সারাদেশ ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০৪:৩৭

জামিনে বেরিয়ে আবার ইয়াবা ব্যবসায়

রুহুল আমিন

কোনভাবেই লাগাম টানা যাচ্ছে না মরণ নেশা ইয়াবার। মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে টেকনাফে ইয়াবার বড় বড় চালান প্রবেশ করছে। তারপরই ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। প্রশাসনের হাতে ধরা পড়ছে কেবল ৮ থেকে ১০ শতাংশ।

মাদক পাচার ঠেকাতে পুলিশের বেশ তৎপরতা থাকলেও সেই তুলনায় উদ্ধার কম। কোস্টগার্ড ও বিজিবির হাতে প্রায়শই ধরা পড়ছে ইয়াবার বড় বড় চালান সাথে মামলা হচ্ছে জড়িতদের বিরুদ্ধে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ তদন্তের জটিলতা এড়াতে পাচারকারী হিসেবে মামলা না দেওয়ায় সহজেই জামিনে বেরিয়ে ফের ইয়াবা ব্যবসায় নেমে পড়ছে আসামিরা। মরণ নেশা ইয়াবা বিদেশ থেকে চোরাচালানি হিসেবে আনা হলেও মামলা হচ্ছে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে। একইভাবে প্রতিবেশী দেশ থেকে ফেনসিডিল ও গাঁজা চোরাইপথ দিয়ে পাচার করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিচ্ছে। মাদকের ওইসব মামলাও হচ্ছে শুধু মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে। যার কারণে আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে কম সময়ে জামিনে বেরিয়ে যাচ্ছে মাদক চোরাকারবারিরা।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে সারা দেশে ৩৩ হাজার ৫৫১টি মাদক মামলা হয়েছে। মহামারী করোনায়ও থেমে থাকেনি মাদক কারবারিরা। গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌরসভার ছোলনা গ্রামের বাসিন্দা কাইয়ূম মোল্যা নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে এর আগেও ১৫টি মাদকের মামলা ছিল। অল্প সময়ে আইনের ফাঁক গলিয়ে ওই ১৫টি মামলায় জামিন নিয়ে ফের একই ব্যবসা শুরু করে।

গত শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে উত্তরা পূর্ব থানার আবদুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ কাঁচাবাজার থেকে ৩০ হাজার ইয়াবাসহ দুজনকে গ্রেফতার করে ডিবির গুলশান বিভাগ।

তারা হলেন- আবদুর রহমান ও মো. নাজিরুল ইসলাম। এ সময় তাদের কাছ থেকে ইয়াবা বহনে ব্যবহৃত একটি ট্রাকও জব্দ করা হয়।

রাজধানীতে প্রতিদিনই মাদকবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। এরপরও থেমে নেই মাদক কারবারিরা। কেউ মাদক বিক্রি করছে আবার কেউ মাদক গ্রহণ করছে। এদের সঙ্গে প্রতিদিনই নিত্যনতুন মাদক কারবারিরা যোগ হচ্ছে।

সর্বশেষ মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডী ঘাট থেকে সমুদ্র পথে পাচার হয়ে আসা ৭ বস্তা ভর্তি ১৪ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সদস্যরা। এসময় আটক করা হয়েছে ২ জনকে। জব্দ করা হয়েছে পাচার কাজে ব্যবহৃত ট্রলারটিও। ওই অভিযানের সূত্র ধরে সন্ধ্যায় আটক এক জনের বাড়ি থেকে নগদ ১ কোটি ৭০ লাখ ৬৮ হাজার ৫ শত টাকা উদ্ধার করা হয়। এসময় আটক করা হয় ২ জনকে।

আটককৃতরা হলেন- কক্সবাজার পৌরসভার উত্তর নুনিয়ার ছড়া মো. নজরুল ইসলামের ছেলে মো. জহিরুল ইসলাম ফারুক (৩৭), একই এলাকার মো. মোজ্জাফরের ছেলে মো. নুরুল ইসলাম বাবু (৫৫), ফারুকের শাশুড় আবুল হোসেনের ছেলে আবুল কালাম (৫৫) ও আবুল কালামের ছেলে শেখ আবদুল্লাহ (২০)।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান জানান, এ চালানটি কক্সবাজারের সর্ববৃহৎ ইয়াবার চালান। ফারুক ফিশিং ট্রলারের আড়ালে মাদকের ব্যবসায় জড়িত। ফারুকের মতো বেশ কিছু মাদক

ব্যবসায়ীর সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। এরা শক্তিশালী সিন্ডিকেট গঠন করে নানা কৌশলে ইয়াবা কারবার চালাচ্ছে। এ রকম ৮০ জনের একটি তালিকা তৈরি করে পুলিশ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর বনানী থানার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী শরীফ ওরফে পাগলা শরীফ। মহাখালী স্কুল রোডে দাদা হোটেলের পিছনে নূরানী মসজিদের পাশের গলিতে তার বাড়ী। আবদুল আলীর ছেলে শরীফ পুলিশের সোর্স হিসেবেও কাজ করেন। নিজ বাড়ীতেই পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে করেন মাদক ব্যবসা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ১২ জুন, ২০১৮ নিজ বাড়ী থেকেই শরিফকে ১২০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। মামলা হয় বনানী থানায়। একমাস পরেই জামিনে বের হয়ে যান জেল থেকে। পরে ২০১৯ সালে ঈদুল আযহার আগে শরীফকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর আবার ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠালে ঈদের পরে জামিনে বের হয়ে কৌশল পাল্টে আবার ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে বনানী থানায় তার নামে পাঁচটি মাদক মামলা রয়েছে।

২০১৮ সালে মে মাসের শেষে ৬০পিছ ইয়াবাসহ বাড্ডা থানায় গ্রেফতার হয়েছিলেন বনানী মহাখালী এলাকার মাদক ব্যবসায়ী মানিক। মহাখালী পুরাতন বাজারে 'মা ইলেকট্রনিক্স' নামক দোকানে কৌশলে ইয়াবা ব্যবসা করতেন। জেল থেকে জামিনে বের হওয়ার পর দোকানটি ছেড়ে দিয়ে এখন তিনি পাঠাও চালকের ছদ্দবেশে ভ্রাম্মমান ইয়াবা ব্যবসায়ী।

একটি সূএে জানা যায়, মানিক এখন মহাখালী, দক্ষিনখান ও তেঁজগাও এলাকায় ইয়াবা ব্যবসা করছেন।

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সম্পর্কগত ও মনস্তাত্ত্বিক বিষয়াদিসহ যেসব কারণে মানুষ মাদকের ব্যবসা বা নেশায় জড়িয়ে পড়ে তার প্রতিকার না করে শুধু আইন প্রয়োগ করে এর সমাধান মোটেও সহজ নয়। আবার যে কোনো উপায়ে দেশে মাদক প্রবেশ করে বহু হাত ছড়িয়ে পড়লে পুলিশের জন্য তার নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিকারও অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। তারপরও মাদক নিয়ন্ত্রণে আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। এমনকি যে কোনো প্রকার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের সত্যতা পেলে পুলিশ সদস্যদের বিরদ্ধেও নেওয়া হচ্ছে কঠোর ব্যবস্থা।

এ বিষয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, মাদকের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের অবস্থান কঠোর। যারা ইয়াবা ছাড়তে পারেন না কিংবা যারা জড়িত হচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে র‌্যাব কঠোর হুঁশিয়ারি দিচ্ছে। তাদের গ্রেফতার করা হবে।