি বলে জানিয়েছে ডিএসসিসি।