বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি ২ নভেম্বর, ২০১৯ ০৫:৫০

হোয়াটস অ্যাপে আড়ি পেতে হাতিয়ে নিচ্ছে গ্রাহকদের গোপন তথ্য

প্রযুক্তি ডেস্ক ।।

হাতের স্মার্টফোনটি চালাতে চালাতেই হঠাৎ আবিষ্কার করলেন, ইনবক্সে আসা ক্ষুদে বার্তাগুলো আপনার আগেই কেউ পড়ে ফেলছে! এমন পরিস্থিতিতে অজানা ভয় এবং শঙ্কা গ্রাস করে নেবে আপনাকে মুহূর্তেই। কিন্তু জানেন কি, নিজের অজান্তেই আপনি নিজে হ্যাকারদেরকে সেই সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছেন।

ইসরায়েল ভিত্তিক এনএসও গ্রুপ নামের একটি হ্যাকার সংগঠন তৈরি করেছে তেমনই এক সফটওয়্যার। যার মাধ্যমে হ্যাকাররা খুব সহজেই আপনাকে বোকা বানিয়ে হাতিয়ে নিতে পারে স্মার্টফোনে থাকা গোপন কোনো তথ্য।

মূলত হোয়াটস অ্যাপের মতো শক্তিশালী নিরাপত্তা বেস্টিত মাধ্যম ব্যবহার করেই তারা টার্গেটের স্মার্টফোনসহ ল্যাপটপ এবং ডেস্কটপে অনুপ্রবেশের সুবিধা হাতিয়ে নেয়। এতে করে ব্যবহারকারী নিজের অজান্তেই পড়ে যান ফাঁদে, পরবর্তীতে হন ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মতো ভয়ঙ্কর সব কর্মকাণ্ডের শিকার।

বর্তমানে পৃথিবীর ১৮০টি দেশের ১.৫ বিলিয়ন মানুষ হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে। এছাড়াও হোয়াটস অ্যাপের জনপ্রিয়তার পেছনের মূল কারণ হচ্ছে এর শক্তিশালী নিরাপত্তা বেষ্টনী। 

তবে অবাক করা বিষয় হলো, হোয়াটস্ অ্যাপ হ্যাক করার এই সফটওয়্যার তৈরির পর এনএসও গ্রুপের কাছ থেকে প্রায় ২০টি দেশ এই সফটওয়্যারটি কিনে নেয়। তারা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাজনিত কারণে এই সফটওয়্যার বিভিন্ন সময়ে মানুষের উপর আড়ি পাতার জন্য ব্যবহার করছে বলেও জানা যায়।

গোপনে তথ্য হাতিয়ে নেয়ার ঘটনার প্রেক্ষিতে ইসরায়েলের এনএসও গ্রুপের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার চেষ্টা করছে হোয়াটস্ অ্যাপের মালিক ফেসবুক। কিন্তু এনএসও গ্রুপ বলছে তারা কোন অন্যায় করেনি।

আদালতে দাখিল করা কাগজপত্রে ফেসবুক অভিযোগ করেছে হোয়াটস্ অ্যাপ-এর অজানা ত্রুটিকে কাজে লাগিয়েছে এনএসও গ্রুপ।

উল্লেখ্য, একজনের কাছ থেকে যখন অপরজনের কাছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বার্তা যায়, তখন সেটিকে বাধাগ্রস্ত করলেও পড়া সম্ভব হয়না।

প্যাগাসাস নামের  এনএসও গ্রুপের তৈরি করা এই শক্তিশালী সফটওয়্যারটির মাধ্যমে মোবাইল ফোন থেকে দূর হতে গোপনে তথ্য হাতিয়ে নেয়া যায়।

এর মাধ্যমে হ্যাকাররা ফোন সেটের সকল কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করে।
এছাড়াও এর আগের ঘটনাগুলোতে দেখা গেছে, একটি ওয়েব লিংকের মাধ্যমে গোয়েন্দা সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করার ফাঁদ পাতা হয়েছিল।

কিন্তু ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলছে ব্যবহারকারীদের ফোনসেটে তাদের অজ্ঞাতে এই সফটওয়্যারটি ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে।

ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের মে মাস পর্যন্ত এনএসও গ্রুপ বিভিন্ন দেশে রেজিস্ট্রিকৃত ফোন নম্বর ব্যবহার করে হোয়াটস্ অ্যাপ অ্যাকাউন্ট খুলেছে।

যেসব দেশের ফোন নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে সাইপ্রাস, ইসরায়েল, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, সুইডেন এবং নেদারল্যান্ডস।

এরপর এপ্রিল এবং মে মাসে সে গ্রুপটি তাদের টার্গেট করা ব্যক্তিদের হোয়াটস্ অ্যাপ-এ ফোন করার মাধ্যমে সেগুলোকে হ্যাক করে।

ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আদালতে যে অভিযোগ দাখিল করেছে সেখানে বলা হয়েছে, হোয়াটস্ অ্যাপ-এর ভেতরে থাকা কারিগরি বিষয়গুলো এড়িয়ে যাবার জন্য এনএসও গ্রুপ এমন এক ধরণের কোড উদ্ভাবন করেছে যেটি ব্যবহার করে হোয়াটঅ্যাপ-এ ফোন করলে মনে হবে যেন এটি সত্যিই অন্য আরেকটি হোয়াটস্ অ্যাপ নম্বর থেকে আসছে।

এই কলের মাধ্যমে হ্যাকাররা তাদের টার্গেট করা ফোন সেটটির নিয়ন্ত্রণ নেয়।

যাদের টার্গেট করা হচ্ছে বিষয়টি তাদের কাছে সম্পূর্ণ অজানা থেকে যায়।

কোন কোন ক্ষেত্রে তারা শুধু লক্ষ্য করে যে তাদের হোয়াটস্ অ্যাপ কল লিস্টে কিছু রহস্যজনক মিসডকল জমা হয়েছে।

এনএসও গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগজির উপর নজরদারীর জন্য তার হত্যাকারীদের স্পাইওয়্যার সরবরাহ করা হয়েছিল।

তবে এনএসও গ্রুপ এটি অস্বীকার করে বলেছে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর বিষয়ে তারা আদালতে লড়বে।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, "এনএসও গ্রুপের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে প্রযুক্তি সহায়তা দেয়া যাতে তারা সন্ত্রাস এবং গুরুতর অপরাধের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে।"