আন্তর্জাতিক ১৭ নভেম্বর, ২০১৯ ১০:০৮

ফাঁস হওয়া নথিতে উইঘুর মুসলিমদের নির্যাতনের আলামত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।

চীনের জিনজিয়াং রাজ্যে উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীনের রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের অভিযোগ একেবারে নতুন নয়। সম্প্রতি কমিউনিস্ট চীনের এক সরকারি নথি ফাঁসের পর দেখা যায়, সেখানেও উঠে এসেছে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে উইঘুর মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের দলিল। শুধু নৃতাত্ত্বিক উইঘুর সম্প্রদায়ের মুসলমানরাই নয়; বরং একই অবস্থা অঞ্চলটির অন্য মুসলিমদেরও। শনিবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।

চীনে প্রায় দেড় কোটি উইঘুর মুসলমানের বাস। জিনজিয়াং প্রদেশের জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশই উইঘুর মুসলিম। এই প্রদেশটি তিব্বতের মতো স্বশাসিত একটি অঞ্চল। বিদেশি মিডিয়ার সেখানে প্রবেশের ব্যাপারে কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে। কিন্তু গত বেশ কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সূত্রে খবর আসছে, সেখানে বসবাসরত উইঘুরসহ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ওপর ব্যাপক ধরপাকড় চালাচ্ছে বেইজিং। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ও অ্যাক্টিভিস্টরা দীর্ঘদিন থেকেই বলে আসছেন, জিনজিয়াং-এর বিভিন্ন বন্দিশিবিরে অন্তত ১০ লাখ মুসলিমকে আটক করে রেখেছে চীন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলোও জাতিসংঘের কাছে এ ব্যাপারে উদ্বেগ জানিয়েছে। তবে চীন বরাবরই মুসলিমদের গণগ্রেফতারের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের হাতে আসা নথিটি ফাঁস হয়েছে চীনের একজন ঊর্ধ্বতন রাজনীতিকের কাছ থেকে। এতে দেখা গেছে, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কিভাবে ২০১৪ সালে অঞ্চলটি সফরকালে এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অঞ্চলটির মুসলিমদের ব্যাপারে বেইজিং-এর অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।

একটি ট্রেন স্টেশনে চুরি হামলার পর অঞ্চলটি সফর করেন শি জিনপিং। ওই হামলার জন্য উইঘুরদের দায়ী করা হয়ে থাকে। এরপর দেওয়া সিরিজ ভাষণে একনায়কতন্ত্রের উপাদানগুলো ব্যবহার করে ‘সন্ত্রাসবাদ, অনুপ্রবেশ ও বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে’ লড়াইয়ের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে উইঘুর মুসলিমদের ব্যাপারে কোনওভাবেই অনুকম্পা না দেখানোর নির্দেশ দেন তিনি। চীনা প্রেসিডেন্টের এমন নির্দেশের ব্যাপারে রয়টার্সের পক্ষ থেকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি ফ্যাক্স করা হয়েছে। এর কোনও জবাব মেলেনি। তবে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, চীনের লড়াই কথিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নয়; বরং জিনজিয়াং থেকে উইঘুর মুসলমানদের অস্তিত্ব মুছে ফেলার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছে বেইজিং।

নথিতে দেখা যায়, অন্যান্য দেশে সন্ত্রাসী হামলা এবং আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের ফলে চীনা নেতৃত্বের ভয় আরও বেড়েছে। বন্দিশিবিরে নিয়ে যাওয়া মুসলিম পরিবারের কোনও সন্তান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরলে কর্মকর্তারা তাদের জানাতেন, তার পরিবারের সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য নেওয়া হয়েছে। চীনা কর্মকর্তারা মুসলিম বন্দিশিবিরগুলোকে ‘ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। ২০১৬ সালের পর থেকে এই বন্দিশিবিরগুলোর আকার আগের চেয়ে অনেক দ্রুত বেড়েছে। এখনও বন্দিশিবিরের বাইরে থাকা মুসলিমদের ব্যাপক সরকারি নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে।

ইসলামকে চীনের সমাজতান্ত্রিক সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে বেইজিং। ইতোমধ্যেই আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশটিতে ইসলামের ‘চাইনিজ ভার্সন' বাস্তবায়নের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এর মাধ্যমে তারা চীনের মুসলিম জনসংখ্যাকে ‘চিনিসাইজ’ বা চীনা ধারার সমাজতন্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুলতে চাইছে। এর আওতায় মসজিদগুলোকে গম্বুজের বদলে চীনা স্টাইলের প্যাগোডার আকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। রাজধানী বেইজিংয়ে হালাল পণ্য বিক্রি করে এমন ১১টি রেস্টুরেন্ট ও দোকানপাটের কর্মীরা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, কর্মকর্তারা তাদের ইসলামের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছবিগুলো সরিয়ে নিতে বলেছে। এরমধ্যে ক্রিসেন্ট মুন বা অর্ধচন্দ্র এবং আরবিতে লেখা ‘হালাল’ শব্দটিও রয়েছে।