অপরাধ ও দুর্নীতি ২৯ নভেম্বর, ২০২০ ১১:১৬

রায়হান হত্যা, ময়নাতদন্তে মিলল যে চাঞ্চল্যকর তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে মারা যাওয়া রায়হানের দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে অতিরিক্ত আঘাতের কারণেই মারা যান রায়হান এছাড়া নির্যাতনের সময় রায়হানের দুইটি নখও উপড়ে ফেলা হয়েছে

পিবিআইকে হস্তান্তর করা ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের ভিসেরা রিপোর্টে বলা হয়েছে নিহত রায়হানের শরীরে বিষক্রিয়ার আলামত পাওয়া যায়নি অতিরিক্ত আঘাতের কারণেই রায়হানের মৃত্যু হয়েছে

তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. শামসুল ইসলাম

তিনি বলেন, ‘২৬ নভেম্বর ওই রিপোর্টটি মামলার তদন্তকারি সংস্থা পিবিআই এর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে

ডা. শামসুল ইসলাম আরো বলেন, ‘প্রথম ময়নাতদন্ত রিপোর্টের সঙ্গে রিপোর্টের মিল আছে ভোঁতা অস্ত্রের অতিরিক্ত আঘাতে শরীরে জখম হয়েছে এবং অতিরিক্ত জখমের কারণেই রায়হানের মৃত্যু হয়েছে

এর আগে, গত ১৫ অক্টোবর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা প্রথম ময়নাতদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় রায়হানের শরীরে ১৪টি গুরুতরসহ ১১১টি আঘাতের চিহ্ন আছে

সেদিনই রায়হানের মরদেহ কবর থেকে তুলে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয় এবং ডা. শামসুল ইসলামকে প্রধান করে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়

প্রসঙ্গত, গত ১১ অক্টোবর ভোর রাতে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তির এক ঘণ্টা পর মারা যান নগরীর নেহারীপাড়ার বাসিন্দা রায়হান আহমেদ (৩৩)

ঘটনার পর পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, নগরের কাস্টঘরে গণপিটুনিতে রায়হান নিহত হন তবে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ফাঁড়িতে পুলিশি নির্যাতনে মারা যান রায়হান

ঘটনার পরদিন পুলিশ ফাঁড়িতে হত্যার বিষয় উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার

পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি প্রাথমিক তদন্ত কমিটি গঠন করে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ

তদন্তে ওই ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্তদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, কনস্টেবল হারুনুর রশীদ, কনস্টেবল তৌওহিদ মিয়া কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়

একইসঙ্গে প্রত্যাহার করা হয় এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী কনস্টেবল সজিব হোসেনকে

তাদের সবাইকে পুলিশ লাইনে যাওয়ার নির্দেশ দিলে বাকিরা গেলেও পালিয়ে যান এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়া

পরে গত মঙ্গলবার মামলায় বরখাস্ত হওয়া আসামি ফাঁড়ির কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাসকে গ্রেপ্তার দেখায় পিবিআই এবং সেদিনই তার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম জিয়াদুর রহমান

পরে, পুলিশ সদর দপ্তরের একজন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শককে প্রধান করে আকবরের পালিয়ে যাওয়ায় সহায়তাকারীদের চিহ্নিত করতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়

পরে গত বুধবার আকবরকে পালিয়ে যাওয়ায় সহায়তাকারী ওই ফাঁড়ির পরবর্তী দায়িত্ব পাওয়া ইনচার্জ এসআই হাসান উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়

ঘটনার প্রায় একমাস পর ভারত সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মামলার প্রধান আসামি বরখাস্ত হওয়া এসআই আকবরকে