কৃষি ১৭ জানুয়ারি, ২০২১ ১২:২০

সেচের খরচ কমাতে যে নির্দেশনা দিলেন কৃষিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফসল উৎপাদনে সেচের খরচ অনেক কমেছে। এটিকে আরও কমিয়ে আনতে উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।

আজ রোববার রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে বিএডিসি অডিটোরিয়ামে ‘ভূগর্ভস্থ পানি মনিটরিং ডিজিটালাইজেশন’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

বিএডিসি ‘ক্ষুদ্রসেচ উন্নয়নে জরিপ ও পরিবীক্ষণ ডিজিটালাইজেশন প্রকল্পের’ আওতায় এ সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারের আগে কৃষিমন্ত্রী সেচ ভবন কমপ্লেক্সে নবনির্মিত রেস্ট হাউজের উদ্বোধন করেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, দেশের সেচ দক্ষতাকে ৩৮ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ উন্নীত করা হবে, যেন ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়ে ও সেচ খরচ আরও কমে আসে। পানির টেকসই ব্যবহার ও পানিসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়াতে সরকার অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে। নদী-খাল খনন ও পুনঃখনন, রাবার ড্যাম, জলাধার নির্মাণ, পানি সাশ্রয়ী পদ্ধতির ব্যবহারসহ অনেক উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে। এর ফলে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে এবং এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, কৃষিবান্ধব বর্তমান সরকারের আমলে দেশে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ, সেচ খরচ হ্রাস ও সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বর্তমান সরকার সবসময়ই কৃষি ও কৃষকের কল্যাণে নিয়োজিত। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু কৃষি বিপ্লবের উপর অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু সেচের সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে নিয়েছিলেন যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তিনি নগদ ভর্তুকি ও সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে কৃষকের মাঝে সেচযন্ত্র বিক্রির ব্যবস্থা করেন। জামার্নি থেকে জরুরী ভিত্তিতে পানির পাম্প এনেছিলেন।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ১৯৭১-৭২ সাল থেকে ১৯৭৪-৭৫ সালে-এই ৩ বছরে অগভীর নলকূপের সংখ্যা ৬৮৫টি থেকে বেড়ে ৪ হাজার ২৯টি, গভীর নলকূপের সংখ্যা ৯০৬টি থেকে ২ হাজার ৯০০টি এবং পাওয়ার পাম্পের সংখ্যা ২৪ হাজার ২৪৩টি থেকে ৪০হাজারে দাড়াঁয়। সে ধারা অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারও সেচের আধুনিকায়নের মাধ্যমে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ ও সেচ খরচ কমাতে নিরলস কাজ করছে। ফলে সেচের এলাকা সম্প্রসারণের পাশাপাশি কমে এসেছে সেচ খরচও।

বিএডিসির তথ্যে জানা যায়, বর্তমান সরকারের কৃষিবান্ধব নীতির ফলে গত ১০ বছরে সেচ এলাকা সম্প্রসারণ হয়েছে ১০ দশমিক ৫০ লাখ হেক্টর। খাল পুনঃখনন করা হয়েছে ৯ হাজার ৪৫৭ কি.মি। সেচনালা স্থাপন করা হয়েছে ১৩ হাজার ৩৫১ কি.মি. এবং ১০টি রাবার ড্যাম ও ১টি হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে সেচ এলাকা ৫৬ দশমিক ২৭ লাখ হেক্টরে, সেচ দক্ষতা ৩৫ শতাংশ থেকে ৩৮ শতাংশে এবং ভূপরিস্থ পানির ব্যবহার ২১ শতাংশ থেকে ২৭ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব হয়েছে। সেচযোগ্য জমির ৭৩ শতাংশ সেচের আওতায় এসেছে।

এছাড়া সেচের আধুনিকায়নে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সেচকৃত এলাকা ৬০ লাখ হেক্টর, সেচ দক্ষতা ৩৮ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ এ উন্নীতকরণ, সেচকাজে ভূপরিস্থ পানির ব্যবহার ৩০ শতাংশে উন্নীত এবং ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার ৭০ শতাংশ হ্রাস করা।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিসচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম। বিএডিসির চেয়ারম্যান মো. সায়েদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেচ ও পানি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ, সিইজিআইএসের নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা আবদুল্লাহ খান, প্রকল্প পরিচালক মো. জাফর উল্লাহ ও বিএডিসির সদস্য পরিচালক (ক্ষুদ্রসেচ) মো. আরিফ বক্তৃতা করেন।