আন্তর্জাতিক ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০২:৪১

উইগুর ইস্যুতে গভীরভাবে বিচলিত যুক্তরাষ্ট্র

ডেস্ক রিপোর্ট

চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে ক্যাম্পে আটক উইগুর নারীদের ধর্ষণ এবং যৌন নির্যাতনের সংবাদ পাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা গভীরভাবে বিচলিত। অবস্থা চীনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে।

বুধবার বিবিসির একটি প্রতিবেদনে ক্যাম্পে আটকে রেখে উইগুর অন্যান্য মুসলিম নারীদের ওপর কীভাবে ধর্ষণ যৌন নির্যাতন চালানো হচ্ছে সে বিষয়টি তুলে ধরা হয়।

বেশ কয়েকজন প্রাক্তন বন্দী এবং একজন প্রহরীর সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে ওই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। তারা জাতিগত উইগুর এবং অন্যান্য মুসলিম নারীদের ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন এবং নির্যাতনের অভিযোগের বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন।

তারা বিবিসিকে বলেছেন, তারা গণধর্ষণ, যৌন নির্যাতন এবং নির্যাতনের একটি সংগঠিত ব্যবস্থা সেখানে দেখেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন মুখপাত্র বলেছেন, এই ধরনের নৃশংসতা বিবেককে মর্মাহত করেছে। ধরনের কৃতকর্মের জন্য অবশ্যই গুরুতর পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে। চীনকেআন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের তাৎক্ষণিক এবং স্বাধীন তদন্তেরঅনুমতি দিতে হবে।

 

জিনজিয়াংয়ে চীন গণহত্যা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে মুখপাত্র বলেন, জিনজিয়াংয়ে জাতিগত উইগুর এবং অন্যান্য মুসলমানদের জন্য ইন্টার্নশিপ ক্যাম্পে নারীদের ওপর ধর্ষণ যৌন নির্যাতনের অভিযোগ পেয়ে আমরা গভীরভাবে বিচলিত।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরের মন্ত্রী নাইজেল অ্যাডামস বলেছেন, এই প্রতিবেদনে পরিষ্কারভাবে খারাপ কাজ দেখানো হয়েছে এবং স্বাধীন তদন্তকারীদের এই এলাকায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য চীনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

ছায়া পররাষ্ট্র দপ্তরের মন্ত্রী স্টিফেন কিনক বলেছেন, এই রিপোর্ট বিশ্বের বিবেকের ওপর কলঙ্ক। মার্কিন উদাহরণ অনুসরণ করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানাচ্ছি।

যুক্তরাজ্য জিনজিয়াং ডিটেনশন ক্যাম্পের কুশীলব কর্মকর্তাদের নাম জানে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সিনিয়র টরি স্যার ইয়ান ডানকান স্মিথও নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ডিটেনশন ক্যাম্পে উইগুরদের শুদ্ধ করার নামে ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হচ্ছে। আমাদের কাছে প্রয়োজনীয় সব প্রমাণ আছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্যাতনের শিকার নারীদের অভিযোগ স্বাধীনভাবে যাচাই করার সুযোগ পাওয়া যায়নি। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিবরণ, ভ্রমণ নথি, স্যাটেলাইট চিত্রসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে তাদের বক্তব্য সামঞ্জস্যপূর্ণ।

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস পেইন বলেছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জিনজিয়াংয়ে অবিলম্বে, অর্থবহ এবং নিরবচ্ছিন্ন প্রবেশাধিকার দিতে হবে।

জিনজিয়াংয়ে উইগুর মুসলিমদের গণবন্দী, জোরপূর্বক শ্রম, নারীদের জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ, ব্যাপক ডিজিটাল এবং ব্যক্তি নজরদারি এবং ধর্মীয় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড দমনের অভিযোগ উঠেছে চীনের বিরুদ্ধে। তবে চীন জিনজিয়াংয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং গণহত্যার সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। দেশটি বলছে, উইগুরদের শিবিরগুলো চরমপন্থা প্রতিরোধের জন্য তৈরি করা হয়েছে এবং সেগুলো বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বিবিসিকেমিথ্যা প্রতিবেদনকরার জন্য অভিযুক্ত করেছেন।

তিনি দাবি করেন, যে নারীরা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, তারা মিথ্যা বলেছেন। জিনজিয়াংয়ে সকল জাতিগত গোষ্ঠীর মানুষ শান্তি সম্প্রীতির মধ্যে বাস করে। তাদের সব আইনি অধিকার কার্যকরভাবে নিশ্চিত করা হয়।

বিবিসির প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিশ্বব্যাপী উইগুর সম্প্রদাযয়ের মানুষ আতঙ্কিত। কারণ অনেকের আত্মীয় স্বজনকে ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান