শিক্ষা ১৬ অক্টোবর, ২০১৯ ০২:৪২

নিহত ছাত্রলীগ নেতা ওয়াসিকে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুকের হৃদয়স্পর্ষী স্ট্যাটাস

নিজস্ব প্রতিবেদক।। 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ শাখার দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় গত ২০ জুলাই। সেদিন অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনার সাক্ষী হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান চত্বরের উপস্থিত থাকা কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। 

ঘড়িতে তখন আনুমানিক দুপুর ৩ টা বাজে । বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুলতান মো. ওয়াসি  সম্মেলনে উপস্থিত নেতা কর্মীদের স্লোগান দিয়ে উজ্জীবিত করে তুলছেন। তাঁর বলিষ্ট কন্ঠ বার বার উচ্চারিত হচ্ছে 'জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু'। এ সময় তীব্র গরমে হিট স্ট্রোক করেন তিনি। তাকে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটস্থ ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নোয়াখালীর ছেলে এস.এম. ওয়াসি ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রলীগ নেতা। একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি মিরপুরে নৌকা মার্কার প্রার্থী ইলিয়াছ মোল্লার পক্ষে গণসংযোগ করেছিলেন।

ছাত্রলীগের বহু নেতাকর্মী ক্ষমতাসীনদের ছায়াতলে এসে অনেক সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন, টাকার কুমির হয়েছেন। কিন্তু ওয়াসি দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের মধ্যে মারা গেলেও তার পরিবার কিছুই পায়নি। এমনকি ওয়াসির মাকে কেউ সান্তনা পর্যন্ত দেয়নি।

এ বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপকমিটির সদস্য দেলোয়ার হোসেন ফারুক মঙ্গলবার দিনগত রাতে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

পাঠকের উদ্দেশ্যে তার সেই স্ট্যাটাসটি দেয়া হলো, ‘গত সংসদ নির্বাচনে মিরপুরে নৌকা মার্কার প্রার্থী ইলিয়াছ মোল্লার পক্ষে গণসংযোগ করছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা এস. এম. ওয়াসি। মনে পড়ে?

হয়তো এরমধ্যে আমরা ভুলে বসেছি; ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। একজন শ্রমিক কর্মস্থলে কর্মরত থাকাবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে বহু সুবিধা পায়। কিন্তু পায়নি আমাদের ছাত্রলীগের ওয়াসী।

গত ২০ জুলাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনে স্লোগান দিতে দিতে হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সুলতান মো. ওয়াসি।

সে যে নেতার পূজা দিতো সেই বড় নেতারা তার জানাযায়ও যায়নি। ছোট বেলায় বাবা হারা একমাত্র ছোট ভাই ও মায়ের সংসারের আলোকবর্তিকা সেদিন নিভে যায়।

সেই সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের আশার বাতিঘর বিদেশ ছিলেন। ভেবেছিলাম তিনি দেশে আসলে কেউ না কেউ আপাকে ওয়াসির বিষয়ে অবহিত করবেন এবং ওয়াসীর অসহায় মা ও ছোট ভাই প্রিয় নেত্রীর স্বাক্ষাত পাবেন। নাহ্! হয়ে উঠেনি এখনো।

নেত্রীর পাশে যারা থাকেন; জানি বহু কাজ নিয়ে আপনারা ব্যস্ত থাকেন। নিজেরও বহু কাজ থাকে। তবুও একবার ভেবে দেখেন, ওয়াসি এই দলের নিবেদিত কর্মী ছিল। তারও কিছু প্রাপ্য আছে। যে মা ওয়াসিকে হারিয়ে অসহায় হয়েছেন, তার পাশেও দল দাঁড়াতে পারে। ন্যূনতম নেত্রীর স্বাক্ষাত তিনি পেতেই পারেন।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের ফাউন্ডেশন থেকেও কেউ এগিয়ে আসতে পারেন।’

ওয়াসির মৃত্যুর পরদিনই ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস. এম জাকির হোসেন নিজের ফেসবুক পেজে লিখেছিলেন, ‘ছাত্রলীগের এস এম ওয়াসি! তুমি প্রমান করে গিয়েছো জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তোমার অন্তরে ছিল। তোমার আবেগ আমাদের সবার অন্তরে নাড়া দিয়েছে। তোমার আম্মুকে সান্তনা দেয়ার ভাষা কারো নেই। আশা করি তোমার জন্য তোমার প্রাণের চেয়ে প্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (দিবস হতে পারে) এমন কিছু করবে যাতে ছাত্রলীগের কর্মীরা তোমাকে আজীবন মনে রাখবে।’

ওয়াসির মৃত্যুর পর তার মা-ভাইকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মা-ভাই বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন সংগঠনটির আরেক সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

সে সময় জানা গিয়েছিল, নিহত ওয়াসি গোলাম রাব্বানীর অনুসারী।

ওয়াসিকে নিয়ে গোলাম রাব্বানীও ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে লিখেছিলেন, ‘কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগের কঠিন সময়ে ছাত্রলীগের যে কয়েকজন শুভাকাঙ্ক্ষি অনুজ সবসময় মেসেজ ও ইনবক্সে অনুপ্রেরণা আর সাহস যোগাতো তার মাঝে ওয়াসি অন্যতম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী এস.এম ওয়াসি। ওয়াসির মা আর একমাত্র ছোট ভাই আজ থেকে আমাদের মা, আমাদের ভাই; যেকোনো প্রয়োজনে ছাত্রলীগ পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের পাশে থাকবো ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের ভাইকে জান্নাতবাসী করুক। সবার অন্তঃপ্রাণ দোয়া কামনা করছি।’

এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দ্বিতীয় গেটকে ‘ওয়াসি গেট‘ নামকরণ করার দাবি জানানো হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে।

তবে মৃত্যুর পরও ভাগ্যের চাকা খুলেনি ছাত্রলীগের এই নিবেদিত প্রাণের পরিবারের। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে আজ অবধি দেখাও করতে পারেননি ওয়াসির মা।