আন্তর্জাতিক ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০৪:৪৭

স্বর্ণ নিয়ে নানান ছল

দফায় দফায় স্বর্নের দাম উঠা নামার পর এবার পতনের কবলে পরেছে বাজার দর। তবে বিশ্ববাজারে স্বর্নের দাম কমায় দেশের বাজারেও এই ধাতুর দাম কমানো হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ডলার শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এবং ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সুদের হার কমানোয় পতনের কারন।

 

তারা আরও বলেন, স্বর্নের ও ডলারের এই পতনের পেছনে চীনের হাত ছিল। এছাড়াও নির্বাচনের আগে ডলারকে শক্তিশালী অবস্থানে ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় আছেন ট্রাম্প। সেইসাথে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সুদের হার কমিয়েছে। এছাড়াও স্বর্নের দাম বাড়াতে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী স্বর্ণ বিক্রি করে মুনাফার একটি অংশ শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করছে। তাই বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমেছে।

 

 

বিশেষজ্ঞরা মতে, স্বর্ণের বাজার এখন অনেকটাই জুয়ার আখড়ায় পরিণত হয়েছে। স্বর্ণের দাম কখন কোন দিকে যাচ্ছে, কোনো ধারণা করা যাচ্ছে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্বর্ণের প্রকৃত ব্যবসায়ীরা। একদিকে দেশের বাজারে স্বর্ণের অলঙ্কারের ক্রেতা নেই, অন্যদিকে বাড়তি দামে স্বর্ণ কেনার পর দাম কমায় লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

 

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রকোপ শুরু হলে চলতি বছরের শুরু থেকে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার প্রবণতা শুরু হয়। দফায় দফায় দাম বেড়ে আগস্টের শুরুতে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম রেকর্ড দুই হাজার ৭৫ ডলারে ওঠে।

 

বিশ্ববাজারে অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ আগস্ট দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়। ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম রেকর্ড ৭৭ হাজার ২১৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ৭৪ হাজার ৬৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬৫ হাজার ৩১৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ৫৪ হাজার ৯৯৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

 

তবে এই দাম বাড়ার পর ৭ আগস্ট পতনের মুখে পড়ে স্বর্ণ। ১১ আগস্ট একদিনে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১১২ ডলার পর্যন্ত কমে যায়। এরপরও চলতে থাকে স্বর্ণের দরপতন। ফলে বাংলাদেশেও কয়েক দফায় স্বর্ণের দাম কমানো হয়। অবশ্য বিশ্ববাজারে দাম না বাড়ার পরও চলতি মাসে দু’দফা দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়।

 

 

এর মধ্যে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দরপতন চলতে থাকে। দফায় দফায় দাম কমে এখন প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১৮৬৮ ডলারে নেমে এসেছে। বিশ্ববাজারে দরপতনের গতকাল দেশের বাজারে আবার স্বর্ণের দাম কমিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।

 

নতুন দাম অনুযায়ী, ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৪৪৯ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৪ হাজার ৮ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ভরি ৭০ হাজার ৮৫৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ভরি ৬২ হাজার ১১১ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ৫১ হাজার ৭৮৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

বিশ্ববাজার ও দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমার কারণ হিসেবে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সুদের হার কমিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগে ট্রাম্প ডলার শক্তিশালী করার চেষ্টা করছেন। বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমার এটিই অন্যতম কারণ। আর বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমার কারণে বাংলাদেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানো হয়েছে।’

 

তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে আপডেট থাকতে চাই। যদি বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম আরও কমে, তবে আমরা দাম কমাবো। তবে এখন (শুক্রবার দুপুর ১২টায়) বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১৮৬৮ ডলারে আছে। এই দাম থাকলে নতুন করে আমাদের দাম বাড়ানো বা কমানোর প্রয়োজন হবে না।’

 

স্বর্ণের দামের বিষয়ে ভেনাস জুয়েলার্সের কর্ণধার ও স্বর্ণশিল্পী সমিতির সভাপতি গঙ্গা চরণ মালাকার বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের বাজারে স্বর্ণের যে দাম আছে, তা বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমার কারণে আমাদের বাজারেও স্বর্ণের দাম কমানো হয়েছে। এতে আমরা স্বর্ণের অলঙ্কার ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছি। কারণ বেশি দামে স্বর্ণ কিনে এখন আমাদের কম দামে স্বর্ণ বিক্রি করতে হবে।’

 

স্বর্ণের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিক্রি একেবারে বন্ধ হয়ে যায় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বর্ণের অলঙ্কার যারা কিনেন তারা দোকানে আসছেন না। উল্টো দাম বাড়ার কারণে মানুষ আমাদের কাছে স্বর্ণ বিক্রি করে দিয়েছে। এখন স্বর্ণের দাম কমলেও আগের মতো ক্রেতা নেই। অথচ প্রতিমাসে কর্মীদের বেতন পরিশোধ করতে হচ্ছে। দোকান ভাড়া দিতে হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে আমরা বেকায়দায় আছি।’

 

‘করোনার শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক শেয়ারবাজারে দরপতনের কারণে শেয়ারবাজারের গেম্বলাররা (জুয়াড়ি) স্বর্ণ কিনে মজুত করে। এদের একটি অংশ বাড়তি দামে স্বর্ণ বিক্রির চাপ বাড়িয়েছে। স্বর্ণের দাম কমার এটি একটি কারণ বলে জানান, গঙ্গা চরণ মালাকার।