জাতীয় ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০১:০০

মায়ের অপেক্ষায় ছোট্ট তুবা

ফাহিমা আক্তার সুমি

ছোট্ট তুবা (৫) জানে তার মা বিদেশ থাকে। মাস দুয়েক পরে তার কাছে ফিরে আসবে। সঙ্গে নিয়ে আসবে অনেক খেলনা, চকলেট, পুতুল ও নতুন নতুন জামা। কিন্তু তুবার অপেক্ষা যেন শেষ হয় না। মাসের পর মাস চলে যায়, মা আসে না। তাই কিছুক্ষণ পরপর মার ছবিগুলো অভিমান করে মেঝেতে ছুড়ে ফেলে। আবার এ্যালবাম থেকে মায়ের ছবিগুলো বের করে বুকে জড়িয়ে রাখে। চোখে ছল ছল পানি নিয়ে বলে, মা কখন ফিরে আসবে?

তুবার পুরো নাম তাসমিন মাহিরা। মা তাসলিমা বেগম রেনু। ২০১৯ সালের ২০ জুলাই উত্তর বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহে রেনুকে পিটিয়ে মেরে ফেলে বিক্ষুব্ধ লোকজন। তুবার এখনো তার মায়ের মারা যাওয়ার বিষয়ে কিছুই জানে না। মায়ের
স্মৃতি নিয়ে খালা নাজমুন নাহারের ঘরেই বড় হচ্ছে। তবে মায়ের ফিরে আসার কথা মনে ধারণ করলেও বুকে বেঁধে রেখেছে ভারি পাথর। ফলে প্রতিদিন তার অভিমানের ঝুড়িটা যেন আরও ভারি হচ্ছে। তার মুখের ছাপ আর আচরণের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেয় সবাইকে। কিন্তু মুখ ফুটে কখনও প্রকাশ করেনা। কয়েক বছর আগে রেনুর সঙ্গে তার স্বামীর ছাড়াছাড়ি হয়। এরপর তুবা ও বড় ছেলে তাহসিন আল মাহিরকে (১২) নিয়ে রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় ভাড়া থাকতেন তিনি। এখন মা ছাড়া পৃথিবীতে সারাদিন বাসায় দুই ভাই-বোনের খেলাধুলা, খুনসুটি করে তারা। তুবা অভিমান করে, রাগ ভাঙায় তাহসিন।

আজ রোববার বাড্ডায় তুবার খালার বাসায় আমাদের কাগজের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে তাদের কথা হয়। তুবা বলে, 'আমি বড়ো হয়ে পুলিশ হতে চাই। পরক্ষণে আবার বলেন, ব্যারিস্টার হতে চাই। গল্পের ছলে তুবা বলে, সারাদিন বাসায় খেলাধুলা
করি। ভাইয়ের সঙ্গে গল্প করি। আম্মুকে আমার খুব মনে পরে। আম্মুর জন্য খারাপ লাগে। আম্মু দুইমাস পরে বিদেশ থেকে বাসায় আসবে। আমার জন্য পুতুল,চকলেট নতুন জামা নিয়ে আসবে। এখন আমার স্কুল বন্ধ। স্কুল খুললে
স্কুলে যাবো। আম্মুর সঙ্গে আমার খুব কথা বলতে ইচ্ছে করে।'

তাহসিন আল-মাহির (১২) বলেন, 'স্কুল বন্ধ থাকায় সারাদিন পড়াশোনা ও খেলাধুলা করে আমাদের সময় কাটে। আম্মুর কথা মনে পড়ে। আম্মুর জন্য কষ্ট হয়। আমি বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাই। মানুষের সেবা করতে চাই। যেন আমার মায়ের মত এমন অবস্থা আর কারও না হয়।'

রেনু বেগমের বোন নাজমুনাহার নাজমা বলেন,' বাচ্চাদের সময় কাটে পড়াশোনা ও খেলাধুলায়। যেহেতু করোনার সময় স্কুল বন্ধ। মাহির প্রতিনিয়তো তাদের মায়ের কথা বলে। মা কি করতো। স্কুলে নিয়ে যেত। আবার কখনও মায়ের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার গল্প বলে। তুবা তো ছোট সে মাকে মিস করে কিন্তু প্রকাশ করে না। মা ছাড়া দুইটা বাচ্চাকে সামলানো অনেক কষ্ট। এদেরকে বড় করা খুব চ্যালেন্জের ব্যাপার।'

গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে রেনু হত্যার ঘটনায় অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল হক। এই মামলায় ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে তাদের ৬ জনই জামিনে আছেন।

তুবার খালা নাজমুনাহার বলেন, আসামিরা জামিনে থাকায় আমরা স্বস্তি পাচ্ছি না। কারণ, যারা জামিন পেয়েছে মূল আসামি তারাই। সেখান থেকে তারা কিভাবে ছাড়া পায়? আমরা এখনও মামলার বিষয়ে হতাশাগ্রস্থ। আমরা যেভাবে চিন্তা ভাবনা করেছিলাম সেভাবে মনোভুত হয়নি। সেভাবে আগাচ্ছে না। তবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারা যেন সামনের দিকে এভাবে এগিয়ে নিয়ে যায়। এই বিচার যদি না হয় তাহলে দেশে এমন ঘটনা আরও ঘটবে। এই ঘটনার সঠিক বিচার হোক।