বিনোদন ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১০:০৬

নারী লোভী এক বৃদ্ধ মিডিয়া মুঘল রুপার্ট মারডক

রুপার্ট মারডক, মিডিয়া মুঘল হিসেবে সমধিক পরিচিত। নিত্য নতুন নারী, অর্থ আর সারাবিশ্ব ব্যাপী মিডিয়ার উপর একচ্ছত্র আধিপত্য। এক জীবনে সব পেয়েছেন তিনি। তার নারী আসক্তি নিয়ে অনেক সমালোচনা হলেও সমালোচকদের কথায় কান দেওয়ার সময় তার নেই। 

তিনি নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছেন প্লেবয়ের মত বিখ্যাত এডাল্ট ম্যাগাজিন। যার প্রচ্ছদে নগ্ন হয়ে ফটোশ্যূট করার জন্য পাগল হয়ে থাকতো নামকরা সব অভিনেত্রী। এছাড়াও গতানুগতিক সংবাদের থেকে বেরিয়ে এসে তিনি শুরু করেন ভিন্ন ধারার সংবাদ। যার মূল উপজীব্য ছিলো যৌনতা। বিখ্যাত ভারতীয় সাংবাদিক এম.ভি কামাথ বলেছেন, “Sex, money, crime- that is news!” কামাথের এই উক্তি বহু আগেই প্রতিষ্ঠিত করেছেন মারডক। নান্দনিক অঙ্গসজ্জার সাথে তিনি তার পত্রিকার পাতাগুলো ছেয়ে দেন চটুল, রসালো সব যৌন উত্তেজক সংবাদ, অপরাধ আর স্ক্যান্ডালে। ফলাফল? সমালোচকদের তীব্র সমালোচনা আর রাতারাতি পত্রিকার জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া!

১৯৩১ সালের ১১ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে জন্মগ্রহণ করেন কেইথ রুপার্ট মারডক। তার বাবা কেইথ মারডকও ছিলেন প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক। তার নামের মধ্যাংশ ‘রুপার্ট’ আসে তার দাদার নাম থেকে। মেলবোর্নের ছায়াঘন বৃক্ষ সমৃদ্ধ অঞ্চলে অবস্থিত ছিল মারডকের বাড়ি। সকালবেলা বাবার সমৃদ্ধ গ্রন্থাগারে বই পড়ে, আর বিকালে ঘোড়ার পিঠে চড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করেই কাটে তার শৈশব। প্রাথমিক শিক্ষা গৃহে সমাপ্ত করে জিলং গ্রামার স্কুল এবং অক্সফোর্ডের ওরচেস্টার কলেজে পড়ালেখা করেন তিনি। ১৯৫৬ সালে প্যাট্রিসিয়া বুকারকে বিয়ে করেন। একাধিক বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জের ধরে চলমান সাংসারিক বিবাদ চূড়ান্ত রূপ পায় ১৯৬৫ সালে ডিভোর্সের মাধ্যমে।

১৯৬৭ সালে মারডক দ্বিতীয়বার বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। আনা টর্ভের সাথে তার দ্বিতীয় সংসার স্থায়ী হতে হয়েও হলো না। ওয়েন্ডি ডেংয়ের প্রেমে পড়ে ১৯৯৯ সালে টর্ভের সাথে ৩২ বছরের সংসার জীবনের ইতি ঘটান মারডক। মাত্র ১৭ দিনের মধ্যেই ডেংকে বিয়ে করে ঘরে তোলেন তিনি। তবে চতুর্থ বউ ঘরে তোলেন ঠিক ১৭ বছর পর! ২০১৪ সালে ডেংকে ডিভোর্স দেন মারডক। দু’বছর পর ব্রিটিশ গায়ক মিক জ্যাগারের সাবেক স্ত্রী জেরি হলের সাথে গাঁটছড়া বাঁধেন তিনি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এখন হলের সাথেই আছেন মারডক! চার স্ত্রীর প্রথম তিনজনের ঘরে মারডকের ৬ সন্তানের জন্ম। বর্তমান স্ত্রী জেরি হলের ঘরে সন্তান নেই তার।

মিডিয়া মুঘল রুপার্ট মারডকের বয়স এখন ৮৭। তাই বলে বয়সের ভারে সংসার থেকে পিছুটান দিয়েছেন এমনটা ভাবলে ভুল হবে। সম্প্রতি তিনি বিয়ে করেছেন অভিনত্রী-মডেল জেরি হল। জেরি হলের বয়স ৫৯ বছর। তাদের বিয়েতে হল মহাধুমধাম। ধনকুবেরের বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন রাজনীতিবিদ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, বিভিন্ন পর্যায়ে সুপরিচিত তারকারা। লন্ডনে স্পেন্সার হাউসে ঘরোয়া অনুষ্ঠানে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন রুপার্ট-জেরি। এ সময় তার হাতে ছিল ২০ লাখ পাউন্ডের আংটি, পরনে ছিল নীল পোশাক। এগুলো রুপার্ট মারডক তাকে উপহার হিসেবে দিয়েছেন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। দুজনের বয়সের ফারাক ২৫ বছরের হলেও এক বছর চুটিয়ে প্রেম শেষে তারা বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। এবারই প্রথম বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন এমনটা ভাবলে ভুল হবে। তার প্রথম স্ত্রী অস্ট্রেলিয়ার প্যাট্রিসিয়া বুকার। সে ছিল মেলবোর্নের এক ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট। প্যাট্রিসিয়া তারও আগে কাজ করতেন এক দোকানে শপ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে। তার সঙ্গে দশ বছর সংসার করার পর বিচ্ছেদ ঘটান মারডক। তারপর ধরেন দ্বিতীয় বিয়ের পথ। এবার বিয়ে করেন আনা টোর্বকে। আনা টোর্ব সাংবাদিকতা করতেন। ১৯৬৭ সালে টোর্বকে বিয়ের পরই মূলত মারডকের নাম-খ্যাতি ছড়িয়ে পরে। দ্য টেলিগ্রাফের সেই সাংবাদিকের সঙ্গে প্রেমের বিয়ে টিকেছিল ৩০ বছর। কিন্তু মানসিক দূরত্বের কারণে আর সংসার করা হয়নি। দ্বিতীয় স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে মারডক খরচ করেন ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা পৃথিবীর অন্যতম ব্যয়বহুল বিবাহ বিচ্ছেদের একটি। লোকজন তখন মারডককে নিয়ে মুখোরচক কথা বলছে। তবে তাদের কথায় কান না দিয়ে তিনি দ্বিতীয় বিবাহ বিচ্ছেদের মাত্র ১৭ দিন যেতে না যেতেই করেন তৃতীয় বিয়ে। ১৯৯৯ সালে মারডকের দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের দুই সপ্তাহের মধ্যে তিনি ওয়েনডি ডেংকে বিয়ে করেন। ওয়েনডি ডেং ছিল মারডকের চেয়ে ৩৮ বছরের ছোট। তার স্ত্রী চীনা বংশোদ্ভূত ওয়েনডি ডেংয়ের সঙ্গে  সংসার এক যুগ পেরোতেই আবার বিবাহ বিচ্ছেদ করেন মারডক। ২০১৩ সালে তৃতীয় স্ত্রী ওয়েনডি ডেংয়ের সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর তিন বছর প্রেম করেন জেরি হলের সঙ্গে। অবশেষে এ বছর করেন চতুর্থ বিয়ে। মারডকের চার বিয়ে সূত্রে সন্তান রয়েছে মোট ছয়জন। তার ছেলে জেমস মারডক বর্তমানে টুয়েন্টি ওয়ান সেঞ্চুরি ফক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।

রুপার্ট মারডক ছিলেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের ভালো বন্ধু। তবে গুজব শোনা যায় সেখানেও রয়েছে নারী কেলেংকারী। সাবেক স্ত্রী টর্ভের সাথে ব্লেয়ারের পরকীয়া সম্পর্ক আছে সন্দেহে তিনি ব্লেয়ারের সাথে সম্পর্ক ছেদ করেন! মারডক একজন দূরদর্শী ‘মিডিয়াম্যান’ই নন, তিনি একজন চমৎকার ব্যবসায়ী এবং পরিকল্পনাবিদও বটে। প্রযুক্তি জগতে অধিকাংশই স্টিভ জবসকে একজন আদর্শ সিইও হিসেবে স্মরণ করে। ঠিক তেমনি মিডিয়া জগতের পুরোধা মারডকও হতে পারেন অনেকের আদর্শ। বিস্তর সমালোচনা থাকা সত্বেও মিডিয়া বিকাশে তার অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। ৮৭ বছর বয়সী রুপার্ট মারডক আজও কাজ করে চলেছেন অদম্য গতিতে। এই মিডিয়া মোগলের জীবনী থেকে মিডিয়া জগত নিয়ে স্বপ্ন দেখাদের তাই শেখার আছে অনেক কিছুই।