অপরাধ ও দুর্নীতি ৯ জানুয়ারি, ২০২১ ০৭:২১

রশিদ জালিয়াতি করে ‘ঢাকা ট্যাক্সেস বারের চাঁদার টাকা হরিলুট’

রায়হান শোভন

ঢাকা ট্যাক্সেস বারের সদস্যদের চাঁদা ও সদস্য নবায়ন ফি নিয়ে চলছে নয়ছয়। সদস্যদের চাঁদা ও নবায়ন ফি ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেনের কথা থাকলেও বারের একটি জালিয়াত চক্র কৌশলে টাকা পরিশোধের সিল দিয়ে ব্যাংকে টাকা জমা  না দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

এ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে ট্যাক্সেস বারের সদস্যদের সাথে প্রতারণা করে আসছিল। এতোদিন তারা খুব সুসংগঠিতভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করায় বিষয়টি কারো নজরে আসেনি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে চক্রটির অভ্যন্তরে টাকা লেনদেনের বিষয়ে কোন্দল সৃষ্টি হলে বিষয়টি সবার নজরে আসে। এ বিষয়ে বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুফি আল মামুন মাহবুবুর রহমান রুবেলসহ মশিউর রহমান, সুজন চক্রবর্তী, মোস্তাফিজুর রহমান, অভিজিত দাশ চক্র এই অপকর্মের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। তবে নিজের অপকর্ম ঢাকতে সাধারণ সম্পাদক নিজেই স্বপ্রণোদিত হয়ে একটি মামলা করেছেন হাতে নাতে নকল সিল দিয়ে টাকা আদায় করে ধরা পরা বারের কর্মচারী আকতার ফিরোজ রাসেলের বিরুদ্ধে বলেও গুঞ্জন তৈরি হয়েছে।

r

তবে এ অভিযোগের সত্যতা অস্বীকার করে বারের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সুফি আল মামুন আমাদের কাগজকে বলেন, আমি এ ধরনের কোনো অপকর্মের সাথে জড়িত নই। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা হয়েছে। আমরা ওই কর্মচারীকে হাতেনাতে রিসিট জালিয়াতির সাথে ধরে ফেলায় এর সাথে জড়িতরা বিষয়টি ঘোলাটে করার জন্য আমার নামে মিথ্যাচার করছে।

এক্সিকিউটিভ বডির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

প্রসঙ্গত, ঢাকা ট্যাক্সেস বারের রশিদ জালিয়াতি করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি প্রথম নজরে আসে গত ১২ সেপ্টেম্বর। সেদিন বারের সদস্য মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেনের সদস্য নম্বর (S 01017) কাছ থেকে ৭ মার্চ ২০২০ তারিখে সদস্য চাঁদা বাবদ ব্যাংকে জমা দেয়ার জন্য ১৪ হাজার ৭০০ টাকা গ্রহণ করে বারের কর্মচারী মো. আকতার ফিরোজ রাসেল। এবি ব্যাংক কাকরাইল শাখায় জমা না দিয়ে জাল সিল তৈরি করে ওই সদস্যকে একটি রশিদ দেন। এবং তা আদায় হয়েছে হিসেবে সদস্য রেজিস্টার নথিভুক্ত করেন। এ ঘটনা হাতেনাতে ধরেন বর্তমান কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন।

এভাবে সদস্যদের চাঁদার কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ব্যাংকে অন্তত সাড়ে তিন কোটি টাকা জমা থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে মাত্র ৮৫ লাখ টাকা জমা রয়েছে। পরিশোধ দেখিয়ে ব্যাংকে জমা না দিয়ে আত্মসাত করছে অফিসের কর্মচারীর মাধ্যমে বর্তমান কমিটির একটি সংঘবদ্ধ চক্র।

বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর সাধারণ সম্পাদক সুফি আল মামুন বাদি হয়ে রমনা থানায় ৪২০, ৪৬৮, ৪৭৩ ও ৪০৮ ধারায় মামলা দায়ের করেনম, মামলা নম্বর ০৫। পরে ওই কর্মীকে থানায় সোপর্দ করা হয়।

h

এরপর জরুরি ভিত্তিতে অডিট কমিটি করা হলে সেখানে আরো জালিয়াতির চিত্র উঠে আসে। সেখানে গত নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ভোটার তালিকায় ৭ হাজার ২০০ জনের চাঁদা পরিশোধ দেখানো হয়। তবে সে হিসাব অনুযায়ী ব্যাংকে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি থাকার কথা। কিন্তু সেখানে মাত্র ৮৫ লাখ টাকার হিসাব পাওয়া গেছে। বাকি টাকা এবি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের কাকরাইল শাখায় জমা হওয়ার কথা থাকলেও সে টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে রশিদে সিল দিয়ে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।

এর আগে এ মামলার আসামী আখতারম ফিরোজকে জেলে সোপর্দ করার আগে এ চক্রের অন্যান্য সদস্যদের নাম প্রকাশের কথাও জানান তিনি। সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ওপর সাধারণ সদস্যরা চাপ প্রয়োগ করলেও কৌশলে চাপ সত্বেও নানা অজুহাতে বার্ষিক সাধারণ সভাও করা হয়নি।

অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে ঢাকা ট্যাক্স বারের ৭ হাজারের বেশি সদস্যের চাঁদার টাকা রশিদ জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে। সদস্যদের চাঁদা ও সদস্য নবায়ন ফি ৭ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এসব টাকা সরাসরি ব্যাংকে জমার নিয়ম থাকলেও টাকা পরিশোধের রশিদে সিল মেরে টাকা লুট করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্যাক্সেস বারের বেশ কয়েকজন আমাদের কাগজকে জানান, রশিদে সিল মেরে টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি অনেকদিন ধরেই চলে আসছে। এতোদিন চক্রটি একসাথে টাকা লুট করায় বিষয়টি প্রকাশ হয়নি। তবে সমসাময়িক সময়ে তাদের মধ্যে টাকা ভাগাভাগি নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। তাদের অনেকেরই অভিযোগ বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন এ বিষটির সাথে জড়িত।