শিক্ষা ১০ অক্টোবর, ২০১৯ ১২:০১

আবরারের হত্যাকারীদের দ্রুততম সময়ে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি ছাত্রলীগের 

ডেস্ক রিপোর্ট ।।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও হত্যাকারীদের দ্রুততম সময়ে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যাণ্টিনে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি আমাদের কাগজের পাঠকদের হন্য হুবহু তুলে ধরা হলো :

'বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে গৃহীত ব্যবস্থার পর্যালোচনা এবং হত্যাকারীদের দ্রুততম সময়ে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বক্তব্য নিম্নরূ :
 
গত ৭ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর শেরে বাংলা হলে সংঘটিত এক ন্যাক্কারজনক ঘটনায় বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের স্বীকার হয়। এ হত্যাকাণ্ডটি মুহূর্তে ছাত্রসমাজসহ প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে প্রচণ্ডভাবে নাড়া দেয়। আবরারের বাবা-মা এর মুখে সকলে নিজের বাবা-মায়ের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পায়। আবরারের ছোট ভাইয়ের অসহায় চাহনির ভিতর নিজের অন্তরজ্বালা অনুভব করে। হত্যাকাণ্ডটির সাথে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বুয়েট শাখার কতিপয় নেতৃবৃন্দের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠায় দ্রুততার ভিত্তিতে নানামুখী সাংগঠনিক পদক্ষেপ গৃহীত হয়। পদক্ষেপগুলো হল-
 
১। হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে এবং হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের সকল প্রকার পরিচয়ের ঊর্ধে উঠে বিচারের দাবী জানিয়ে আনুষ্ঠানিক শোক প্রকাশ ও নিন্দা জ্ঞাপন।
২। হত্যাকাণ্ডের সাথে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কতিপয় নেতৃবৃন্দের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠায় দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি সাংগঠনিক তদন্ত কমিটি গঠন এবং কমিটিকে ২৪ ঘণ্টার ভিতর রিপোর্ট জমাদানের নির্দেশ প্রদান।
৩। ২৪ ঘণ্টার পূর্বেই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রাপ্তির প্রেক্ষিতে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের ১১ জনকে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা।
 
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি ঐতিহাসিক ছাত্র সংগঠন। বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান থেকে শুরু করে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এ সংগঠনের ১৭ হাজার নেতাকর্মী বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ অবধি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার নামে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অসংখ্য নেতাকর্মীকে প্রাণ দিতে হয়েছে রাষ্ট্রীয় বাহিনী এবং ছাত্রশিবির, ছাত্রদল, জামায়াত, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আক্রমণ ও হমালার শিকার হয়ে। এরপরও সাংগঠনিকভাবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কখনোই কোন প্রকার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দেয় না, উৎসাহ প্রদান করে না। সংগঠনের পরিচয়-পদবী ব্যবহার করে কতিপয় ব্যক্তির অতি উৎসাহী হয়ে সংঘটিত কোন কর্মকাণ্ডকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অতীতের ন্যায় বর্তমানে এবং ভবিষ্যতেও প্রশ্রয় দিবে না। সম্প্রতি সংঘটিত আবরার হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আবারও তা প্রমাণ করেছে। আমাদের আদর্শিক নেত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশ, ‘অপরাধীর কোন দল নেই’ কথাটি অক্ষরে অক্ষরে পালনই আমাদের প্রধান কর্তব্য। একইসাথে এই ঘটনা পরবর্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছাত্রলীগসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে তড়িৎ, নৈর্ব্যক্তিক, নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন ও পদক্ষেপ গ্রহণের যে নির্দেশনা প্রদান করেছেন তা থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হবার অভিপ্রায় ও দুঃসাহস আমাদের নেই।
 
আমরা ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৩ জনকে গ্রেফতার করার জন্য। আমরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দাবী জানাই, পলাতক অপর অভিযুক্তদেরও যেন স্বল্প সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। একইসাথে এজাহারভুক্ত ১৯ জনের বাহিরে আরও যদি কেউ এই হত্যাকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকে তাদেরও যেন অনুসন্ধানের মাধ্যমে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হয়। এ পুরো প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে যদি কোন সহযোগিতা প্রয়োজন হয় তা নিশঙ্কচিত্তে সর্বোচ্চটুকু করার জন্য আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। পাশাপাশি, সাংগঠনিক তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পাদনের সময় শেরে বাংলা হল কর্তৃপক্ষের যে উদাসীনতা ও দায়িত্বহীন ভূমিকা দৃষ্টিগোচর হয়েছে আমরা সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণেরও আহ্বান জানাই।  
 
আমরা আরও দাবী জানাই যে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য যেন ‘আবরার হত্যা মামলা’টি দ্রুত বিচার আইনের আওতায় এনে সম্পন্ন করা হয়। এবং হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত প্রত্যেকের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হয় সে উপযোগী করে পুরো মামলাটি পরিচালনা করা হয়।
 
জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত বাংলাদেশে কোন প্রকার অন্যায় করে কেউ রেহায় পাবে সে নজির নেই। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাথে জড়িত কেউ যদি ব্যক্তি উদ্যোগে কোন অপরাধ কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িয়ে পরে, তারাও বিচারের হাত থেকে রক্ষা পাবে না; অতীতেও পায় নি, ভবিষ্যতেও পাবে না।
 
আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, আবরার হত্যাকাণ্ড পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকার, বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতার পরিচয় প্রদানের পরও এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার সাংগঠনিক অবস্থান পরিষ্কার করার পরেও কিছু কুচক্রী মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ, বিভিন্নভাবে ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে দেশে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা, দেশবিরোধী চুক্তির ধোঁয়া তুলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে হেয় প্রতিপন্ন করার প্রচেষ্টা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি ও কটুক্তিমূলক বক্তব্য প্রদান প্রভৃতির মাধ্যমে কতিপয় নামসর্বস্ব, কর্মী ও কর্মসূচী বিহীন, ব্যানার নির্ভর ছাত্র সংগঠন ও সেসব সংগঠনের নেতৃবৃন্দ যে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে, ধারাবাহিক উস্কানির মাধ্যমে যে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে, বিগত ১১ বছরে সেশনজটবিহীন নির্বিঘ্ন শিক্ষা পরিবেশ বিনষ্টের যে ষড়যন্ত্র রচনা করছে তা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কোনমতেই মেনে নিতে পারে না। দেশের ছাত্রসমাজকে সাথে নিয়ে এসব হীন কর্মকাণ্ড সর্বাত্মকভাবে মোকাবেলা করবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
 
দেশের ছাত্রসমাজের প্রতি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আহ্বান, নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সকল প্রকার ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় আপনাদের প্রত্যেককে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। আবরার হত্যাকাণ্ডের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটিকে পুঁজি করে কেউ যেন দলীয় রাজনীতি চাঙা করার নামে আন্দোলন-আন্দোলন খেলায় মেতে  উঠতে না পারে, সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিতে না পারে।