সারাদেশ ২৪ নভেম্বর, ২০১৯ ১১:৫৫

রাজধানীতে নারী পাচারকারী চক্রের ৬ সদস্য গ্রেফতার, উদ্ধার চার তরুণী

ডেস্ক রিপোর্ট ।।

নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার খিলগাঁওয়ে অভিযান চালিয়ে আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার ও চার তরুণীকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব। জব্দ করা হয়েছে ৭০টি পাসপোর্ট, ২০০টি পাসপোর্টের ফটোকপি, ৫০টি বিমানের টিকেট, ৫০টি ভিসার ফটোকপি, নগদ ১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা টাকা, ১টি সিপিইউ, ১টি মনিটর ও ১টি বিলাসবহুল মাইক্রোবাস। চক্রের সদস্যরা গত এক বছরে ৭২৯ জনকে বিদেশে পাচার করেছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) দিবাগত রাতে রূপগঞ্জের তারাব মোড়ের শাহ চন্দপুরী রেষ্টুরেন্ট ও ঢাকার খিলগাঁওয়ের গোড়ান এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১১ এর সদস্যরা।

সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে রবিবার (২৪ নভেম্বর) র‌্যাব-১১ এর প্রধান কার্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার মো. রেজাউল হক এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- র‌্যাব-১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলেপ উদ্দিন ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মশিউর রহমান।

গ্রেফতাকৃরা হলেন- ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার মো. অনিক হোসেন (৩১), নোয়াখালীর চাটখিলের মো. মনির হোসেন ওরফে সোহাগ (৩০), নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মো. আক্তার হোসেন (৪০), চাঁদপুরের কচুয়ার মো. আফতাউল ইসলাম ওরফে পারভেজ (৩৭), কুমিল্লার চান্দিনার আ. হান্নান (৫২) ও মাদারীপুরের সদরের মো. আকাশ (২৯)। এদের মধ্যে ৫ জনকে রূপগঞ্জ ও আকাশকে ঢাকার খিলগাঁওয়ের গোড়ান থেকে গ্রেফতার করা হয়।

স্কোয়াড্রন লিডার মো. রেজাউল হক জানান, গ্রেফাতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, তারা একটি সংঘবদ্ধ আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। ১৫ থেকে ২৫ বছরের সুন্দরী মেয়েদের উচ্চ বেতনে বিদেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করে। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে বিপুল সংখ্যক এজেন্ট, পাসপোর্ট দালাল, ড্যান্স বারের মালিক, ট্রাভেল এজেন্সি ও অসাধু ব্যক্তিরা যুক্ত রয়েছে।

সিন্ডিকেটের এজেন্টরা প্রাথমিকভাবে নিম্নবিক্ত পরিবার, পোশাক শিল্প ও ব্রোকেন ফ্যামিলির সুন্দরী তরুণীদের টার্গেট করে থাকে। এর পর তাদের ছবি বিদেশে অবস্থিত ড্যান্স বারের মালিকদের কাছে পাঠানো হয়। ছবি দেখে পছন্দ হলে ড্যান্স বারের মালিক অথবা তার প্রতিনিধি সরাসরি তাদের (তরুণী) নির্বাচনের উদ্দেশ্যে ঢাকা অথবা আশপাশের কোনো রেষ্টুরেন্ট, হোটেল অথবা বিলাসবহুল মাইক্রোবাসে লং ড্রাইভের নামে সাক্ষাৎ করে। এরপর সিন্ডিকেট তাদের নিজস্ব দালালের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিতদের পাসপোর্ট তৈরি করে। পরবর্তীতে ট্রাভেল এজেন্সির মালিকদের মাধ্যমে নথিপত্র ম্যানেজ করে স্বল্প সময়ের মধ্যে এসব তরুণীকে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়।

তিনি আরও জানান, জিজ্ঞাবাসাদে গ্রেফতারকৃতরা আরও জানিয়েছে, এসব তরুণী বিদেশে পা রাখার পরপরই বিমানবন্দর থেকে সিন্ডিকেটের সদস্যরা রিসিভ করে হোটেলে নিয়ে গৃহবন্দি করে রাখে। তারা কোনো অবস্থাতেই নিজের ইচ্ছায় হোটেল তথা ড্যান্স বারের বাইরে যেতে পারে না। প্রথমে কেউ স্বেচ্ছায় অসামাজিক কাজে রাজি না হলে নেশাজাতীয় দ্রব্য জোরপূর্বক প্রয়োগ করা হয়। এভাবে দিনের পর পর তাদের ওপর চলতে থাকে পৈশাচিক নির্যাতন। নির্দিষ্ট কোনো তরুণীকে পছন্দ হলে ড্যান্স বারের মালিকের কাছ থেকে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে তাকে কয়েক দিনের জন্য ভাড়া নিয়ে যায় খদ্দেররা।

এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, এই মানব পাচার চক্রের উপর দীর্ঘদিন ধরে তারা নজর রাখছিলেন। পরে শনিবার দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।