আন্তর্জাতিক ২১ নভেম্বর, ২০১৯ ০৬:১২

হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে বস্তিতে দেহ ব্যবসা!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।। 

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতা ও দক্ষিণ শহরতলিতে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে বস্তি এলাকাতেই চলছিল যৌন ব্যবসা।  

যৌন পল্লিতে নিয়ে গেলে পুলিশ কিংবা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নজরে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই সেখানে না নিয়ে গিয়ে জনবসতি এলাকায় রাখলেই ধরা পড়ার ভয় কম। আবাসনের কিংবা এলাকার বাসিন্দাদের নজর এড়াতে রয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ। তাতে কিশোরীর ছবি পাঠালেই সময়মতো চলে আসবে 'খদ্দের'। এভাবে সহজেই সকলের নজর এড়িয়ে চালানো যাবে যৌন ব্যবসা। গত কয়েক মাস ধরে কলকাতার বেশ কিছু জায়গায় এবং দক্ষিণ শহরতলিতে কিশোরীদের দিয়ে এভাবেই চালানো হচ্ছিল যৌন ব্যবসা। 

এদিকে, এ ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় নড়েচড়ে বসেছে কলকাতা পুলিশ, বারুইপুর পুলিশ ও কলকাতার এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি জানিয়েছে, গত কয়েক মাস ধরে তাদের কাছে খবর আসছিল যে, শহরের বেশ কিছু জায়গায় এবং দক্ষিণ শহরতলির কয়েকটি আবাসনে কিশোরীদের জোর করে আটকে রেখে যৌন ব্যবসায় নামতে বাধ্য করছে কিছু লোক। খবর পেয়ে কলকাতা পুলিশের 'অ্যান্টি-হিউম্যান ট্র্যাফিকিং ইউনিট'-কে সঙ্গে নিয়ে বেহালা এলাকার একটি আবাসনে অভিযান চালায় তারা। সেখান থেকে উদ্ধার হয় ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরী। মেয়েটি বাটানগরের বাসিন্দা। অভাবের কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিল সে। সংসারে সাহায্য করার জন্য ভালো কাজের খোঁজ করছিল। আর সেই কাজের লোভ দেখিয়েই তার কিছু বন্ধুবান্ধব তাকে তুলে দিয়েছিল পাচারকারীদের হাতে। ওই কিশোরী ভেবেছিল, ভালো কাজ পাবে শহরে এসে। কিন্তু কলকাতায় আসার পরেই তার ভুল ভেঙে যায়, যখন শুরু হয় লাগাতার যৌন নিগ্রহ। 

উদ্ধারের পরে  স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটিকে ওই কিশোরী জানিয়েছে, প্রতিদিন গড়ে দশ জন তার ওপরে যৌন নিগ্রহ চালাতো। 

ওই কিশোরীকে উদ্ধারের সূত্রেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে একাধিক পাচারকারী। আর সেই পাচারকারীদের সূত্র ধরেই খোঁজ মেলে বেহালার এক কিশোরীর। তার মা ও রিকশাচালক বাবা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় পড়শি এক নারী তাকে কাজের লোভ দেখিয়ে বাটানগরে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেয় বলে অভিযোগ। সেখানে যে বাড়িতে তাকে আটকে রাখা হয়েছিল, সেখানেই রোজ বিভিন্ন ধরনের লোক এসে তার ওপরে যৌন নিগ্রহ চালাত। গত সেপ্টেম্বর মাসে বারুইপুরের একটি বাড়ি থেকেও উদ্ধার করা হয়েছিল ১৫ ও ১৬ বছরের দুই কিশোরীকে।

শহর ও শহরতলির বিভিন্ন বসতি এলাকায় কিশোরীদের দিয়ে যৌন ব্যবসা চালানোর এই ধরনের ঘটনা সামনে আসার পরেই ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বুঝতে পারে, নারী পাচার ও যৌন ব্যবসার গতিপ্রকৃতি কীভাবে বদলে গিয়েছে এখন। 

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি জানায়, ২০১৬ সালে তাদের করা একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, যৌন ব্যবসার যে সামগ্রিক বিস্তার, তার প্রায় ১৮ শতাংশই চলছে বস্তি এলাকায় এবং নাবালিকাদের দিয়ে। এবং সেই যৌন ব্যবসা চালাতে সোশ্যাল মিডিয়াকে খুব বেশি রকম ব্যবহার করা হচ্ছে এখন। ফলে এলাকার লোকজনও সব সময়ে টের পাচ্ছেন না। বেহালা, বারুইপুর এবং বাটানগরেও এভাবেই চলছিল যৌন ব্যবসা। 

এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছন, নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েরা অনেক সময়েই দামি মোবাইল, ভালো পোশাক বা এই ধরনের ছোট ছোট বিলাসিতার জন্য দেহ ব্যবসার দিকে ঝুঁকছে। আর সেই কাজ করতে গিয়ে ফাঁদে পড়ে যাচ্ছে পাচারকারীদের। যৌন ব্যবসায় নামানোর পরেই তুলে রাখা হচ্ছে আপত্তিকর নানা ছবি। পরে কাজ করতে না চাইলে সেই সব ছবি দেখিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। কিশোরীদের অনেককেই আবার অন্য কোনও কাজের টোপ দিয়েও নিয়ে আসা হচ্ছে। তার পরে জোর করে নামানো হচ্ছে এই ব্যবসায়। 

সূত্র : আনন্দবাজার