আন্তর্জাতিক ১৬ নভেম্বর, ২০১৯ ০৬:৫২

কলকাতায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ী অপহরণ, আটক ৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

কলকাতায় বাংলাদেশি নাগরিকের অপহরণের ঘটনায় তিন অভিযুক্তকে আটক করেছে কলকাতার এন্টালি থানার পুলিশ। এর মধ্যে একজন বাংলাদেশি, বাকী দুইজন ভারতীয়। এরমধ্যে আছেন প্রধান অভিযুক্ত সেলিম রেজা ওরফে সেলিম। পুলিশের দাবি বাড়ি নির্মাণের সরঞ্জাম সরবরাহকারী ছদ্মবেশে সেখানে বসবাস করছিল সেলিম। চতুর্থ অভিযুক্ত ব্যক্তির খোঁজে চলছে জোর তল্লাশি।

গত ১০ নভেম্বর কলকাতার এন্টালি থানায় অপহরণের অভিযোগ এনে একটি অভিযোগ জানান, বাংলাদেশের ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার কাপড় ব্যবসায়ী বশির মিঞা (৩৯)। তার অভিযোগ কলকাতার শপিং মলে আলাপচারিতা কালে তার সাথে কয়েকজনের পরিচয় হয়। এরপর তাকে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার হাবড়া-গুমা এলাকায় একটি পরিত্যক্ত জায়গায় নিয়ে গিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। সেই মতো ছয় লাখ রুপি নগদ অর্থ দেয় বশির। এছাড়াও তার কাছে থাকা প্রায় ৪৪ লাখ বিদেশি মুদ্রাও ছিনিয়ে নেওয়া হয়। বশিরকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। অপহরণকারীদের থেকে ছাড়া পেয়েই তিনি কলকাতায় এসে এন্টালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এরপরই অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান শুরু করে এন্টালি থানার বিশেষ দল। খতিয়ে দেখা হয় ওই শপিং মলের সিসিটিভি ফুটেজ।

এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, অপহরণের ঘটনায় প্রথমেই দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার পাটুলি থেকে গ্রেফতার করা হয় সেলিমকে। তাকে জিজ্ঞাসা করেই সালাউদ্দিন মন্ডল এবং নাসিমা বিবি আরও দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। সালাউদ্দিন এবং নাসিমা উভয়েই বশিরকে ওই অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখেছিলেন। এই ঘটনায় মাস্টার মাইন্ড সেলিম দীর্ঘদিন ধরেই মানবপাচারের সাথে যুক্ত। বাংলাদেশের সাতক্ষীরা থেকে পশ্চিমবঙ্গের গেদে পর্যন্ত  চলছে তার এই অবৈধ কার্যকলাপ। সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের এপারে নিয়ে এসে পশ্চিমবঙ্গের বাসন্তী, গোসাবা, ক্যানিং এবং হাবড়া এলাকায় গোপন জায়গায় তাদের আটকে রাখা হয়। এরপর এই মানুষগুলোর ভুয়া ভারতীয় নথি দিয়ে পাসপোর্ট তৈরি করে ইউরোপ এবং ভারতের অন্য রাজ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সেলিম নিজেও অবৈধ ভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আসে। দীর্ঘ ছয় বছরের বেশি সময় ধরে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার বাসন্তী এলাকায় বসবাস করছে। তার টার্গেট অবৈধভাবে পশ্চিমবঙ্গে আসা বাংলাদেশিরা। কলকাতার নিউমার্কেট ও শিয়ালদহ সংলগ্ন এলাকায় হোটেলগুলিতে অবস্থান করা বাংলাদেশিদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ফাঁদে ফেলাই লক্ষ্য ছিল সেলিমের। এরপর তাদের আস্থা যোগাড় করেই তাদের বাসন্তীতে নিয়ে যাওয়া হত। এরপর ফাঁদে ফেলা ব্যক্তির সাথে নিজেও অপহরণের নাটক করতেন এবং নিজের লোকদের দিয়ে বিশাল অর্থের মুক্তিপণ দাবি করাতেন সেলিম। অপহরণকারীদের হাত থেকে মুক্তির জন্য ফাঁদে পড়া ব্যক্তিরাও সেই অর্থ দিতে বাধ্য হতেন। সেইসাথে ওই ব্যক্তির ভুয়া নথি তৈরি করে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হতো। ফলে সেইসব ব্যক্তিরাও নিজেদের দুর্বলতার কারনে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করার সাহস দেখাতেন না।

বশির মিঞার ক্ষেত্রেও ঠিক একই ঘটনা বলে জানা যায়। ব্যবসার কাজে ৭ নভেম্বর কলকাতায় আসা বশিরের সাথে আলাপ হয় ওই সেলিমের। গত ৮ নভেম্বর ট্রেনে করে হাবড়া এলাকায় এক পরিচিতের বাড়িতে বশিরকে দাওয়াত খেতে নিয়ে যায় সেলিম। হাবড়া রেল স্টেশনে পৌঁছানোর পরই উভয়কেই ঘিরে ধরে নিজেদেরকে সিবিআই কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেওয়া কয়েকজন ব্যক্তি। বশির ও সেলিম-দুইজনেই অস্ত্র ব্যবসায়ী এই অভিযোগে তাদের দুইজনকেই আটক করে সিবিআই বলে পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তিরা। এরপর সেলিমকে একজন কুখ্যাত অপরাধী আখ্যা দিয়ে বশিরের কাছ থেকে তাকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর পরেই বশির বুঝতে পারেন যে তাকে অপহরণ করা হয়েছে এবং এই ষড়যন্ত্রের পিছনে বশিরের হাত রয়েছে।

হাবড়ার একটি অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়ার পর বশিরের মুক্তিপণ হিসাবে ৪০ লাখ রুপি দাবি করা হয় আর না দিলে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। বশিরের কাছে থাকা প্রায় ৫০ হাজার মূল্যের বিদেশি মুদ্রাও ছিনিয়ে নেওয়া হয়। অবশেষে দুই পক্ষের আলোচনার পর ১০ নভেম্বর বাংলাদেশ থেকে মুক্তিপণ বাবদ প্রায় ৬ লাখ ভারতীয় রুপি দেওয়ার পর তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, মুক্তি পাওয়ার পরই বশিরকে তুলে দেওয়া হয় এক দালালের হাতে। এসময় বশিরের হাতে একটি ভুয়া ভারতীয় ভোটার পরিচয়পত্র তুলে দেওয়া হয়। তাতে বশিরের ছবি থাকলেও নাম ছিল আলাদা। একজন ভারতীয় অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসাবেই সীমান্ত পার করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়াই উদ্দেশ্য ছিল মনে করা হচ্ছে।

যদিও মুক্তি পেয়েই দেশে ফিরে যাওয়ার পরিবর্তে কলকাতায় এসে গত ১০ নভেম্বর এন্টালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বশির।

অভিযোগের ভিত্তিতে সেলিমের মোবাইল ফোনের লোকেশন দেখা যায় দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার গোসাবাতে। কিন্তু পরবর্তীতে তার ফোনটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে এন্টালি থানার আইসি দেবাশিস দত্ত জানতে পারেন, পাটুলিতে অবস্থান করছে সেলিম। আদতে বাংলাদেশি সেলিম ভুয়া নথি সংগ্রহ করে ভারতীয় সেজে দিব্যি অবস্থান করছিল পশ্চিমবঙ্গে। তাকে জেরা করে সেলিমের মানবপাচারের সাথে যুক্ত থাকার বিষয়টিও জানতে পারে তদন্তকারী কর্মকর্তারা।