অপরাধ ও দুর্নীতি ২৬ নভেম্বর, ২০১৯ ০৬:৫৩

সেই জাকিরের ইচ্ছা ছিল ৭০০ নারীকে বিয়ে করা!

ডেস্ক রিপোর্ট ।।

প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ২৮৬ নারীকে বিয়ে করা লালমনিরহাটের যুবক জাকির হোসেনের ৭০০ বিয়ের করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর তার সেই বাসনা নাকি থমকে গেছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্যই দিয়েছেন জাকির হোসেন।

গত বুধবার (২০ নভেম্বর) তেজগাঁও থানায় এক ছাত্রীর ধর্ষণের মামলায় গ্রেফতার হন জাকির।

তেজগাঁও থানার পুলিশ জানায়, জাকির বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন সময় নিজেকে অবিবাহিত এবং সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতেন।

তাদের মধ্যে অনেককে তিনি বিভিন্ন সময় বিয়ে করেন। বিয়ের পর জাকির নববধূর বাসায় থাকতেন এবং কৌশলে তার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেন।

এসব বিয়ের খবর তিনি কোনো স্ত্রীকে জানতে দিতেন না। সবারই ব্যক্তিগত ভিডিও ধারণ করতেন।

কেউ প্রতিবাদ করলে ওই সব ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখাতেন। জাকির ১৪ বছর আগে অর্থাৎ ২১ বছর বয়সে (২০০৫ সাল) প্রথম বিয়ে করেন। এরপর প্রতিবছর তিনি একটি করে বিয়ে করেন।

জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমাজের উচ্চবিত্ত, আত্মনির্ভরশীল, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী নারীদেরকে টার্গেট করতেন প্রতারক জাকির হোসেন।

এরপর ভুয়া নাম দিয়ে ফেসবুক একাউন্ট খুলে তাদের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাতেন। এক্ষেত্রে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে নিজেকে বেসরকারি অফিসের বড় কর্মকর্তা, আবার কখনো বড় ব্যবসায়ীর মতো মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রলুব্ধ করতেন।

কখনও নিজের এসব মিথ্যা তথ্য সম্বলিত ফেসবুকে পাত্রী চাই বিজ্ঞাপন দিতেন। এসব দেখে অনেক নারী নিজে থেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। আবার কোনো টার্গেট নারী তার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট না করলে তার মেসেঞ্জারে মেসেজ দিতেন।

বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার আগে নারীদের বলতেন তার ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা প্লট ও ফ্ল্যাট আছে। এরপর যখন বুঝতে পারতেন নারীরা তার প্রতি পুরো দুর্বল হয়ে গেছেন তখন কৌশলে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসতেন।

একপর্যায়ে ভুয়া কাজী দিয়ে মিথ্যা কাবিননামায় বিয়ে করতেন। কিন্তু বিয়ের পরই তার আসল চেহারা বেরিয়ে আসতো। একের পর এক ফন্দি এঁটে নববধূ ও তার পরিবারের কাছ থেকে অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নিতেন।

পুলিশ জানায়, প্রতারণার ফাঁদ পেতে তরুণীদের সর্বস্ব লুটে নিতে জাকির হোসেনের রয়েছে এক সিন্ডিকেট চক্র। সংঘবদ্ধ ওই চক্রে রয়েছে নকল কাজি ও মৌলভি। এ ছাড়া চক্রের কিছু নারী-পুরুষ নিজের মা-বাবা ও ভাইবোন বানিয়ে জাকির তরুণীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেন। এভাবে বিয়ের নামে গত দুই বছরে জাকির ২২ ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী নারীকে ধর্ষণ করেছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তেজগাঁও থানার এসআই তৌফিক আহমেদ বলেন, গত বছর জাকির এক তরুণীকে বিয়ে করার কথা বলে তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুললেও তাকে বিয়ে করেননি। এ ঘটনায় ওই তরুণী মিরপুর থানায় ধর্ষণের মামলা করলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তখন তার বহু বিয়ের বিষয়টি জানাজানি হয়।

তিনি আরও বলেন, গত বছরের জুনে জাকির কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে আরও তিন নারীকে বিয়ে করেন। জাকির সর্বশেষ ফার্মগেটের এক নারীকে বিয়ে করার কথা বলে তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়লেও তাকে বিয়ে করেননি।

এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার ওই নারী তেজগাঁও থানায় জাকিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করলে তাকে গ্রেফতার করে দুই দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। এতগুলো বিয়ে করার সহযোগিতার করার অভিযোগে জাকিরের প্রথম স্ত্রীকেও গ্রেফতার করে পুলিশ।