স্বাস্থ্য সেবা ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০৫:২৩

অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে হতে পারে মৃত্যু

ডেস্ক রিপোর্ট।। 

জ্বর-সর্দি-কাশি বা পেটখারাপ। মাথা ব্যথা, পিঠে ব্যথা বা গলায় যন্ত্রণা। এমন সব সাধারণ উপসর্গ দেখেও ডাক্তারের কাছে ছোটেন না। সোজা ওষুধের দোকানে গিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে গলাধঃকরণ করেন। কেউ কেউ গুগল সার্চ করেও দেখে নেন কোন রোগের কোন ওষুধ! একবারও ভাবেন না, এর পরিণতি কতটা ভয়ানক হতে পারে!

এতে যে শরীর শুধু অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হয়ে উঠছে তা নয়, ভবিষ্যতে এদের শরীরে আর অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করবে না বলে জানান চিকিৎসকরা।

সম্প্রতি ভারতে অনুষ্ঠিত ‘হসপিটাল ইনফেকশন ইন দ্য পোস্ট অ্যান্টিবায়োটিক’বিষয়ক এক শীর্ষক সম্মেলনে এমন উদ্বেগের কথা জানালেন দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্মান পদ্মশ্রী প্রাপ্ত চিকিৎসকরা।  এমন খবর প্রকাশ করেছে দেশটির সংবাদ সংস্থা সংবাদ প্রতিদিন।

ডা. রামন সারদানা জানান, অল্প বয়সিরা অসুস্থ হলে আর ডাক্তার দেখাচ্ছেন না। সরাসরি চলে যান ওষুধের দোকানে। অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খেতে শুরু করেন। জানেনও না যে অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়াই সেরে যেত তার অসুখ। এই যে সামান্য হাঁচি-কাশিতেও মুড়ি-মুড়কির মতো অ্যান্টিবায়োটিক। এতেই ক্রমশ ঘনাচ্ছে বিপদ। শরীরের ভেতরের জীবাণুগুলো চরিত্র বদল করতে থাকে। তারা অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে লড়াই করার সামর্থ্য অর্জন করে। এক সময় অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করেও আর জীবাণুগুলোকে মারা যায় না। অকালেই চলে যায় ওই যুবক। চিকিৎসা পরিভাষায় একেই বলা হয় ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স।’

আইন অনুযায়ী প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোনো ভাবেই অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া যাবে না। এতে শাস্তির বিধানও রয়েছে। কিন্তু নজরদারি করার লোক নেই।

আইসিইউতে ঢুকে গিয়েছে, তাহলে তো আর বেরোতে পারবে না। প্রিয়জন সম্বন্ধে এমন চিন্তাভাবনা প্রায়শই দেখা যায় হাসপাতালে। এক সমীক্ষা দেখা যায়, ভর্তি হওয়া প্রতি ১০০ জনের মধ্যে দু’জনের শরীরে অসুখ ছড়ায় হাসপাতালের আইসিইউ থেকে।

ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজিস্ট ডা. ভাস্কর নারায়ণ চৌধুরি বলেন, ‘আইসিইউ থেকে যে সমস্ত সংক্রমণ ছড়ায় তার মধ্যে মারাত্মক নিউমোনিয়া আর রক্তবাহিত সংক্রমণ। এই দু’ধরনের সংক্রমণে যারা আক্রান্ত হন তাদের মধ্যে ১০ শতাংশেরই মৃত্যু হয়। দেখা গিয়েছে এই মৃত্যুর পিছনেও অল্প বয়সে যথেচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার কারণই দায়ী।’

ডা. চৌধুরির মতে, পঞ্চান্নয় পৌঁছে রোগি যখন আমাদের কাছে আসেন তার আগের বিশ বছর উনি ইচ্ছেমতো অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে গিয়েছেন। ফলে শরীর অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হয়ে গিয়েছে। অতিরিক্ত ব্যবহারে ভোঁতা হয়ে গিয়েছে রোগ মারার অস্ত্র। কার্যত একারণেই সামনে এসেছে এক চমকপ্রদ তথ্য। দেখা গিয়েছে, সরকারি হাসপাতালে যারা ভর্তি হন তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেসরকারি হাসপাতালের রোগিদের তুলনায় অনেক বেশি।

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে সাধারণত গ্রামের প্রান্তিক মানুষরা চিকিৎসা করান। তারা খুব বেশি অ্যান্টিবায়োটিক খান না। ছোটবেলা থেকে জ্বর-সর্দি হলে প্রাকৃতিক উপায়ে তা সারান। অ্যান্টিবায়োটিক কম খান বলে এদের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক কাজও করে চটজলদি।’

এমতাবস্থায় মৃত্যু ঠেকাতে তাই অবিলম্বে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে রাশ টানতে বলছেন চিকিৎসকরা। অন্যদিকে আইসিইউতে মাস্ক, গ্লাভস এবং প্রতি রোগীর জন্য আলাদা আলাদা স্টেথোস্কোপ ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।