আন্তর্জাতিক ৬ অক্টোবর, ২০২০ ০৯:২৯

ভারতে বেড়েই চলেছে ধর্ষণ

ধর্ষণ নিয়ে চলছে তুলকালাম। পাশের দেশ ভারতেও এই সংখ্যা কম নয়। দেশটিতে প্রতিদিন গড়ে ৮৭টা ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ২০১৯ সালে মোট ৩২ হাজার ৩৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো বা এনসিআরবি।

এই সরকারি সংস্থা ভারতের সব ধরণের অপরাধের হিসেব রাখে। সেই রিপোর্ট থেকে উঠে এসেছে ভারতে ধর্ষণ ও অপরাধের ভয়াবহ চিত্র।

এছাড়া ভারতে বিভিন্ন ধরণের নারী-নির্যাতনের সংখ্যা বেড়েছে। দেশটিতে গত বছর মোট চার লাখ পাঁচ হাজার ৮৬১ জন নারী বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ২০১৮ সালে এই সংখ্যাটা ছিল তিন লাখ ৭৮ হাজার ২৩৬ জন। হিসেব বলছে নারী-নির্যাতন বেড়েছে।

ধর্ষণের সংখ্যার নিরিখে ভারতে এক নম্বর অবস্থান রাজস্থান রাজ্যের। সেখানে ২০১৯ সালে পাঁচ হাজার ৯৯৭ জনকে ধর্ষণ করা হয়েছে। উত্তর প্রদেশে ধর্ষিতা হয়েছেন তিন হাজার ৬৫ জন। তিন নম্বরে মধ্যপ্রদেশ। সেখানে দুই হাজার ৪৮৫ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তবে মেয়েদের শ্লীলতাহানির চেষ্টায় এক নম্বরে উত্তর প্রদেশ।

ভারতের রাজধানী দিল্লির অবস্থাও বেশ শোচনীয়। এখানে প্রতিদিন তিনজন মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়। ২০১৯ সালে দুই হাজার ৩৫৫ জন নারীর শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। যৌন নিগ্রহের শিকার ৪৫৬ জন নারী। পরিবারের সদস্যদের হাতে ধর্ষিতা হয়েছেন ১২৫ জন নারী।

ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে ৮ জনকে। আর বিয়েতে পন সংক্রান্ত বিবাদের জেরে মারা হয়েছে ১১৬ জন নারীকে। সব মিলিয়ে দিল্লিতে ২০১৮ সালের তুলনায় অপরাধ বেড়েছে ২০ শতাংশ।

এছাড়া ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনাও বেশ বেড়েছে। ২০১৯ সালে মোট ২৭৮ জন মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। মহারাষ্ট্রে বেশি এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। মোট ৪৭ জন নারীকে হত্যার পর খুন করা হয়েছে সেখানে। মধ্যপ্রদেশে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে ৩৭টি এবং উত্তর প্রদেশে ৩৪টি।

দলিত নারীদের নির্যাতনও বেশ বেড়েছে। দলিত নারীদের ধর্ষণ, যৌন নিগ্রহ, শ্লীলতাহানি, অত্যাচারের ঘটনায় এক নম্বরে উত্তর প্রদেশ। সেখানে ২০১৯ সালে ১১ হাজার ৮২৯ জন দলিত নারী নিগৃহীত ও অত্যাচারিত হয়েছেন।

আদিবাসী মেয়েদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের ক্ষেত্রে অবশ্য এক নম্বরে মধ্য প্রদেশ। ২০১৮ সালের তুলনায় দলিত নারীদের ওপর অত্যাচার বেড়েছে সাত শতাংশ ও আদিবাসীদের ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশ।

এছাড়া ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে ও অক্টোবরের শুরুতে তিনজন দলিত মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে উত্তর প্রদেশে। ইতোমধ্যে হাথরাসের ঘটনা নিয়ে উত্তাল ভারত। পরিবারের সঙ্গে মাঠে ঘাস কাটতে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার দলিত তরুণীর মৃত্যু হয় প্রায় দুই সপ্তাহ পর। 

 

অন্যদিকে এনসিআরবি তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে ৯৪ শতাংশ নারীকে চেনাজানা লোকের হাতে ধর্ষিতা হতে হয়েছিল। তারা কেউ পরিবারের সদস্য, বন্ধু, প্রতিবেশী, চাকরিক্ষেত্রে বস, মালিক, সহকর্মী বা সামাজিক মাধ্যম সূত্রে চেনা।

আর এসব ঘর্ষণের ঘটনায় প্রতিবাদ করতে গেলেও বাধার শিকার হচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। হাথরাসের ধর্ষণের প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ শুরু হয়। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, উত্তর প্রদেশে প্রতিবাদ করতে দেয়া হচ্ছে না। হাথরাসে কাউকে যেতে দেয়া হচ্ছে না।

সমাজবাদী পার্টির কর্মীদের আটকে দেয়া হয়েছিল হাথরাসে। রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে যেতে দেয়া হয়নি। 

উল্লেখ্য, ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো তৈরি হয় ১৯৮৬ সালে। তবে ১৯৯৫ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত জেলাস্তরে ক্রাইম অ্যান্ড ক্রিমিনাল ইনফরমেশন ব্যবস্থা তৈরি হয়।

তারা বছরে তিনটি রিপোর্ট তৈরি করে অপরাধ চিত্র, আত্মহত্যা ও দুর্ঘটনায় মৃত্যু এবং কারাগার নিয়ে। রাজ্য সরকারের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে রিপোর্ট তৈরি করে এই প্রতিষ্ঠান। 

                                                                                                                                                                সূত্র- ডিডব্লিউ