অপরাধ ও দুর্নীতি ৪ নভেম্বর, ২০১৯ ০৭:০২

জোড়া খুনের ঘটনায় যা বললেন সুরভী

ডেস্ক রিপোর্ট।।

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় ধানমন্ডিতে জোড়া খুনের ঘটনায় আটককৃত গৃহকর্মী নাহিদা আক্তার সুরভীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তার সম্পৃক্ততার খবরটি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

ধানমন্ডির একটি বাসায় গত শুক্রবার (পহেলা নভেম্বর) রাতে ধানমন্ডির ২৮ নম্বর রোডের ২১ নম্বর বাড়ির ফ্ল্যাটে গৃহকর্ত্রী আফরোজা বেগম ও গৃহকর্মী দিতিকে হত্যা করে সুরভী আক্তার নামে ওই দিনই নিয়োগ পাওয়া আরেক গৃহকর্মী। শুক্রবার ওই হত্যাকাণ্ডের পর রোববার রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ধানমন্ডি থানায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে পাঠায় পুলিশ। সেখানেও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সুরভী ওই এলাকার এক পানওয়ালার পরিচিত। আফরোজার মেয়ের স্বামী কাজী মনির উদ্দিনের বডিগার্ড আতিকুল হক বাচ্চু ওই পানওয়ালার দোকানে নিয়মিত পান কিনতেন। পূর্বপরিচয় থাকায় পানওয়ালা মেয়েটির জন্য বাচ্চুকে গৃহকর্মীর কাজ ঠিক করে দিতে বলেন। বাচ্চু আফরোজা বেগমকে জানিয়ে মেয়েটিকে শুক্রবার দুপুরে কাজের জন্য আসতে বলেন।

সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে সুরভী বলেন, সে শুক্রবার দুপুরে আফরোজা বেগমের বাড়িতে কাজ করার জন্য যায়। আফরোজা বাড়ির চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে থাকলেও সে সময় পাঁচতলায় তার মেয়ে দিলরুবার ফ্ল্যাটে ছিলেন। বাচ্চু সুরভীকে গেট থেকে রিসিভ করে সরাসরি পাঁচ তলায় নিয়ে যান। এরপর আফরোজা, দিতি, সুরভী এবং বাচ্চু একসঙ্গে চারতলার ফ্ল্যাটে আসেন।

ফ্ল্যাটে ঢুকেই প্রথমে আফরোজা বেগম সুরভীকে বেডরুমগুলো দেখান এবং সুরভীকে রাত থেকে কাজ করতে হবে এমন শর্তে তাকে নতুন গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেন। প্রথম দিনের কাজ হিসেবে সুরভী কাপড় ধুয়ে রাখেন। দুপুরে তাকে ভাতও খেতে দেয়া হয়।

সুরভী পুলিশের কাছে দাবি করেন, ঘরের কাজ শেষ করে একপর্যায়ে সে বাইরে যেতে চায়। কিন্তু আফরোজা বেগম তাকে ঘরের বাইরে বের হতে দেননি। আফরোজা বেগম নাকি তাকে বলেছিলেন যে, ‘তোকে যে এনেছে (বাচ্চু), সে আসলে তুই যেতে পারবি।’ একপর্যায়ে দিতি ফ্ল্যাটের মেইন গেটে তালা মেরে দেন, যেন সুরভী বের না হতে পারেন।

সুরভী আরও বলেন, সে ফ্ল্যাট বাসায় ভয় পাচ্ছিল, তাকে পাচার কিংবা অন্য কোনো অনৈতিক কাজে জড়ানো হয় কি না। সন্ধ্যায় গৃহকর্মী দিতি যখন ফ্ল্যাটের একটি বেডরুম ঝাড়ু দিচ্ছিল তখন ছুরি দিয়ে পেছন থেকে দিতির পিঠে পোচ দেন সুরভী। এরপর তার গলায় পোচ দেন। একইভাবে আরেক বেডরুমে থাকা আফরোজা বেগমের গলায় পোচ দিয়ে গেটের তালা খুলে পালিয়ে যান।

তদন্ত সূত্র জানায়, পালানোর পর সুরভী প্রথমে তার আগারগাঁওয়ের বস্তিতে যান। এরপর মিরপুরে এক আত্মীয়ের বাসায় আত্মগোপন করেন। রোববার আগারগাঁওয়ে গেলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ আরও জানতে পারে, সুরভী আগে একটি গার্মেন্টে চাকরি করতেন। মানসিক অশান্তির কারণে সেখান থেকে চাকরি ছেড়ে দেন সুরভী।

এদিকে তদন্তাধীন বিষয়ে ডিবির কোনো কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে চাননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সুরভীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সুরভী আক্তার ছাড়া বাকি চারজন হলেন- কাজী মনির উদ্দিনের বডিগার্ড আতিকুল হক বাচ্চু (তিনি আফরোজার মেয়ে দিলরুবার স্বামী), বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড নুরুজ্জামান, কেয়ারটেকার বেলাল এবং প্রিন্স।

ঘটনা তদন্তে ধানমন্ডির ওই বাড়ির বাইরের, ভেতরের, সিঁড়ি ও করিডোরের সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করে তদন্ত করেছে পুলিশ। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ যাচাই করে দেখা গেছে, ওইদিন (শুক্রবার) দুপুর ২টা ২০ মিনিটে সুরভীর পরনে টাইস, কামিজ ও ওড়না ছিল। সে প্রথমে ভবনের ভেতরে আফরোজা বেগমের ফ্ল্যাটে ঢোকার চেষ্টা করে। তবে গেটে দারোয়ান তাকে বাধা দিলে তিনি মোবাইল ফোনে কল করেন। পরে ওপর থেকে বাচ্চু এসে তাকে নিয়ে যান। বিকেল সাড়ে ৫টায় সুরভী বের হয়ে যাওয়ার চিত্রও দেখা যায়।