শিক্ষা ১৭ অক্টোবর, ২০১৯ ১২:৪৩

মনিরের জবানবন্দিতে আবরার হত্যায় নতুন মোড়

ডেস্ক রিপোর্ট ।। 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মনিরুজ্জামান মনির গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এতে করে মোড় নিয়েছে আবার অন্যদিকে।

১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে মনির জানায়, আবরারকে কক্ষ থেকে ডেকে এনে সে চড়-থাপ্পর মেরেছে। আর সবচেয়ে বেশি পিটিয়েছে ছাত্রলীগ নেতা অনিক ও সকাল।

তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম মো. সারাফুজ্জামান আনছারী আসামি মনিরুজ্জামান মনিরের এ স্বীকারোক্তি রেকর্ড করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

জবানবন্দিতে মনির বলেন, ‘১৫তম ব্যাচের বড় ভাইরা ডাকতে বলেছিলেন। অনিক, রবি ও রাসেলের নির্দেশে আমি আবরারকে তার রুম থেকে ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে যাই। সেখানে অনিক ও রবিন ছাড়াও আরও অনেকে উপস্থিত ছিল। আবরারের মোবাইল ফোন, ল্যাপটপে থাকা তথ্য দেখে আবরারকে শিবির হিসেবে সন্দেহ করা হয়। এরপর আবরারের কাছ থেকে হলে আরও কারা কারা শিবিরের ঘনিষ্ঠ জানতে চাওয়া হয়।’

‘এ সময় প্রথমে চুপ থাকলে তাকে প্রথমে হুমকি-ধমকি দেয়া হয়। এরপর তাকে যে যার মতো চড়-থাপ্পড় মারে। এক পর্যায়ে অনিক স্টাম্প দিয়ে আবরারকে পেটাতে থাকে। ওই সময় আমিও আবরারকে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকি।’

মনির স্বীকারোক্তিতে আরও বলেন, ‘সকাল, জিসান, তানিম, সাদাত, মোরশেদ বিভিন্ন সময় ওই কক্ষে আসে এবং আবরারকে ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে পেটায়।’

‘মোয়াজ, বিটু, তোহা, বিল্লাহ ও মোজাহিদও ঘুরে-ফিরে এসে আবরারকে পেটায়। একপর্যায়ে আবরার নিস্তেজ হয়ে পড়ে। কয়েকবার বমিও করে। একপর্যায়ে আবরারকে ধরাধরি করে তানিম, মেয়াজ, জেমি সিঁড়ির দিকে নিয়ে যায়। পেছনে মোরশেদ, মুজাহিদ, তোহা, বিল্লাহ, মাজেদও ছিল। পরে ডাক্তার ডাকা হয়। ডাক্তার এসে বলেন, আবরার মারা গেছে।’

এদিকে আবরার হত্যার ঘটনায় এজাহারভুক্তহ আরো একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার নাম এএসএম নাজমুস সাদাত। তিনি বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন। গতকাল ভোরে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কাটলা ইউনিয়ন সংলগ্ন সততা সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতির অফিস থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় ঢাকার ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত সাদাতসহ এই ঘটনায় ২০ জনকে গ্রেপ্তার করল ডিবি। এর মধ্যে ১৬ জন এজাহারভুক্ত আসামি। এজাহারভুক্ত তিন জন এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। এরা সবাই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আবরার হত্যাকাণ্ডে জড়িত রয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে তথ্য পাওয়া গেছে।

এরা হলেন- মো. জিসান, মো. মোর্শেদ ও মো. তানিম। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ছয় জনকে এখন জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি। মনিরুজ্জামানসহ আবরার হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ছয় জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, গত ৬ অক্টোবর রাত ৮টার পর ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে আনার পর তাকে শিবির বলে সন্দেহ করে স্টাম্প দিয়ে সবাই মিলে পেটায়। মুজাহিদ ও কয়েকজন স্কিপিং দড়ি দিয়েও পেটান। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।