সারাদেশ ১৮ নভেম্বর, ২০১৯ ০২:৫৭

ফরিদপুরের বাজারে নতুন পেঁয়াজে দাম কমলো ১০০ টাকা

ডেস্ক রিপোর্ট ।। 

ফরিদপুরের বাজারে উঠতে শুরু করেছে মুড়িকাটা পেঁয়াজ। এতে একদিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম কমেছে ১০০ টাকা। বর্তমানে ফরিদপুরে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। হঠাৎ দাম কমার আরেকটি কারণ হলো সরকারের পেঁয়াজ আমদানির খবর।

দুদিন আগেও এখানে পেঁয়াজের কেজি ২৫০ টাকা বিক্রি হয়েছিল। এরই মধ্যে রোববার (১৭ নভেম্বর) এবং সোমবার (১৮ নভেম্বর) বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চলে আসে। মুড়িকাটা পেঁয়াজ প্রতিকেজি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা দরে। এ অবস্থায় পুরাতন পেঁয়াজের দাম কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সোমবার ফরিদপুরের বিভিন্ন বাজারে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে।

পাশাপাশি জেলার নগরকান্দা ও সালথা উপজেলায় কলিসহ পেঁয়াজ তুলে বাজারে নিয়ে এসেছেন চাষিরা। অধিক মুনাফার আশায় আগেভাগেই ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তুলতে শুরু করেছেন তারা।

পেঁয়াজ চাষিরা জানান, চারা রোপণকৃত হালি পেঁয়াজ এখন বিক্রি প্রায় শেষপর্যায়ে। আর গুঁটি থেকে উৎপাদিত মুড়িকাটা পেঁয়াজ বর্তমানে উঠতে শুরু করেছে। বেশি দাম পাওয়ার আশায় ক্ষেত থেকে আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজ উঠাতে শুরু করেছেন তারা। অনেক চাষি পেঁয়াজের পাশাপাশি পেঁয়াজ গাছের পাতা বাজারে এনেছেন। এজন্য দাম কিছুটা কমেছে।

ফরিদপুর শহরের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজের মোকাম হাজী শরীয়তুল্লাহ বাজারের পেঁয়াজের ব্যাপারী মামুন পোদ্দার চাষিদের কাছ থেকে ১২০ টাকা দরে নতুন পেঁয়াজ কিনে অল্প লাভে বিক্রি করে দিচ্ছেন। ২০০ টাকা দরে কেনা পুরনো পেঁয়াজ ৫০ টাকা লোকসানে ১৫০ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি।

একই বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মাহবুব হাওলাদার বলেন, গত সপ্তাহে এই বাজারে মোট প্রায় সাত হাজার মণ পেঁয়াজ বেচাকেনা হয়েছে। পেঁয়াজের মণপ্রতি ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছেন মুজতকারী ও আড়তদাররা।

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার খলিসাডুবির পেঁয়াজের আড়তদার তৈয়াব সরদার বলেন, আমরা স্থানীয় ৭-৮টি বাজারে পেঁয়াজ সরবরাহ করি নিয়মিত। গত সাতদিনের মধ্যে সোমবার সর্বনিম্ন দামে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকারের পেঁয়াজ আমদানির খবরে প্রথমে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করে। এরই মধ্যে গত দুদিন ধরে বাজারে আসতে শুরু করেছে নতুন পেঁয়াজ। পাশাপাশি যেকোনো সময় ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালাতে পারেন এমন আতঙ্ক রয়েছে। সবমিলে কেজিতে প্রায় ১০০ টাকা কমেছে পেঁয়াজের দাম।

সালথা বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ইলিয়াস মিয়া বলেন, ২০০ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রির আশায় অনেক কৃষক গাছসহ পেঁয়াজ তুলে বাজারে এনেছেন। পাশাপাশি ছোট ছোট মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসছে দুদিন ধরে। এতে পেঁয়াজের বাজারে দাম কমতে শুরু হয়। সোমবার ১৫০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হয়।

নগরকান্দা উপজেলার পেঁয়াজের ব্যাপারী রবিউল ইসলাম বলেন, ভালো পেঁয়াজের মণ ছয় হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে; যা একদিন আগেও সাত হাজার টাকা ছিল। মুড়িকাটা পেঁয়াজের মণ ৪-৫ হাজার টাকাতে বিক্রি হয়েছে।

ভাঙ্গা উপজেলা বাজারের পাইকারি আড়তদার রাজ্জাক মিয়া বলেন, রোববার যেখানে ২৫০ টাকা পেয়াঁজের কেজি ছিল আজ হঠাৎ করে তা অর্ধেকেরও কম দামে নেমে আসায় লোকসানের মুখে পড়েছি আমরা। আমাদের আড়তসহ বেশ কয়েকটি আড়তে বেশি দামে পেঁয়াজ কেনা আছে। এখন লোকসান দিয়েই পেঁয়াজ বিক্রি করছি আমরা। কারণ মুড়িকাটা পেঁয়াজ পুরোদমে বাজারে আসলে পেঁয়াজের দাম পড়ে যাবে।

ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, এ বছর অতিবৃষ্টির কারণে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আগেভাগে রোপণ করা যায়নি। অনেক পরেই রোপণ করা হয়েছিল। তাই বাজারে আসতে দেরি হচ্ছে। আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে পুরোদমে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে উঠবে। তখন পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আগের দামে চলে আসবে পেঁয়াজ, ধস নামবে বাজারে। প্রতিবছরের মতো এবারও ফরিদপুরে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে, যা ১০ দিনের মধ্যে বাজার দখল করবে।