ডেস্ক রিপোর্ট।। 

আগাছা-পরগাছা ছাঁটাইয়ের চিন্তাভাবনা করছে আওয়ামী লীগ। তারই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে দলে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। এবং আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য দলের ২১তম কাউন্সিল পর্যন্ত শুদ্ধি অভিযান দুর্বার গতিতে চলবে বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র। একারণে দুর্নীতিবাজ ও বিতর্কিত নেতাকর্মীরা আছেন দৌড়ের ওপর। এদের কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। আবার কেউ কেউ গা-ঢাকা দিয়েছেন। তবে এসব বিতর্কিত নেতা, মন্ত্রী-এমপিরা রয়েছেন নজরদারিতে। এ ছাড়াও মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং এর অন্তর্গত বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ডের প্রভাবশালী ও হাইব্রিড নেতা, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বেশ কয়েকজন বিতর্কিত কাউন্সিলর হাইকমান্ডের নজরদারিতে রয়েছেন। ওই সব নেতার একটি তালিকা দলীয় প্রধানের টেবিলে রয়েছে।

জানা গেছে, ২০০৮ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। এর পর থেকে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। গত ১০ বছরে দল এবং সহযোগী সংগঠনের মধ্যে অনেকেই দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। অনেকের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন সময় দলকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দল থেকে আসা নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনে ভিড়ে স্বল্প সময়ে ফুলে ফেঁপে উঠেছেন, দলের সুনাম ক্ষুন্ন করছেন, বিভিন্ন সংস্থা এবং নিজস্ব সোর্স দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে ওই সব নেতার একটি তালিকাও দলীয় প্রধান সংগ্রহ করে রেখেছেন।

আগামী কাউন্সিলে যাতে ওই সব হাইব্রিড ও বিতর্কিত নেতাকর্মী আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনে স্থান না পায় সে জন্য শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে ছাঁটাই করার চিন্তাভাবনা রয়েছে দলটির। ইতোমধ্যে তা শুরু হয়ে গেছে। সম্প্রতি দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে শোভন-রাব্বানীকে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বর্তমানে চলছে যুবলীগে শুদ্ধি অভিযান। মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, জি কে শামীমকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী গ্রেফতারের পর যুবলীগ থেকেও তারা বহিষ্কার হয়েছেন। এছাড়া পিডিপি থেকে আসা বাংলাদেশ তাঁতি লীগের নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন বিশ্বাস, নেছার উদ্দিন আহম্মেদ, রফিকুল ইসলাম তালুকদারকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা জানান, বিভিন্ন নেতার ছত্রছায়ায় থেকে স্বল্প সময়ে অনেকেই ফুলে ফেঁপে উঠেছেন- এমন নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেই এই শুদ্ধি অভিযান। এদের কারণে অনেক ত্যাগী-পরীক্ষিত নেতাকর্মী দলীয়ভাবে সুযোগ পাচ্ছেন না। গত ১০ বছল তারা অবহেলিত রয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা অনেক উদার। তিনি দুঃসময়ের কাণ্ডারি ও পরীক্ষিত নেতাদের মূল্যায়ন করতে চান। আগামী কাউন্সিলে যাতে তাদের মূল্যায়ন হয় সেই দিকেই নজর দেয়া হচ্ছে। ফলে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী দুর্নীতির অভিযোগে কাউকে গ্রেফতার করলেই যেকোনো পর্যায়ের নেতা হোক না কেন সাথে সাথেই তার বিরুদ্ধে দলীয় অ্যাকশন শুরু হয়ে যাবে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, গত ১০ বছরে যারা বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন দল থেকে অনুপ্রবেশ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন, দুর্নীতি করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন সেসব নেতাকর্মীকে পরগাছা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রবেশ করে এই পরগাছারাই দলের ভাবমর্যাদা নষ্ট করছে। দলের সুনাম উদ্ধার করতে তাদের সাফ করতে হবে। ইতোমধ্যে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আগাছা-পরগাছা ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে আগামীতে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি বলেছেন, দলের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল করতে আগাছা-পরগাছা দূর করা হবে। যে যত বড় নেতাই হোক, যত প্রভাবশালীই হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। টেন্ডারবাজ, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজরা সাবধান হয়ে যান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। তিনি বলেন, অপরাধ ও অপকর্মের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সব অপকর্মের শাস্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

আগাছা-পরগাছা প্রসঙ্গে বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি বলেন, যারা বলছে আগাছা-পরগাছা, আগে তাদের ঠিক করতে হবে কোনটা গাছ আর কোনটা পরগাছা। গাছ দুর্বল হলেই আগাছার জন্ম নেয়। শক্তিশালী গাছে কখনো পরগাছা জন্ম নেয় না। মোট কথা হলো এসব কথাবার্তা বলে আওয়ামী লীগ জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার একটি অপচেষ্টা করছে। আর এগুলো করে কোনো লাভ হবে না। তিনি বলেন, যেসব দুর্নীতির গাছ আছে আগে তাদের মূলোৎপাটন করতে হবে। দুর্নীতির যে বটবৃক্ষ আছে জনগণ আগে তাদের মূলোৎপাটন চায়। কারণ দুর্নীতির বটবৃক্ষ না থাকলে তো আগাছা-পরগাছা জন্মায় না।