অপরাধ ও দুর্নীতি ১ মার্চ, ২০২১ ১২:০৫

সাদিয়া নাসরিনের কথিত ধর্ষণকান্ডে ফেসবুকে নারীবাদীদের সমালোচনার ঝড়

ডেস্ক রিপোর্ট

নিজেই আওরাতেন নারীবাদের বড় বড় বুলি পাশে দাঁড়াতেন নিপীড়িত নারীদের কখনো কখনো গণমাধ্যমে অতিথি হয়ে আসতেন নারীদের সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতেন  একাধিক লিখেখেন দেনমোহরের  বিরুদ্ধে

বলছিলাম তিন সন্তানের জননী সাদিয়া নাসরিনের কথা যিনি একাধারে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সকলের পরিচিত মুখ এবার তার তথাকথিত নারীবাদের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসলো আরো একটি নতুন রূপ

একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে কথিত ধর্ষণের মামলা দিয়ে কারি কারি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি যার ফলে অনেকটা নড়েচড়ে বসেছেন নারীবাদী সমাজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তুলেছেন সমালোচনার ঝড়

সাদিয়া নাসরিনের কথিক ধর্ষণকাণ্ডের বিরুদ্ধে ফেসবুক নারীবাদীদের সমালোচনার ঝড় নিজেই আওরাতেন নারীবাদের বড় বড় বুলি। পাশে দাঁড়াতেন নিপীড়িত নারীদের। কখনো কখনো গণমাধ্যমে অতিথি হয়ে আসতেন নারীদের সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতেন। একাধিক লিখেখেন দেনমোহরের বিরুদ্ধে। বলছিলাম তিন সন্তানের জননী সাদিয়া নাসরিনের কথা। যিনি কর্মরত ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে।

একাধারে যার কদর ছিল গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এবার তার তথাকথিত নারীবাদের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসলো আরো একটি নতুন রূপ। একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে কথিত ধর্ষণের মামলা দিয়ে কারি কারি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। যার ফলে অনেকটা নড়েচড়ে বসেছেন নারীবাদী সমাজ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তুলেছেন সমালোচনার ঝড়। সমাজের বিত্তবান পুরুষরাই সাদিয়ার মূল টার্গেটে। তিনি কখনো করতে প্রেমের অভিনয়, কখনো ব্যবসায়িক পার্টনার বা কখনো বিদেশে পাঠানো কথা বলে গড়ে তুলেন সখ্যতা। তারপর বিভিন্ন কাজের কথা বলে ডেকে নিতেন বাসায়। আর বাসায় গেলেই দেখা যায় তাদের আসল রূপ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে উঠা সমালোচনার চিত্র হুবহু আমাদের কাগজ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

সুপ্রীতি ধর:

দুটি ঘটনা আজকের এই ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখটাকে ব্যস্ত রাখলো আমাকে। এজন্য দিনশেষে নিজেকে কিছুটা ভর্ৎসনাও করছি। কারণ এই মুহূর্তে আমার একেকটি দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকগুলো কাজে হাত দিয়েছি। আবার এও ঠিক যে, দুটি ঘটনা ভিন্নমাত্রিক হলেও সমান গুরুত্বপূর্ণ, আলোচনার দাবি রাখে একইসাথে।

এক, একজন পরিচিত নারীবাদীর ১৮ লাখ টাকা কাবিনে বিয়ে করতে রাজী না হওয়ায় একজন পুরুষের বিরুদ্ধে ‘বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ’ এর অভিযোগ;

দুই, প্রথা ভেঙে ঋতুমতী অবস্থায় নিজে পুরোহিত হয়ে পূজা করলেন পশ্চিমবঙ্গের এক ছাত্রী।

এরই মধ্যে বাংলাদেশের অনলাইন জগত সরব প্রথম ঘটনাটিতে। গত কয়েক বছরে যারাই অনলাইন জগতে নারীবাদ ও নারীবাদী আন্দোলন নিয়ে ন্যুনতম আগ্রহও দেখিয়েছেন, তারা চেনেন সাদিয়া নাসরিনকে, যে নিজেকে নারীবাদী বলেই পরিচয় দেয়, এ নিয়ে তার কয়েকটা বইও আছে, লেখালেখির পাশাপাশি টিভি, টকশোতেও নারীবাদী দৃষ্টিকোণ থেকেই তিনি আলোচনাগুলো করে থাকেন। ফেসবুক সেলিব্রিটিও বলা চলে তাকে। সেই তিনি যখন কোন পুরুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন ‘বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ’ এর, তখন সবাই নড়েচড়ে বসে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক, শিক্ষিত, প্রতিষ্ঠিত, নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন, কনফিডেন্ট নারীকে কেউ ‘প্রলোভন’ দেখাতে পারে? তাও আবার বিয়ের?  এরকম অভিযোগ তো আমরা গ্রামের সেই প্রান্তিক, সুবিধাবঞ্চিত মেয়েটিকে করতে শুনি, যেগুলো পত্রিকার পাতায় আসে অহরহ। দুটি শিরোনাম না বললেই না, তাহলো, ‘বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে প্রেমিকার অনশন’ অথবা ‘সন্তানের পিতৃপরিচয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে প্রেমিকার অনশন’। আগে খুব হতো এই ঘটনাগুলো। এখনও হয়তো হয়, পত্রিকা পড়া হয় না বলে জানা হয় না। তখন খুব হাসতাম আমরা নিউজরুমে। দৃশ্যটা কল্পনা করার চেষ্টা করতাম যে একটি মেয়ে তাকে বিয়ে করার জন্য বা সন্তানের পিতৃত্বের দাবি নিয়ে প্রেমিকের বাড়িতে গিয়ে হাজিরই হয়নি শুধু, অনশনেও বসেছে। তখন আমার নিজেরও বয়সটা কম ছিল বলে এর ভিতরের গূঢ়ার্থটা তেমন করে ধরতে না পারলেও মেয়েটার জন্য একধরনের মায়া হতো, করুণা হতো। কিন্তু সেই ঘটনাগুলো ঘটতো গ্রামের অসহায় মেয়েদের সাথে। কারণ তাদের সামনে আর কোন পথই খোলা থাকতো না। থাকতো না বলেই এক নির্যাতনের শিকার হয়ে আরও বড় নির্যাতনের ফাঁদে পা দেয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকতো।

কিন্তু সাদিয়া নাসরিন কি অসহায় সেইসব নারীদের একজন? এরই মধ্যে জিডি হয়েছে থানায় এ নিয়ে। সম্ভবত অভিযুক্ত পুরুষটিকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। জানতে পারলাম যে, সেই লোক সাদিয়ার বাড়িতে তার এবং তার বাচ্চাদের সাথেই থাকতো, বাচ্চাদের সাথে সুসম্পর্কও তৈরি করেছে গত আড়াই-তিন মাসেই। এই যদি সত্যি হয়, তবে ‘ধর্ষণ’ শব্দটি এলো কোথা থেকে? যা হয়েছে তা তো পারস্পরিক সম্মতিতেই হয়েছে। এখন সেটিকে ‘ধর্ষণ’ বলে অভিহিত করে দেশে প্রকৃতপক্ষে ধর্ষণের শিকার নারীদেরই কি অপমান করা হচ্ছে না? দেশে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে যে আইনটি আছে, সেটিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে দিচ্ছে এই ঘটনা। এমনিতেও আমরা সাংবাদিকরা জানি যে এই আইনটির যথেচ্ছ ব্যবহার হরহামেশাই হচ্ছে। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এই আইনটির যে বরখেলাপ হয়, তাই তো মঞ্চস্থ হতে দেখছি এইক্ষেত্রেও। আর ১৮ লাখ টাকার কাবিনে বিয়ে করার দাবি, এবং তাতে রাজী না হওয়ায় এই যে ‘বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ’ বলে মামলা হলো, এতে করে কী প্রমাণ হলো? কাবিনের টাকার অংক এবং বিয়ে করতে রাজী হলে শব্দটা আর ‘ধর্ষণ’ থাকতো না? প্রলোভন শব্দটা তখন গায়েব হয়ে সব স্বাভাবিক হয়ে যেতো? সাদিয়া তখন সেই ব্যক্তির সাথে সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে থাকতো?

এতোদিন ধরে নারীবাদ নিয়ে এতো জ্ঞানগর্ভ লেখালেখি করে, সাধারণ মেয়েদের ভরসার জায়গা হয়ে উঠে, এ কেমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো সাদিয়া? কেনই বা করলো? প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে গিয়ে এতোটা নিচে নামতে হলো? আর ওই যে পুরুষটা, যে কিনা নিজের স্ত্রী, সন্তান, সংসার ফেলে এসে অন্যের বাড়িতে উঠে দিব্যি সংসার সংসার খেলা খেলছিল, তারই বা কী শিক্ষা? কী রুচি? তার বিরুদ্ধে তো তার স্ত্রীরও অভিযোগ আনা উচিত।

মনটা যখন বিষিয়ে ছিল এ নিয়ে, তখনই পশ্চিমবঙ্গের খবরটা চোখে পড়ে। এক বন্ধুর সাথে শেয়ার করাতে বললো, মেয়েটাকে পূজাই বা করতে হবে কেন? বললাম, সব তো আর একদিনে, এক তুড়িতেই পরিবর্তিত হয়ে যাবে না। আমি, আমরা চাইলেই কি পৃথিবী থেকে ধর্মীয় বিশ্বাস উধাও হয়ে যাবে? যাবে না। বরঞ্চ এই যে মেয়েদের পূজা করার বিধান নেই, তার ওপর পিরিয়ডের সময় পূজার ঘর, বা ক্ষেত্রভেদে রান্নাঘরে যাওয়ারও বিধান নেই, সেই জায়গাগুলোতে এই যে ধীরে ধীরে পরিবর্তনগুলো আসছে, এটা কি প্রশংসার দাবি রাখে না? অবশ্যই রাখে। কিছুদিন আগে ডেনমার্কের মুসলিম নারী ইমামের কথা লিখেছিলাম। অনেকে গালিগালাজ করেছিল সেই লেখাটির নিচে। দেশেই তো কিছুদিন আগে নারীর নিকাহ করানো নিয়ে তোলপাড় হয়ে গেল। এই যে মেয়েরা প্রথা ভাঙছে, বেরিয়ে আসার মতোন শক্তি অর্জন করছে, এটাও অনেক বড় পাওয়া। স্যালুট উষসী নামের সেই মেয়েটিকে, যে পিরিয়ডকালীনই সরস্বতী পূজা করে দেখিয়ে দিয়েছে, মেয়েরাও পারে। ওকে দেখে আরও অনেকসংখ্যক মেয়ে বেরিয়ে আসবে সমাজে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস। ওপার বাংলায় মেয়েরা বেশ আগে থেকেই বিয়ের পৌরহিত্যও করছে। কিছুদিন আগে এমনই একটা সিনেমাও দেখলাম, যাতে স্পষ্টই বলা হয়েছে, একটু একটু করেই দীর্ঘদিন ধরে সমাজে চলে আসা নিয়মগুলো ভাঙতে হবে, ভাঙবেই একদিন। আমরা তো সেই দিনটার আশাতেই আছি।

আবারও ফিরি সাদিয়া নাসরিনের কথায়। যে সাদিয়া নিজে স্টিয়ারিংয়ে হাত রেখে ঘুরে বেড়ায়, যে নিজের জীবনের স্টিয়ারিংয়ের দায়িত্বও নিয়ে নিয়েছিল অনেক আগেই, সেই সাদিয়া কেন বিয়ের প্রলোভনে প্রলুব্ধ হবে? শুধু প্রলুব্ধই না, যে দেনমোহরের বিরুদ্ধে সে লিখেছে অনেক আগেই, সে নিজেই টাকা দাবি করলো? রাজী না হওয়ায় পারস্পরিক সম্মতির সম্পর্কটাকে ‘ধর্ষণ’ বলে রায় দিয়ে দিল? জেনেশুনেই একজন বিবাহিত পুরুষকে প্রশ্রয় দিল? আজকের এই ঘটনায় সাদিয়া কি হেরে গেল না ওই ২২ বছর বয়সী উষসী মেয়েটার কাছে? উষসী পথ দেখালো হাজারও মেয়েকে, আর সাদিয়া? সে তো বিমুখ করলো মেয়েদের। কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিল অন্যদের। বিশেষ করে আমাদের।

অনেকেই এই ঘটনায় আবারও কোমর বেঁধে নেমেছে নারীবাদীদের গোষ্ঠী উদ্ধারে। এটাই স্বাভাবিক। নারীবাদী বলে পরিচিত একেকজনের দুদিন পর পর একেক ঘটনায় সবাই বিমর্ষ। আমি নিজেও দ্বিধান্বিত হয়ে আছি সারাদিন ধরে। তাহলে আমরা যারা ‘আন্দোলনে আছি’ বলি, আমাদের মূল আন্দোলনটা কোথায়, কার বিরুদ্ধে? আদর্শটা কী আসলে? আমাদের নৈতিক শিক্ষার পাঠ আসলে কী? ব্যক্তি আমাকে যখন অন্য মেয়েরা অনুসরণ করে, তারা তখন কী বার্তাটা পাবে আজ যদি আমি নিজেই নিজের সাথে দ্বিচারিতা করি?

আমার মনে হয়, আমাদের সবারই নিজের দিকে তাকাবার প্রয়োজন আছে। আমরা কী বলি, কী চাই, আমাদের চলন-বলনের সাথে আমাদের শিক্ষার কোন তারতম্য আছে কিনা, এগুলো জরুরি পাঠ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের এমন ‘আচরণ’ গ্রহণযোগ্য নয়।

সবাইকে মহান একুশের শুভেচ্ছা।

 

প্রমা ইসরাত:

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ধারা ৯ (১) এর ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে, যদি কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ১৬ বছরের অধিক বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতি ছাড়া বা ভয় ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তাহার সম্মতি আদায় করিয়া, অথবা ষোল বছরের কম বয়সের কোন নারীর সাথে সম্মতিসহ বা সম্মতি আদায় করিয়া যৌন সঙ্গম করেন, তবে তিনি ওই নারীকে ধর্ষণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে।

কেস স্টাডি:
পল্লবী থানায় একজন ৪১ বছর বয়সী নারী যিনি একটি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক, যার তিনজন সন্তান আছে, এবং সন্তানের পিতাদের সাথে যার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। তিনি আরেকজন ৪৬ বছর বয়সী পুরুষের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছেন। ধর্ষণের পয়েন্ট হচ্ছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (১), প্রতারণা তথা “বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক”।

মামলার কপিতে উল্লেখ করা আছে যে, লোকটির স্ত্রী নেই বলে লোকটি দাবী করেছিলো এবং নারীটিকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি এরপর সেই প্রতিশ্রুতি রাখেননি। সেই ব্যক্তি নারীটির বাড়িতে থেকেছেন এবং সেখানে বসবাস করেও নারীটির সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছেন।
ধর্ষণের যে সংজ্ঞা বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ১৮৬০ এ উল্লেখ করা আছে, সেখানে সম্মতি একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

উপরের কেস স্টাডিতে নারীটির সম্মতিতেই যৌন সম্পর্ক ঘটেছিলো, অর্থাৎ যৌন সম্পর্কের সময় কোন বলপ্রয়োগ, ভয় ভীতি প্রদর্শন, সে রকম কিছুই ছিল না। অথচ পুরুষটি যখন বিয়ে করবে না বলে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছে, তখনই নারীটি ধর্ষণ হিসেবে মামলা দায়ের করেছে। অর্থাৎ পুরুষটি যদি বিয়ে করতে রাজী হয়ে যায় তবে, মামলা তুলে নিবে নারী। আবার নারীটি যদি এখন দাবি করেন যে (ধরে নিচ্ছি) ১৮ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিয়ে করতে হবে, তবে এক্ষেত্রেও পুরুষটি বিপদে পড়েন।

তার মানে, নরনারীর সম্পর্কে এই পয়েন্ট অনুযায়ী রিস্ক থাকে যে, একজন নারী তার কাঙ্ক্ষিত দেনমোহর না পেলে প্রেমিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা করতে পারে। অথচ একজন মানুষের সম্পূর্ণ অধিকার আছে বিয়ের ক্ষেত্রে নিজের মতামত প্রদানের। তিনি বিয়ে করতে রাজীও হতে পারেন, বিয়ে না করতেও মত দিতে পারেন।

অপরদিকে একজন নারী যদি এরকম সম্পর্কে থেকেও বিয়ে করতে রাজী না হোন, তবে পুরুষের কোন জায়গা থাকে না আইনী প্রতিক্রিয়া পাওয়ার। আমরা জানি, আমাদের সোসাইটিতে এক প্রকার মানুষ আছে যারা “গোল্ড ডিগার”, মানে সুবিধালোভী/অর্থলোভী। সেরকম কোন মানুষ যদি নারী হোন, তাহলে তিনি প্রেমিকের পকেট ধসিয়ে, পরে তাকে বিয়ে না করলেও পুরুষটির কোন বক্তব্য থাকে না।

আবার এই বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ এর পয়েন্ট, বিয়ে পরবর্তী ম্যারিটাল রেইপ, অর্থাৎ বৈবাহিক ধর্ষণের পয়েন্টকে অস্বীকার করে।
বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ এই বিষয়টি প্রতিষ্ঠা করে যে
১। একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীকে প্রলোভন দেখিয়ে সঙ্গমে রাজী করানো যায়, কিন্তু পুরুষকে যায় না।
২। বিয়ের মাধ্যমে ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য একটি অপরাধ জায়েজ হয়ে যায়।
৩। নারীর যৌন সম্পর্ক হয়েছে মানে, তার অন্য কোন সমাধান নেই বিয়ে ছাড়া।
৪। নারীই এই অভিযোগ করতে পারবে কারণ নারীর জন্য যৌন সম্পর্ক হয়ে যাওয়া অনেক বড় একটি ব্যপার, কিন্তু পুরুষের জন্য নয়।

উপরের যে ঘটনাটি কেস স্টাডিতে উল্লেখ আছে, সেখানে নারীটির সাথে যা ঘটেছে তা সেক্সুয়াল এক্সপ্লয়টেশন। সেক্সুয়াল এক্সপ্লয়টেশন আর ধর্ষন এক বিষয় নয়।
যে কোন সম্পর্কে ম্যানুপুলেশন, গ্যাস লাইটিং, লাভ বোম্বিং এগুলোর মাধ্যমে এক্সপ্লয়ট করে একটা সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন কেউ। সেই সেক্সুয়াল এক্সপ্লয়টার নারীও হতে পারে, পুরুষও হতে পারে।

আমাদের দেশে, সেক্সুয়াল এক্সপ্লয়টেশন নিয়ে সুস্পষ্ট কোন আইন নেই। এই আইন নেই বলেই সেক্সুয়াল এক্সপ্লয়টেশনকে ধর্ষণ বলে চালিয়েই মামলা দিয়ে দেয়ার প্রবণতা আছে।
এতে যেটা হচ্ছে, যারা আসলেই ধর্ষণের শিকার হয়েছে, তাদের ধর্ষকের সাথে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, এবং বিয়ের মাধ্যমে সেই ধর্ষণ জায়েজ করা হচ্ছে। এভাবে একটা অন্যায় থেকে উদ্ধার করার জন্য আরেকটা অন্যায় করা হচ্ছে, যেটাতে কোনভাবেই ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয় না।

সেক্সুয়াল এক্সপ্লয়টেশন, সামাজিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে, এবং বিশেষ করে মানসিকভাবে একজন মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে দেয়। কিন্তু বিষয় হচ্ছে এটা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে না। আইনী কোন প্রতিকার নেই। কেউ অভিযোগ করলেও, জাস্ট মুভ অন, এগিয়ে যাও, বাদ দাও, এইটুকু সান্ত্বনা বাণী ছাড়া আর অন্য কোন প্রতিকার পাওয়া যায় না। বছরের পর বছর ডিপ্রেশনের ওষুধ, সাইকোলজিস্ট, সাইকিয়াট্রিস্ট এর কাছে যাওয়া, সেখানের ব্যয়ভার বহন, এটাও সেই ব্যক্তিকেই করতে হয় যার এটা অসুখ। এই ব্যাপারটা নিয়ে কেউ কথা বলে না সাধারণত।

অপরাধের ধরন বদলে গেছে। আমাদের সমাজ এবং রাষ্ট্র যেহেতু নারী অবান্ধব, তাই এখানে নারী জড়িত এরকম সব জায়গায় একটা ভেজাল থাকবে।
খুন, নরহত্যা, দুর্ঘটনায় মৃত্যু এগুলো যেমন আলাদা আলাদা সংজ্ঞায় আছে, তেমনি ধর্ষণ, যৌন সহিংসতামূলক অপরাধ, সেক্সুয়াল এক্সপ্লয়টেশন, এগুলোরও আলাদা আলাদা সংজ্ঞা থাকতে হবে।

আর সেক্সুয়াল এক্সপ্লয়টেশন যৌনতাভিত্তিক সহিংসতার সংজ্ঞায় উল্লেখ থাকতে হবে যে এটা নারী, পুরুষ, ট্রান্সজেন্ডার সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

লেখক: আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী