রাজনীতি ৭ অক্টোবর, ২০১৯ ০৬:৪৯

যেভাবে সম্রাট হয়ে উঠলো ‘ক্যাসিনো সম্রাট’

ডেস্ক রিপোর্ট ।।

ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সদ্য বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী আরমানকে আটক করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ইতোমধ্যে তাদেরকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনাও শুরু করেছে  আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

রবিবার (৬ অক্টোবর) ভোর ৫টার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের এক শিবির নেতার বাড়িতে র‍্যাব-১ এর একটি দল বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করেন। মূলত আরমানের হাত ধরেই ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়ায় সম্রাট। তাই ক্যাসিনো ব্যবসায় সম্রাট গুরু হিসেবে মানতো এই আরমানকে। কিন্তু এই সম্রাট থেকে ক্যাসিনো সম্রাট হওয়ার পেছনেও রয়েছে চমকপ্রদ তথ্য।

বিদ্যালয়ের গণ্ডিই পেরুতে পারেননি সম্রাট। তাই আর করা হয়ে ওঠেনি ছাত্র রাজনীতি। তবে ১৯৯৩ সালে হঠাৎ করেই যুবলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন তিনি। ওয়ার্ড যুবলীগের কর্মী হিসেবেই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন এক সময়। বাবা ছিলেন রাজউকের লিফটম্যান। কিন্তু রাজনীতি করেই বিপুল সম্পদের মালিক বনে যান সম্রাট। ২০১২ সালে ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি পাওয়ার পর মতিঝিল ক্লাবপাড়ার ‘ক্যাসিনো সম্রাট’ হয়ে ওঠেন ইসমাইল হোসেন চৌধুরী।  

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরুর পর গা ঢাকা দেয়া সম্রাট হয়ে ওঠেন 'টক অফ দ্য টাউন'। জুয়ার জগতে ক্যাসিনো সম্রাট নামেই পরিচিত তিনি।  

এর আগে ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়ে হয়ে ওঠেন বেপরোয়া। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সময় আত্মগোপনে থাকতেন তিনি।  

২০০৩ এর পর থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে। ২০০৬ সাল থেকে মতিঝিল ক্লাবপাড়ায় আনাগোনা বাড়ে তার।  ২০১২ সালে ওমর ফারুক চৌধুরী যুবলীগের চেয়ারম্যান হওয়ার পর সম্রাট ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি হন। শুরু হয় ক্যাসিনো ব্যবসা। 

অবৈধ জুয়া বাণিজ্য করে হয়ে ওঠেন হাজার কোটি টাকার মালিক। সিঙ্গাপুরেও তার কাসিনো ব্যবসা আছে বলে খবর পাওয়া গেছে। 

ঢাকা দক্ষিণের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চাঁদার টাকাও আসতো সম্রাটের ফান্ডে। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের টেন্ডারের নিয়ন্ত্রণ ছিল তার হাতে। পল্টন মতিঝিল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতাও ছিল সম্রাট। 

বিপুল অর্থ আর রাজধানীতে ৭ থেকে ৮টি বাড়ির মালিক তিনি। সম্রাটের দুই স্ত্রী। দুই ছেলে থাকে কানাডায়। সিঙ্গাপুরেও বিলাসী জীবন যাপন করেন সম্রাট। মাদক চোরাচালানসহ ঢাকার বিভিন্ন থানায় সম্রাটের নামে চাঁদাবাজি ও হত্যার একাধিক মামলা রয়েছে। 

এদিকে সম্রাটের কাকরাইল কার্যালয়ে অভিযান শেষে রবিবার (৬ অক্টোবর) সন্ধ্যার দিকে র‌্যাব-১ অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘আমরা সম্রাটকে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চাইব। সম্রাট যে ক্যাসিনোর সম্রাট হয়ে উঠেছেন, তার পেছনের গডফাদার ও পৃষ্ঠপোষক কারা, তাদেরও খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।

আগে থেকেই প্রশ্ন ওঠেছিল সম্রাটের পেছনে কেউ আছে কিনা? এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই বলেছেন, এ ঘটনার পর তাদের মূল দলই ভাবমূর্তির সংকটে পড়েছে। সেজন্য পেছনে কেউ থাকলে তাকেও খুঁজে বের করা উচিত বলে তারা জানিয়েছেন।