নিজস্ব প্রতিবেদক
সাবেক যুবলীগ নেতা কাজী আনিসের ১ শ কোটি টাকার অর্থ সম্পদ জব্দ করেছে দুদক। সংস্থাটির উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান এসব সম্পদ জব্দ করেন।
দুদকের তদন্তে রাজধানীর কলাবাগানে ৫ তলা বাড়ি পাওয়া গেছে।ধানমন্ডি ও ওয়ারীতে দুটি ফ্লাট, এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্লানে ৩ দোকান ও ১৩ স্কোয়ার ফুট বাণিজ্যিক স্পেস,গুলশান ২ এলাকার একটি মার্কেটে ২টি দোকান পাওয়া গেছে। এছাড়া রাজধানীর বাইরে গোপালগঞ্জের মকসেদপুরের বোয়ালিয়ায় বিলসাবহুল বাড়ি, একটি পেট্রোল পাম্প, ৩০ কোটি টাকার ১৫ বিঘা জমি ও কেরাণী গঞ্জে ৪০ কাঠা জমি পেয়েছে দুদক। এছাড়া অনিসের ৫০ কোটি টাকার ব্যাংক লেনদেন পেয়েছে দুদক। কাজী আনিসের প্রকৃত সম্পদের পরিপূর্ণ হিসাবে পেতে ৭৬ দফতরের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
মামলার তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন জানান, কাজী আনিসের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। তদন্তে তার বিপুল পরিমাণ সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুদক। ইতোমধ্যে তার যাবতীয় সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। বিদেশে থাকা সম্পদের বিষয়েও খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। খুব শীঘ্রই চার্জশিট দেয়া হবে।
দুদকের তদন্ত সংশিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, গার্মেন্টকর্মী থেকে যুবলীগের পদ পাওয়ার পর কাজী আনিসের উত্থান আলাদিনের চেরাগের মতো। ৫ বছরে দেশ-বিদেশে গড়েছেন বিপুল পরিমাণ সম্পদ। এসব সম্পদ অর্জনের বৈধ কোন উৎস খুঁজে পায়নি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
কাজী আনিস ও তার স্ত্রীর নামে দেশে শতাধিক ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করেছে। এসব ব্যাংক হিসাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেনের তথ্য পেয়েছে দুদক। দুদক ধারণা করছে ক্যাসিনো, চাঁদাবাজিসহ নানা অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কাজী আনিস যে অর্থ আয় করেছে তার সিংহভাগ ভারত, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় পাচার করেছে। ইতোমধ্যে ভারত, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে কাজী আনিসের বাড়ি, গাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করার তথ্য পেয়েছে দুদক।
দুদক সূত্র জানায়, গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর থানার বাউলিয়া গ্রামে যুবলীগ নেতা কাজী আনিসুর রহমানের জন্ম। তার বাবা আর্মিতে চাকরি করতেন। ১৯৯২ সালে অবসরে যান। কাজী আনিসের শৈশব ও কৈশর বাউলিয়া গ্রামে কাটলেও অভাব অনটনের মধ্যে ছিলেন।
অভাবের তাড়নায় বাধ্য হয়ে কাজী আনিস ঢাকায় গামেন্টেসে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা মাসিক বেতনে চাকরি নেন। ২০১০ এর পর কাজী আনিসের ভাগ্যে রূপকথার জাদুর কাঠির ছোঁয়া লাগে। যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুকের ডানহাত হয়ে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যান। ক্যাসিনো কারবার, চাঁদাবাজিসহ নানা কায়দায় শত কোটি টাকা উপার্জন করেন। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে কাজী আনিসুর রহমানের নাম আসলে দুদক তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে। প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর কাজী আনিসের বিরুদ্ধে বার কোটি আশি লাখ ষাট হাজার নয়শ’ বিশ টাকার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদের জন্য দুদকের উপপরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান তার বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এদিকে বিদেশে আত্মগোপনে থাকা কাজী আনিস ও সুমি রহমান দেশে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করে বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার এড়াতে ও হয়রানি ছাড়াই নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের জন্য নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। তবে আদালত গত ২০ ফেব্রুয়ারি এ রিট উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেয়।