রাজনীতি ১৬ অক্টোবর, ২০১৯ ০৫:১০

পাগলা মিজানের মাদক সিন্ডিকেট ভাঙছে না সহজে

ডেস্ক রিপোর্ট।। 

মোহাম্মদপুরের ৩২ নাম্বার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান ওরফে পাগলা মিজানকে রোববার (১৩ অক্টোবর) শ্রীমঙ্গলে বান্ধবীর বাসা থেকে আটক করে র‌্যাব।

আটকের পর থেকে পাগলা মিজানের বিরুদ্ধে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হয়ে আসছে গোয়েন্দা তদন্তে। আমেরিকার টেক্সাসে ও সিডনিতে একাধিক বাড়ি গাড়িসহ মিজানের অবৈধ পথে আয় করা কোটি কোটি টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে জানা যায়, মোহাম্মদপুরের ত্রাস পাগলা মিজানের সকল অবৈধ আয়ের উৎস ছিল ৩২ নাম্বার ওয়ার্ড কেন্দ্রিক। আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্প কেন্দ্রিক। ক্যাম্পকে ঘিরেই গড়ে উঠে পাগলা মিজানের অপরাধের সাম্রাজ্য।

মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পের স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেনেভা ক্যাম্পে একক রাজত্ব ছিল পাগলা মিজানের। ক্যাম্প ও এর আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি এবং মাদক ব্যবসার মূলহোতা তিনি। ক্যাম্পের গুটিকয়েক লোকের মাধ্যমে মাদকের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। এছাড়া বর্তমানে পাগলা মিজান গ্রেফতার হয়ে রিমান্ডে থাকলেও এখনো ভাঙেনি তার মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেট।

পাগলা মিজানের লোকজন  তার অনুপস্থিতিতে এখনও নানা কৌশলে মাদক ব্যবসা চালু রেখেছে ক্যাম্পে। মোবাইলের ফোনের মাধ্যমে ক্যাম্পে ইয়াবা ও গাঁজার রমরমা ব্যবসা চলছে। যা সহজে ভাঙবে না বলে মনে করছেন স্থানীয়রা বাসিন্দারা।

জেনেভা ক্যাম্পের মাদকের মূলহোতা পাগলা মিজান

স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে জানা যায়, ক্যাম্পের ইসতিয়াখ, আরশাদ, বেজি নাদিম ও আরমানসহ সর্বমোট ৪০ জনের একটি গ্রুপ পাগলা মিজানের নির্বাচনের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। কাউন্সিলর হওয়ার পর পাগলা মিজানের কাছে কর্মসংস্থান চান তারা। ওই সময় পাগলা মিজান নির্বাচনে সহযোগিতাকারীদের জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা শুরু করতে বলেন।

এরপর তার মদদে ইসতিয়াখ ও আরশাদের নেতৃত্বে ক্যাম্পে গড়ে উঠে মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট প্রতিদিন মাদক বিক্রির ১-২ লাখ টাকা পৌঁছে দিত পাগলা মিজানের কাছে। এই সিন্ডিকেটের লোক নিয়োগ থেকে শুরু করে সব কিছুই তদারকি করতেন পাগলা মিজান। ক্যাম্পের কোনো যুবক মাদক ব্যবসায় জড়াতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে প্রথমে টাকা ও কর্মসংস্থানের লোভ দেখানো হত। তার পরেও রাজি না হলে মামলাসহ নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে মাদক ব্যবসায় আসতে বাধ্য করতেন পাগলা মিজান।

এখনও সক্রিয় পাগলা মিজানের মাদক সিন্ডিকেট

জেনেভা ক্যাম্পের বিহারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ক্যাম্পে র‍্যাবের একাধিক অভিযান ও পাগলা মিজানের গ্রেফতারের পর ইসতিয়াখ ও আরশাদ গা ঢাকা দিয়ে থাকলেও, তাদের সক্রিয়তা কিন্তু কমে যায়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা আবার ফিরে আসবে। তবে এখন তারা মোবাইল ফোন ও সিন্ডিকেটের নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে ইয়াবা ও গাঁজার ব্যবসা ক্যাম্পে সচল রেখেছেন। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য কিছু নতুন লোক নিয়োগ দিয়েছেন।

তবে আগের মত উন্মুক্তভাবে বিক্রি না হলেও আড়ালে এখনো ক্যাম্পে রমরমা মাদক  ব্যবসা চালাচ্ছে পাগলা মিজানের সিন্ডিকেট।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ক্যাম্পের এক  বাসিন্দা বলেন, পাগলা মিজানের মাদক সিন্ডিকেট এখনও ক্যাম্পে সচল রয়েছে। মাদকের বিক্রেতা ও ক্রেতা একে অপরকে চিনে। ফলে তারা মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে কেনাবেচা করছে।

জেনেভা ক্যাম্পে পাগলা মাদক ব্যবসার বিষয়ে র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারোয়ার আলম জানান, জেনেভা ক্যাম্প ভিত্তিক মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে পাগলা মিজানের বিরুদ্ধে। অভিযানে তার বাসা থেকে উদ্ধারকৃত টাকার চেক ও এফডিআর মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজির ও ক্যাসিনো সংশ্লিষ্ট আয়ের থেকে উৎস হতে পারে। এ সব বিষয় তদন্তে বেরিয়ে আসবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, আমরা মানি লন্ডারিং’র সুনির্দিষ্ট অভিযোগে পাগলা মিজানকে গ্রেফতার করেছি। তবে জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসার সঙ্গে পাগলা মিজান জড়িত বলে লোক মুখে অভিযোগ রয়েছে। যদিও এ বিষয়ে থানায় কোনো মামলা হয়নি বা আমাদের কাছেও অভিযোগ আসেনি।  সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।