আমাদের কাগজ ডেস্ক: শীত এলেই সর্দিকাশি দেখা দেয় ঘরে ঘরে। অনেকের ক্ষেত্রেই এই সময় ঠোঁটের কোণে ঘা হয়। এই ঘা কখনও জলভরা ফোস্কার মতো হয়, কখনও আবার তা ফেটে গিয়ে রক্তারক্তিও হতে পারে। ফলে গোটা বিষয়টিই অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই ধরনের ঘা-কে চলতি ভাষায় বলে ‘জ্বরঠোসা’। ডাক্তারি পরিভাষায় ‘কোল্ড সোর’-ও বলা হয়ে থাকে। আমেরিকার একটি সমীক্ষায় এক বার দেখা গিয়েছিল, প্রায় ৬৭ শতাংশ মানুষ কোনও না কোনও সময় এই ধরনের ক্ষততে আক্রান্ত হয়েছেন। এমনিতে কয়েক দিনের মধ্যেই নিজে থেকে কমে যায় এই ঘা। কিন্তু এই বিড়ম্বনা থেকে দ্রুত নিষ্কৃতি পেতে মেনে চলতে পারেন কিছু ঘরোয়া কৌশল।
শিশুদের কিংবা অনেক সময় বড়দেরও ঠোঁটের কোণে ঘা দেখতে পাওয়া যায়। ঠোঁটের কোণে ঘা একটি বিরক্তিকর ও যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা। এই ঘা থেকে বাঁচার জন্য কিছু খাবার নিয়মিত খেতে হবে।
ঠোঁটের কোণে ঘা বা ফেটে যাওয়ার পর চিকিৎসকেরা অনেক সময় ভিটামিন বি ২ বা রিবোফ্লেভিন ট্যাবলেট খেতে দেন। রিবোফ্লেভিন এমন এক ধরনের ভিটামিন, যা ত্বক, স্নায়ু ও চোখের সুস্বাস্থ্যের জন্য কাজ করে। শরীরে শর্করা বিপাক ক্রিয়ায় এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
১. ক্রিম মাখুন
জ্বরের সময়ে হওয়া ঠোঁটের এই ঘা কমানোর অনেক রকমের ওষুধ পাওয়া যায়। জীবাণুনাশক এই সব ক্রিম কয়েক দিনের মধ্যেই কমিয়ে দেয় ঠোঁটের ঘা। তবে ক্রিম লাগানোর আগে এক বার চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নেওয়াই ভাল। আবার, অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম বা টপিক্যাল স্টেরয়েড ঠোঁটের ফাটা কোণে ফোলাভাব ও ব্যথা উপশম করে। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহার করতে হবে। লিপ বাম বা পেট্রোলিয়াম জেলি আপনার ঠোঁটের কোণের ত্বককে আর্দ্র ও সুরক্ষিত রাখবে। এঙ্গুলার চিলাইটিসে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা নেওয়ার পাশাপাশি ঠোঁটের কোণে বরফ দিতে পারেন।
২. ক্ষতে অ্যালো ভেরা
বাড়ির টবেই ফলানো যায় এই গাছ। অ্যালো ভেরার শাঁসে প্রদাহনাশক গুণ রয়েছে। অল্প পরিমাণ অ্যালো ভেরার শাঁস লাগিয়ে নিতে পারেন ক্ষতের উপর। দ্রুত কমে আসবে ক্ষত, কমবে জ্বালাও।
৩. ভিনিগার দিন
অ্যাপ্ল সিডার ভিনিগার আছে বাড়িতে? তা হলে নরম কাপড় এই ভিনিগারে ভিজিয়ে ঠোঁটের ঘায়ে লাগান। অল্প সময়েই প্রদাহ অনেক কমে যাবে। আসলে ভিনিগারের ভাইরাসনাশক গুণ এই ক্ষত সৃষ্টিকারী জীবাণু নিকেশ করে।
৪. রসুন বাটা লাগানো
সহজে মুখের ঘা কমানোর আর একটি উপায় হল রসুন বাটা লাগানো। বাড়িতে রসুন থাকলে বেটে নিন। এ বার এই বাটা রসুন ঘায়ের উপর দিনে দু’-তিন বার লাগান। প্রদাহ কমবে।
৫. মধু ম্যাসাজ
ক্ষতের উপর মধুও লাগাতে পারেন। তাতেও প্রদাহ কমবে। দিনে অন্তত বার দু’য়েক ব্যবহার করতে হবে মধু। এছাড়াও, ঠোঁট মসৃণ করতে দুধের সর, মধু ও চিনি দিয়ে প্রতিদিন মাত্র দুই মিনিট ম্যাসাজ করুন।
৬. জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটবেন না
ঠোঁট ফাটলে অনেক সময় ত্বকের মরা অংশ জমে ঠোঁটের ওপর। এ সমস্যায় রাতে ঘুমানোর সময় বাদাম তেল লাগাতে হবে ঠোঁটে। মরা অংশ কোনো অবস্থাতেই টেনে তোলা যাবে না। ঠোঁট ভেজাতে জিভ দিয়ে কখনও চাটবেন না। মুখের লালায় যে রাসায়নিক উপাদান থাকে, তা ঠোঁটকে আরও শুকিয়ে দেয়।
এছাড়া শরীর আর্দ্র থাকলে ঠোঁটও শুষ্ক হবে না। এ জন্য প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করুন।
তবে মনে রাখবেন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হলে এই ধরনের ঘা হওয়ার আশঙ্কা বেশি। তাই জ্বরঠোসা দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার লক্ষণ হতে পারে। ভাল করে খাওয়াদাওয়া করলে ঠোঁটের কোণে এই ধরনের ঘা কম হয়। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লেবু, জলপাই, আনারস, স্ট্রবেরি, টমেটো, ব্রকলি, সবুজ শাকসবজিসহ সব সময় সহজপাচ্য ও হালকা মসলাযুক্ত স্বাস্থ্যকর খাবার খান। নিয়মিত খেজুর, বাদাম, দুধ বেশি বেশি খান। ঘরোয়া উপায়ে সমাধান না হলে, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।
আমাদেরকাগজ/এইচএম






















