ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলতি মৌসুমে ব্যাপক শুঁটকির উৎপাদন হলেও শতভাগ বিপণনের অভাবে লোকসানের মুখে শুঁটকি ব্যবসায়ীরা। এই মৌসুমে শুঁটকি উৎপাদিত হয়েছিল ৪০৩৮ মেট্রিকট্রন। যার বাজার মূল্য ২০০ কোটি টাকারও বেশি। তবে করোনার কারণে অনেক ক্রেতা আসতে না পারায় উৎপাদিত শুঁটকির প্রায় ২০ ভাগই অবিক্রিত রয়ে গেছে।
মৎস্য অধিদপ্তর অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১৯৩টি শুঁটকির মাচা রয়েছে। এর মধ্যে আশুগঞ্জ উপজেলায় মাচার সংখ্যা ১৬০, নাসিরনগরে ২২টি ও সদর উপজেলায় ১১টি রয়েছে। এসব মাচায় শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করণের সঙ্গে জড়িত রয়েছে আট হাজারেরও বেশি নারী-পুরুষ।
তার মধ্যে জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুরে মেঘনা নদীর পূর্বপাড়ে রয়েছে সর্ববৃহৎ শুঁটকির পল্লী। সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ হাওর অঞ্চলের মাছ কিনে এসব মাচায় তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন জাতের মাছের শুঁটকি। আশ্বিন থেকে শুরু করে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত প্রায় ছয় মাস ধরে চলে এখানে শুঁটকি তৈরির কাজ। এখানকার শুটকি কেমিক্যাল মুক্ত ও প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত হওয়াই এর স্বাদে ও গুণে রয়েছে একটি আলাদা মাত্রা। যার কদর রয়েছে দেশ-বিদেশে। সুদূর লন্ডন মধ্যপ্রাচ্য, ভারতসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিপণন করা হয়ে থাকে এখানকার শুঁটকি।
শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করনের সঙ্গে জড়িত কানাই চন্দ্র দাস বলেন, করোনার কারণে শুটকির চাহিদা অনেকটাই কমে গেছে। পাইকাররা না আসায় অবিক্রিত থেকে গেছে অনেক শুঁটকি। গত মৌসুমে আমার প্রায় ৫০ লাখ টাকার শুঁটকি তৈরি হলেও ২০ লাখ টাকার শুঁটকি এখনো বিক্রি হয়নি। চলতি মৌসুমে খাল বিলে প্রচুর মাছ থাকলেও আমাদের দাম দিয়ে মাছ কিনতে হয়েছে। কিন্তু চাহিদা না থাকায় এসব মাছ দিয়ে তৈরি করা শুঁটকির ন্যায্য মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না।
এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত অজুর্ন দাস বলেন, এখানার শুঁটকির খ্যাতি রয়েছে বিশ্বজুড়ে। মধ্যপ্রাচ্যর বিভিন্ন দেশ ছাড়াও প্রতিবেশী দেশ ভারতেও আমাদের শুঁটকি রপ্তানি হয়ে থাকে।
তিনি আরো বলেন, পুঁটি, শৈল, গজার, বাইম, বজুরি, টেংরা, বোয়ালসহ বিভিন্ন শুঁটকি দুইশ টাকা কেজি থেকে প্রকারভেদে ১৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। গত বছরের শুঁটকি এখনও বিক্রি হয়নি। এর মধ্যে নতুন করে আবার করোনার আশঙ্কায় আমরা উৎকণ্ঠিত।
শুঁটকির পাইকারি ক্রেতা সুজিদ দাস বলেন, গত বছর ২০ লাখ টাকার শুঁটকি কিনেছিলাম। এখনও ছয় লাখ টাকার শুঁটকি অবিক্রিত রয়েছে। তাছাড়া করোনার কারণে আমাদের কম দামে এসব শুঁটকি বিক্রি করতে হয়েছে।
এদিকে শুঁটকির আড়তদার প্রমোদ দাস বলেন, নতুন মৌসুম শুরু হলেও পুরান মাল নিয়েই আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও আমরা নতুন মাল তুলছি। ব্যবসা তো আর বন্ধ রাখা যাবে না। তবে শুঁটকি ব্যবসায়ীদের সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের দাবি জানান তিনি।
জেলা মৎস্য সম্পদ কর্মকর্তা তাজমহল বেগম বলেন, গত মৌসুমের তুলনায় এবার আরো বেশি পরিমাণ শুঁটকি উৎপাদিত হবে বলে আমরা আশা করছি। শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ব্যাংক ঋণের বিষয়ে সব রকম সহযোগিতা করা হবে। এখানকার তৈরিকৃত শুঁটকিতে কোনো প্রকার ক্ষতিকর কেমিক্যাল যাতে ব্যবহার না হয় সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। কেনাবেচার সুবিধার্তে অনলাইন ভিত্তিক শুঁটকির মার্কেট তৈরির বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে।