জাতীয় ২২ নভেম্বর, ২০১৯ ০৩:৫৬

বঙ্গবন্ধুর নাতনীর নামে মিল দেখে চুক্তি বাতিল খালেদার, বছরে ৩০ মিলিয়ন ডলার থেকে বঞ্চিত দেশ!

ডেস্ক রিপোর্ট ।।

বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে ২০০২ সালের জানুয়ারি মাস। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক চলছে। খালেদা সাধারণত মন্ত্রিসভার বৈঠকে চুপচাপ বসে থাকেন। আলোচ্য বিষয়গুলো উত্থাপিত হয়, কিছু আলোচনা হয়। তিনি শুধু শুনে যান। তার নীরবতাই সম্মতির লক্ষণ।

জানুয়ারি মাসের ক্যাবিনেটে এলো শিক্ষকদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণের প্রস্তাব। নেদারল্যান্ড সরকারের আর্থিক অনুদানে বাংলাদেশে ৭ হাজার ৭০০ শিক্ষককে আইটি প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এজন্য নেদারল্যান্ডের টিউলিপ কম্পিউটার বাংলাদেশে ১১ হাজার কম্পিউটার এবং প্রশিক্ষণ সহায়তা দেবে। এই প্রকল্পের ব্যয় হিসেবে ১০ মিলিয়ন পাউন্ড দেবে ডাচ সরকার।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ড সরকারের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয় ২০০০ সালে, অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর ডাচ সরকার টিউলিপ কম্পিউটারকে কম্পিউটার সরবরাহ ও প্রশিক্ষণের কাজ দেয়। সে অনুযায়ী কাজও শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। সরকার পরিবর্তন হওয়ায় এটা মন্ত্রিসভায় এসেছে পুনঃ অনুমোদনের আনুষ্ঠানিকতার জন্য। সরকার পরিবর্তন হলেও এ ধরনের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা অটুট থাকে।

মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘টিউলিপ কম্পিউটার্স’ নাম শোনা মাত্র, বেগম জিয়া ক্ষু’দ্ধ হয়ে উঠলেন। তিনি জানান, এই চুক্তি বাতিল করতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষাসচিব জানান, ‘নেদারল্যান্ড ইউরোপীয় ইউনিয়নের শক্তিশালী সদস্য। বছরে দেশটি বাংলাদেশকে ৩০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়।’

প্রধানমন্ত্রী রেগে গিয়ে সাফ জানিয়ে দেন, ‘এই চুক্তি বাতিল করতেই হবে।’ একথা বলেই তিনি ক্যাবিনেট মিটিং থেকে উঠে গেলেন।

শিক্ষামন্ত্রী এবং সচিব তো থ! দুজনই দ্বারস্থ হলেন মুখ্য সচিব ড. কামাল সিদ্দিকীর। ড. কামাল সিদ্দিকী কথা বললেন বেগম জিয়ার সঙ্গে। বেগম জিয়া ড. সিদ্দিকীকে যা বললেন তাতে তার ভিরমি খাওয়ার যোগাড়। বেগম জিয়া জানিয়েছেন, ‘টিউলিপ’ শেখ রেহানার মেয়ের নাম। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে কেন কম্পিউটার কিনতে হবে?’

মুখ্য সচিব বুঝলেন এ নিয়ে তর্ক করে লাভ নেই। তাও বললেন ‘টিউলিপ নেদারল্যান্ডের একটি আইটি প্রতিষ্ঠান। স্থাপিত হয় ১৯৭৯ সালে। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শেখ রেহানা বা তার পরিবারের কোনো সম্পর্ক নেই।’

কিন্তু কে শোনে কার কথা। বেগম জিয়া চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তে অনড়। ড. কামাল সিদ্দিকীও নাছোড়বান্দা, তিনি বললেন এই চুক্তি বাতিল করলে বাংলাদেশকে ৪.২ মিলিয়ন ডলার ক্ষ’তিপূরণ দিতে হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী গোঁ ধরলেন, টিউলিপ নামে কোন কিছু বাংলাদেশে হবে না।

মূখ্য সচিব তার ব্যর্থতার কথা শিক্ষামন্ত্রীকে জানালেন। শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুক এক রাশ হতা’শা নিয়ে চুক্তি বাতিলের জন্য নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূতকে ডাকলেন। নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত বিস্ময়ে হতবাক, বাংলাদেশে ১১ হাজার কম্পিউটার আসবে, প্রায় ৮ হাজার শিক্ষক কম্পিউটার প্রশিক্ষণ পাবে, আর এরা শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার শেখাবে। এরকম একটি যুগপোযোগী চুক্তি কেন সরকার বাতিল করবে?

যাই হোক শেষ পর্যন্ত সরকার চুক্তি বাতিল করল। টিউলিপ লিমিটেড, বাংলাদেশ সরকারের কাছে ৪.২ মিলিয়ন পাউন্ড ক্ষ’তিপূরণ চাইল। কিন্তু আবার বেঁকে বসলেন বেগম জিয়া, তিনি বললেন ক্ষ’তিপূরণ দেওয়া হবে না। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমান বেগম জিয়াকে নিজে বোঝালেন, বোঝালেন মন্ত্রীসভার অনেকেই। কিন্তু বেগম জিয়া অ’নড়।

টিউলিপ লিমিটেড মামলা করল। আদালত বাংলাদেশ সরকারকে ক্ষ’তিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিল। কোর্টের আদেশও মানলেন না বেগম জিয়া। এরপর আন্তর্জাতিক আদালত নেদারল্যান্ডের সহায়তা বাংলাদেশে বন্ধের আদেশ দিল। বন্ধ হয়ে গেলো বাংলাদেশে ডাচ অনুদান ও সহায়তা। বাংলাদেশের শিশু ও নারীরা ৫৬৭ কোটি টাকার সাহায্য থেকে ব’ঞ্চিত হলো।

বেগম জিয়া শুধু চুক্তি বাতিলই করেননি, গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে খবর নিয়েছিলেন যে টিউলিপ এর মালিকানা কার? গোয়েন্দা সংস্থা যখন জানায় এই টিউলিপের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপের কোনো সম্পর্ক নেই, ততক্ষণে বাংলাদেশে নেদারল্যান্ড সরকার তার সব সহায়তা বন্ধ করে দেয়।