রাজনীতি ৩ অক্টোবর, ২০২৩ ০১:০১

ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোয় এখন সক্রিয় ‘কিংস পার্টি’ 

আমাদের কাগজ ডেস্ক : নির্বাচন সামনে রেখে সক্রিয় ‘কিংস পার্টি’। ২০১৩ সালে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাওয়ার পর ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে আলোচনায় আসে। দলটি বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক ধানের শীষের মতো দেখতে ‘গমের শীষ’, পরে ‘ধানগাছ’ প্রতীক চায়। অবশ্য শেষ পর্যন্ত তারা টেলিভিশন প্রতীক পায়।  

পরিকল্পনা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এগোচ্ছে। এরই মধ্যে এমন কিছু দল বা ‘কিংস পার্টি’ সক্রিয় হয়েছে। সরকারের সমর্থনে ইসলামি কিছু দলকেও মাঠে নামানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

দলটির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা জানিয়েছেন, তাঁদের লক্ষ্য এখন যথাসময়ে নির্বাচন করা এবং সেই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করা ও ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। সে জন্য সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি ভোটে অংশ নেবে না, এটা ধরে নিয়েই আওয়ামী লীগ এ মুহূর্তে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। 

আর সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই সরকার ও আওয়ামী লীগের দিক থেকে ছোট কিছু দলকে সক্রিয় করে বিএনপির দলছুটদের ভেড়ানোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে। এ ধরনের দলগুলোকে ‘কিংস পার্টি’ বলে অভিযোগ করা হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

বিএনপির নেতারা কিছুদিন ধরে অভিযোগ করছেন, নির্বাচন সামনে রেখে কিছু কিংস পার্টি গঠন করে বিরোধী দলগুলোতে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করছে সরকার। সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে বিএনপির সাবেক দুই নেতা সমশের মবিন চৌধুরী ও তৈমুর আলম খন্দকারের তৃণমূল বিএনপির নেতৃত্বে আসার ঘটনা। যদিও তৃণমূল বিএনপিসহ নতুন সক্রিয় হওয়া এসব দল কিংস পার্টির অভিযোগ অস্বীকার করছে। 

আগামী নির্বাচনে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় আওয়ামী লীগ। এর মাধ্যমে ভোট অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে দেশে-বিদেশে দেখানো যাবে। ফলে ভোট টানতে পারে এমন দল ও ব্যক্তিকে আগামী নির্বাচনে দরকার।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, বিভিন্ন ইসলামি দল ও বিএনপি থেকে নেতাদের নির্বাচনে টানার দায়িত্ব একক কোনো রাজনীতিকের ওপর নেই। সরকারের ভেতরে এ ব্যাপারে কাজ চলছে। 

সূত্র আরও বলছে, ভোটে আনার জন্য যাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে, তাঁদের ব্যক্তি হিসেবে বা একেক দলকে একেক রকম সুবিধার কথা বলা হচ্ছে। কেউ আর্থিক সুবিধা চাইছেন, তাঁদের সেই আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। অনেকের লক্ষ্য জনপ্রতিনিধি হওয়া, তাঁদের মাঠের শক্তি যাচাই করে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে সেই আশ্বাসও দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া মামলা-মোকদ্দমায় জর্জরিত অনেকে ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেয়ে ভোট করার কথা ভাবছেন। 

উল্লেখ্য, নির্বাচনে অংশ নিতে ‘যোগ্য প্রার্থী’র খোঁজে ব্যস্ত সময় পার করছে তারা। এমনকি নির্বাচনে ৩০০ আসনেই দলীয় ও জোটগত প্রার্থী দেবে বলে জানিয়েছে তারা। 

যাদের নাম আলোচনায়

বিএনপির সাবেক ও বর্তমান কোন কোন নেতা নতুন এই দুই দলে যোগ দেবেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে জল্পনা-কল্পনা। অবশ্য ঘুরেফিরে কয়েকটি নামই আসছে অনেকের মুখে।

আলোচনার শীর্ষে থাকা পদধারী নেতাদের মধ্যে রয়েছেন– বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহছানুল হক মিলন, যুগ্ম মহাসচিব ও সংসদ সদস্য মজিবর রহমান সরোয়ার প্রমুখ।

বহিষ্কৃত ও অব্যাহতিপ্রাপ্ত নেতাদের মধ্যে রয়েছেন– বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও দলের খুলনা মহানগরের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, কুমিল্লার সাবেক মেয়র মনিরুল ইসলাম সাক্কু প্রমুখ।

সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন– সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, আলী নেওয়াজ খৈয়াম, ডা. জিয়াউল হক মোল্লা, নূরুল ইসলাম মনি, নজির হোসেন প্রমুখ।

অবশ্য আলোচিত নেতাদের বেশির ভাগই এ বিষয়ে এখনও প্রকাশ্যে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন। নাম প্রকাশ না করে বিএনপির পদধারী এক নেতা জানান, এমন আলোচনার সুযোগ করে দিয়েছে দলই। এদের অনেকেই বিএনপি ছাড়বেন না; কিন্তু আলোচনায় নাম আসায় বিব্রত তারা।

আমাদেরকাগজ/এমটি